গালওয়ান সংঘর্ষের পরে এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল লি শাংফু। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে ‘শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন’ (এসসিও) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পার্শ্ববৈঠকে বসেন। আর এ বৈঠকে বোঝা গেল ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এ মুহূর্তে কতটা শীতল। ওই বৈঠকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদলের কারও সঙ্গে রাজনাথ সিং করমর্দন করেননি। এসসিওর অন্য সদস্য দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাজনাথ সিং যথেষ্ট সৌজন্য দেখিয়েছেন। তবে পার্শ্ববৈঠকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফুর সঙ্গে করমর্দন করেননি তিনি।
আর বৈঠকে রাজনাথ শান্তি ও প্রশান্তির বার্তা দিয়ে বলেন, শান্তি ও প্রশান্তির ভিত্তি শক্ত করার জন্য দুই দেশের সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, চীনের সীমান্ত নীতি লঙ্ঘন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে দিচ্ছে। এ দিন ভারত ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে কথাবার্তা বলেন। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, রাজনাথ লিকে জানিয়েছেন, পূর্ব লাদাখের অবশিষ্ট ঘর্ষণ পয়েন্টগুলো থেকে অবিলম্বে চীনা সেনাদের সরিয়ে নিতে হবে। ডি-এসক্সালেশন নিয়েও চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন রাজনাথ। একটি বিবৃতি জারি করে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই মন্ত্রী ভারত ও চীন সীমান্ত এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে অকপট আলোচনা করেছেন।
এসসিও হলো একটি প্রভাবশালী অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্লক এবং এটি একটি বৃহত্তম আন্তদেশীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি রাশিয়া, চীন, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতিদের দ্বারা ২০০১ সালে সাংহাইতে একটি শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তান ২০০৭ সালে এর স্থায়ী সদস্য হয়। লি শাংফু চীনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই সংঘর্ষের পর এই প্রথম চীনের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতে এলেন। দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যেও এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। গালওয়ানের পর দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে মোট ১৮টি বৈঠক হয়েছে। শেষ বৈঠক হয় গত রবিবার, পূর্ব লাদাখের চুশুল-মলডো সীমান্তে। সেই আলোচনাতেও এলএসিতে শান্তি রক্ষায় দুই দেশ সম্মত হয়েছে। কিন্তু ১৮টি বৈঠকের পরও এলএসির পরিস্থিতি সংঘর্ষ পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থায় পৌঁছায়নি; বরং দুই দেশ সেনা উপস্থিতি বাড়িয়ে চলেছে। এ মুহূর্তে এলএসিতে দুই দেশেরই ৫০ হাজার করে ফৌজ মোতায়েন রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ভারী সমরাস্ত্র। চীনকে ভারত জানিয়েছে, এ সেনা উপস্থিতি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে পরিস্থিতি আগের মতো না করা গেলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারবে না।