শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গেছেন ইমরান খান

সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গেছেন ইমরান খান

পাকিস্তানে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রেক্ষাপট পুরো পরিবর্তন হয়ে গেছে। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সবার মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা ছিল ইমরান খান অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠছেন। যিনি পাকিস্তানের সর্বময় ক্ষমতাধর জেনারেলদের বিরুদ্ধে একাই লড়তে পারছেন। জনসমর্থনও পাচ্ছেন ব্যাপক। এর অংশ হিসেবে ৯ মে আধাসামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা সারা দেশে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে মুক্ত হন পাকিস্তানের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

তখন দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ইমরান খান চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে সহজেই জয়ী হতে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছিল।

কিন্তু তিন সপ্তাহ পরে দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে গেছে। রাজনৈতিক দেয়াল চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে তাকে। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) কার্যত ভেঙে দিয়েছেন সামরিক জেনারেলরা। অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা দলত্যাগ করেছেন, হাজার হাজার সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার প্রকাশ্যে পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার কথা বলছে। ইমরান নিজেও দুর্নীতি-ধর্মানুভূতিতে আঘাতসহ কয়েক ডজন মামলার মুখে। সম্ভবত সামরিক আদালতে তার বিচার হবে এবং দীর্ঘদিনের জন্য রাজনৈতিক নির্বাসনে যেতে পারেন তিনি। আপাতত পাকিস্তানের বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ দৃঢ়ভাবে ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর নির্দেশেই হোক বা সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্যই হোক, শাহবাজ শরিফের সরকার পিটিআইর ভাঙনকে সমর্থন করছে। তারা পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার জরুরি বলে উল্লেখ করেছে।

একসময় এ ইমরান খানই পাকিস্তানি জেনারেলদের সমর্থন পেয়েছিলেন। তাকে ব্যবহার করে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দমনের কৌশল নিয়েছিল সেনাবাহিনী। ২০১৮ সালে ইমরান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার সরকারকে সামরিক-বেসামরিক ‘হাইব্রিড’ বলে বর্ণনা করেছিলেন কিছু পর্যবেক্ষক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেনারেলরা ইমরানের আত্মপ্রচারণা ও আত্মমুগ্ধতায় বিরক্ত হয়ে পড়েন, যার ফলে গত বছর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তাকে।

পাকিস্তানের সামরিক জেনারেলরা এখন কী কৌশল নেবেন? বেসামরিক রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে তাদের অতীত পদক্ষেপের অভিজ্ঞতা বলছে, ইমরান খানকে জেলে ঢোকানো, তাকে নির্বাসনে পাঠানো বা রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। কিংবা দলের যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা নিয়ে নির্বাচনে লড়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে, যদিও এর সম্ভাবনা খুবই কম। অথবা কোনো নির্বাচনই হবে না- এমন সিদ্ধান্তও নিতে পারেন জেনারেলরা। গুঞ্জন রয়েছে, তারা পাকিস্তানে একটি টেকনোক্র্যাটিক সরকার গঠন করতে চান।

 

সর্বশেষ খবর