শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইরানের আদলে সরকার গড়ার ভাবনা তালেবানের

ইরানের আদলে সরকার গড়ার ভাবনা তালেবানের

কাবুলের রাস্তায় টহল দিচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা -এএফপি

তিন সপ্তাহ হতে চলল আফগানিস্তান দখল করেছে তালেবান। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে সরকার গড়ার কাজ সারতে পারেনি তালেবান। এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে ইরানে যেভাবে সরকার গঠন করা হয় সেই আদলেই সরকার গঠন করতে চাচ্ছে গোষ্ঠীটি। আর মোটামুটি নিশ্চিত যে ওই সরকারে ও দেশে ‘সুপ্রিম লিডার’ পদে থাকছেন তালেবানের প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তার ‘উপদেশ’ মেনেই দেশ চালাবে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী। ইরানের প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি ক্ষমতা সুপ্রিম বা সর্বোচ্চ নেতার। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর বর্তমান এই সরকার ব্যবস্থা চালু হয়।

তালেবানের সংস্কৃতি কমিশনের সদস্য আনামুল্লা সামাঙ্গানি বলেছেন, ‘নতুন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা প্রায় শেষ। সামাঙ্গানিকে উদ্ধৃত করে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, আফগানিস্তান সরকারের প্রধান বা ‘সুপ্রিম লিডার’ হতে চলেছেন আখুন্দজাদা। এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারে সামাঙ্গানির বক্তব্য, ‘নতুন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা প্রায় শেষ। ক্যাবিনেট গড়া নিয়ে সব প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়েছে। আমরা এমন একটি ইসলামিক সরকার ঘোষণা করব যা মানুষের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে সরকারের প্রধান হবেন হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহম্মদ হাসান হকয়ারের মতে, আফগানিস্তানের নতুন সরকার প্রজাতান্ত্রিক বা আমিরশাহি হবে না। এটা মূলত ইসলামপন্থি সরকার হবে যার মাথায় থাকবে তালেবানের প্রধান হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন না। বরং তার অধীনে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী কাজ করবে। এদিকে, প্রদেশগুলোতে গভর্নর, পুলিশপ্রধান ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিয়োগ করেছে তালেবান। তবে সরকার গড়ার আলোচনা সম্পূর্ণ বলে দাবি করলেও জনসমক্ষে কিছু বলেনি জেহাদি দলটি। ফলে তালেবদের জমানায় আফগানিস্তানের জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা কেমন হবে তা জানা যায়নি।

এদিকে তালেবানের নতুন সরকারে হাক্কানি নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতার জায়গা হতে চলেছে। এর মধ্যে অনেকেরই নাম জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদী তালিকায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আবার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া নিয়ে হাক্কানি নেটওয়ার্ক এবং কান্দাহারের মোল্লা ইয়াকুব গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। মোল্লা ইয়াকুব বর্তমানে তালেবানের সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। আফগান সরকারে তাঁর বড় ভূমিকা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আখুন্দজাদার যে তিনজন ডেপুটি আছেন। তাঁদের একজন মোল্লা ইয়াকুব। তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে।

এ ছাড়া তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দফতরের উপপ্রধান শের আব্বাস স্ট্যানেকজাই দুই    এক দিনের মধ্যে সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি জানান, দুই দিনের মধ্যেই তালেবান সরকার ঘোষণা হতে পারে। শের আব্বাস বলেন, সরকারের নিম্ন পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করতে পারবেন। তবে মন্ত্রিসভা বা শীর্ষস্থানীয় পদে নারীরা না-ও থাকতে পারেন। পাশাপাশি গত দুই দশকে যাঁরা সরকারে ছিলেন, তাঁদের এ সরকারে নেওয়া হবে না।

গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতন হয়। আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে যায়। এবার তারা আগেরবারের চেয়ে নিজেদের শাসননীতিতে নমনীয়তা আনার ইঙ্গিত দেয়। তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবে কি না, তা নিয়ে পশ্চিমাদের মধ্যে সন্দেহ আছে।

সর্বশেষ খবর