বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

হাতের নাগালে পারমাণবিক ফিউশন বিক্রিয়া

হাতের নাগালে পারমাণবিক ফিউশন বিক্রিয়া

সৌরজগতের সব শক্তির উৎস সূর্য। এত দিন অবধি সবাই তাই জানেন। আর এটা যে ফিউশন পদ্ধতিতে হয় সেটা সব গবেষকেই জানেন। এর মাধ্যমেই কোটি কোটি বছর ধরে জ্বলছে সূর্যসহ একাধিক নক্ষত্র। কিন্তু মানুষ কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা। অবশেষে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিপুল শক্তির সন্ধান পেলেন তারা।

মঙ্গলবার এ নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছিল আমেরিকার শক্তি মন্ত্রণালয়। জানিয়েছিলেন নিউক্লিয়ার ফিউশন নিয়ে বড়দিনের আগে রয়েছে বড় খবর। গতকাল এ নিয়ে সরকারিভাবে ঘোষণা করেছেন মন্ত্রণালয়ের প্রধান জেনিফার গ্রানহোম। তাঁদের দাবি, জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সাফল্য।

মার্কিন গবেষণদের দাবি, এই নিউক্লিয়ার ফিউশনে বিপুল শক্তির যে সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিশার সন্ধান মিলবে এবং এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি হবে দূষণমুক্ত। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে। যদিও পুরো বিষয়টি এখনো বেশ সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। এই সম্পূর্ণ দাবির বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে এক দশক বা তার বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য লাভজনক এই ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন জেফ বেজোস, বিল গেটসের মতো বিশ্বের প্রথম সারির ব্যক্তিত্বরা।

নিউক্লিয়ার ফিউশন কী :  কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে ভিন্ন মৌলের একাধিক হালকা নিউক্লিয়াস তৈরি হলে কিংবা উল্টোভাবে একাধিক পরমাণুর নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে কোনো ভিন্ন মৌলের নিউক্লিয়াস তৈরি করলে বিপুল পরিমাণ শক্তির বিকিরণ ঘটে, যাকে বলে পারমাণবিক শক্তি। এটা ঘটতে পারে দুই ধরনের বিক্রিয়ার মাধ্যমে। একটিকে বলে নিউক্লিয়ার ফিশন, অন্যটি নিউক্লিয়ার ফিউশন। ফিশন বিক্রিয়ায় একটি ভারী মৌলের পরমাণুকে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করা হয়। তাতে ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস ভেঙে দুটি হাল্কা মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয়। তাতে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক শক্তি। এভাবে পারমাণবিক শক্তি তৈরির কৌশল মানুষ আয়ত্ত করেছে আগেই। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর পারমাণবিক বোমা এই প্রক্রিয়ারই ফল। কিন্তু নিউক্লিয়ার ফিউশনের সূচনা হয় ফিশন বিক্রিয়ার উল্টো প্রক্রিয়ায়। এ ক্ষেত্রে দুটি বা তার বেশি নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে এক বা একাধিক ভিন্ন মৌলের পরমাণু তৈরি করে, সঙ্গে পাওয়া যায় বিপুল শক্তি। যেমন হাইড্রোজেনের দুটি আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম যুক্ত হয়ে হিলিয়াম তৈরি করে। সেই সঙ্গে মুক্ত হয় একটি নিউট্রন। সূর্যে প্রচ  মধ্যাকর্ষণের চাপের মধ্যে নিউক্লিয়ার ফিউশনেই ক্রমাগত শক্তি তৈরি হচ্ছে। সেখানে মোটামুটি ১ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওই বিক্রিয়া ঘটছে।

সর্বশেষ খবর