মহান আল্লাহর বাণী : ‘দীনকে মজবুতভাবে ধর এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইও না’ (সুরা-আল ইমরান-১০৩)। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি রসুলের আনুগত্য করবে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করবে (সুরা-নিসা-৮০)। আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আমরা কিসের উদ্দেশ্যে মহান রবের আদেশ লঙ্ঘন করছি : কোরআন ও সুন্নাহর হুবহু অনুসরণই আমাদের বিভক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে। কোনো ব্যক্তি বা মাজহাব নয়, একমাত্র রসুল (সা.)-কেই আমাদের অনুসরণ করতে হবে। ইসলামের চার ইমাম ও বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আলেমদের বক্তব্যে তা-ও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। প্রথমেই আমরা চার ইমামের বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধন করি-
ইমাম মালেক (রহ.) উক্তি : ‘প্রত্যেক মানুষের কথা গ্রহণীয় অথবা বর্জনীয় হতে পারে (তিনি রসুল (সা.)-এর কবরের দিকে ইশারা করে বলেন) শুধু এই কবরবাসীর কথা ছাড়া।’ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা কোনো সহিহ হাদিস পাবে, তখন সেটাই আমার মাজহাব মনে করবে।’ ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেছেন, আমার এমন লোকদের দেখে অবাক লাগে, যারা কোনো হাদিসের সনদের সত্যতা ও সহিহ হওয়ার বিষয়টি জানে তারপরও হাদিস ছেড়ে সুফিয়ান সাওরির কথা বলে অথচ আল্লাহ বলেন, তাদের পরিত্যাগ কর; যারা তাঁর রসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর আদেশের বিপরীত কাজ করে। তাদের গ্রাস করবে ফিতনা অথবা আচ্ছন্ন করবে ভয়ংকর আজাব। তাঁর উক্তির সঙ্গে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এবং ইমাম মালেক (রহ.) একই মতের প্রামাণিক দলিল হচ্ছে- তাঁরা বলেছেন, আমাদের দেওয়া ফতোয়া গ্রহণ করা কার জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না জানবে আমরা কোথা থেকে ওই কথা গ্রহণ করেছি। আমাদের ওই কথা বা ফতোয়া যদি কোরআন ও হাদিসের মোতাবেক হয়, তবে তা গ্রহণ কর। আর যদি বিরোধী হয়, তাহলে তা বর্জন কর এবং দেয়ালে ছুড়ে মার। কাজেই সব মুসলিমের আহলে হাদিস হওয়া অপরিহার্য। এই পর্যায়ে আমরা বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আলেমদের কোরআন ও সুন্নাহ অনুসরণে প্রদত্ত বক্তব্য দেখে নিই-
শায়েখ ড. সুলাইমান আর-রুহাইলি : ইমাম মসজিদ আল কুবা ও মুদাররিস, মসজিদ আন নববি বলেন, আহলে হাদিস আহলুল সুন্নাহ নির্দিষ্ট কারও নকব নয়; বরং এটা সব আহলুল সুন্নাহর নকব। আমরা আহলে হাদিস বলতে শুধু তাদের বোঝাই না; যারা শ্রবণ, লেখন ও বর্ণনার সঙ্গে জড়িত। বরং আমরা আহলে হাদিস তাদের সবাইকে বোঝাই, যারা হাদিস মুখস্থ করেন, মর্ম উপলব্ধি করেন এবং এ সম্পর্কে গোপন ও প্রকাশ্য জ্ঞান রাখেন। একটি নির্দিষ্ট মাজহাব দিয়ে মানুষকে আবদ্ধ করা এবং মাজহাব ত্যাগ করাকে হারাম গণ্য করা জায়েজ নয়। মাজহাব মানা ওয়াজিব হওয়ার কোনো দলিল নেই। দলিল ছাড়া মানুষকে কোনো কিছুর মাঝে আবদ্ধ করা জায়েজ নয়। চারজন ইমামের জন্মের আগে মাজহাব মানা ওয়াজিব ছিল না, তাহলে তাঁদের আসার পর কীভাবে ওয়াজিব হলো? উম্মতের সুচনালগ্নে তো শরিয়াহ একটাই ছিল, তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করা।
শায়েখ আব্দুর রহমান আস-সুদাইস প্রধান ইমাম আল-হারাম মসজিদ : সাম্প্রতিক কালে অনেক মানুষ দীনে অনেক রদবদল ঘটিয়েছে, কোরআন-সুন্নাহবহির্ভূত এমন দল। যা উত্তম নয়, নিম্নমানের। তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নবী (সা.), সাহাবা, সালাফিস, সালিহিন খাইরুল কুরুন এবং মানহজ থেকে। অধিকন্তু তারা বিভিন্ন ফিরকাহ ও ইখতিলাফে লিপ্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন দল, মাজহাব বিভক্তিকে আঁকড়ে ধরেছে, যার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আমজনতার মাঝে প্রচলিত রয়েছে। অন্য আরেক দল সাহাবিদের মাজহাবের বিপরীতে গিয়ে রসুল (সা.)-এর সুন্নাতের ওপর ছুরি চালাচ্ছে। তাদের কাছে মাজহাব দল, পক্ষপাত, জাতীয়তা ও গোত্রবাদ বড় হয়েছে, যাতে মুসলিম উম্মাহর সামান্যতম লাভ হয়নি। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা স্বীয় দীনকে খণ্ডবিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে হে নবী (সা.) তাদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নাই’ (আনআম-১৫৯)। নবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে তাদের বিরোধীরা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ নবী (সা.)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা কারা? তিনি বলেছিলেন, ‘আমিও আমার সাহাবীরা যে নীতির ওপর আছি সেই নীতির অনুসারীরা।’ আল্লাহ আমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত না হয়ে কোরআন ও সুন্নাহ অনুসরণে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
বিডি প্রতিদিন/এমআই