বহুল আলোচিত কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে (অভয়া, নাম পরিবর্তিত) ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হলো সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। শনিবার দুপুরে আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস অভিযুক্ত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেন।
এদিন মাত্র ১২ মিনিটের শুনানিতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারায় ধর্ষণ, ৬৬ ধারায় ধর্ষণের সময় আঘাত করে মৃত্যুর সম্ভাবনা এবং ১০৩(১) ধারায় খুনের অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আগামী সোমবার তার সাজা ঘোষণা হবে। সেক্ষেত্রে সবোর্চ্চ শাস্তি হতে পারে ফাঁসি এবং সর্বনিম্ন সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
তবে আগের মত শনিবারও তাকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ফের একবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। বিচারক বলেন, 'সিবিআই যা প্রমাণ দিয়েছে সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আপনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে।' জবাবে সঞ্জয় বলেন 'আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা যেরকম বলেছেন আমি সেই মতোই কথা বলেছি। কারণ আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিল। যদি এরকম কোন কোন ঘটনা ঘটতো তাহলে সেই মালা ছিঁড়ে যেত।' সঞ্জয়ের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক বলেন 'আগামী সোমবার আপনার বক্তব্য শোনা হবে।'
এদিন সাজা ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা সহ আত্মীয় পরিজন।
২০২৪ সালের ৯ আগস্ট আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় পোস্ট গ্যাজুয়েট ট্রেইনি ছাত্রীর লাশ। অভিযোগ ওঠে কর্মরত অবস্থায় ওই নারী শিক্ষার্থীকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে খুন করা হয়। এরপরই শোরগোল পরে যায় গোটা ভারত জুড়ে। ঘটনার তদন্ত নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থান থেকে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি সিবিআই'-এর হাতে। পরবর্তীতে তদন্ত চালিয়ে সিবিআইও সঞ্জয় রায়'কেই একমাত্র অভিযুক্ত বর্ণনা করে চার্জশিট দেয়। সেক্ষেত্রে ওই নৃশংস ঘটনার ৫ মাস ৯ দিন পর শনিবার সঞ্জয় রায়কেই দোষী সাব্যস্ত করা হলো।
এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ্য প্রমান লোপাটের অভিযোগে আরজি কর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাঃ সন্দীপ ঘোষ ও কলকাতার টালা থানার সাবেক ওসি অভিজিৎ মন্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই। যদিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালত তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা না দেওয়ার কারণে তারা উভয়ে জামিন পেয়ে যান। এই মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল নিম্ন আদালতে।
এই ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে নামে চিকিৎসক, নাগরিক সমাজ। গত ১৪ আগস্ট 'মেয়েদের রাত দখলের' রাতেই কার্যকর মেডিকেল কলেজে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আর তারপর থেকে এই আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। অভিযোগ, তথ্য প্রমাণ লোপাট করতেই সুপরিকল্পিতভাবে আরজি করে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল।
এদিন আদালতে প্রবেশের আগে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা'য়ের গিলাতেও একরাশ হতাশা ঝরে পড়ে। তারা উভয়েই জানান 'আমরা সবকিছুই হারিয়েছি। নতুন করে আর কিছুই পাওয়ার নেই। এখন বিচারক যদি সঠিক রায় দেন আমার মেয়ের আত্মাটা হয়তো একটু শান্তি পাবে।'
মা বলেন 'সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওরই সাজা ঘোষণা হবে, বিচারক যেটা ভালো মনে করবেন তাই হবে। এটাতে আমাদের আশা বা নিরাশার কিছু নেই কারণ তদন্ত এগোচ্ছে। সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেবে ফলে বিচার প্রক্রিয়াও থেমে থাকবে না, তদন্তও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ফলে এই ঘটনার পিছনে অন্য যারা জড়িত রয়েছে তারাও একদিন ধরা পড়বে, সাজা হবে।'
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল