প্রবীণ সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লার নেতৃত্বে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দলিত ও সংখ্যালঘু শ্রেণীর সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু হয়েছে।
'যার যেমন সংখ্যাভারী, তার তেমন ভাগীদারি!' স্লোগানকে সামনে রেখে রেজ্জাকের গড়া সংগঠন সামাজিক ন্যায়বিচার মঞ্চের প্রথম সম্মেলনে রাজনৈতিক 'ব্রাহ্মণ্যবাদের' বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা হলো। প্রকৃত শ্রেণিসংগ্রামের তাগিদে, অনুশাসন-সর্বস্ব প্রথাগত বামপন্থার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে 'ওপেন ডেমোক্র্যাসি' গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন রেজ্জাক তিনি। এ দেশের মোট জনসংখ্যায় নিম্নবর্গীয়দের মিলিত অনুপাত উচ্চবর্ণের চেয়ে অনেক বেশি৷ তাই, রাষ্ট্রব্যবস্থায় 'বামুন-কায়েত-বদ্যি'দের একনায়কত্ব ভেঙে দলিত শ্রেণির প্রতিনিধিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে দেখতে চান এই আন্দোলনের কুশীলবরা৷
ঠিক তেমনই ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের উপমুখ্যমন্ত্রী পদে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধিকে বসানোর পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে সামাজিক ন্যায়বিচার মঞ্চ৷ সেই উপমুখ্যমন্ত্রীর হাতেই থাকতে হবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রদফতরের ভারও। তবে এই স্বপ্নের ইশতেহারে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিদেরও রাখা হবে 'যথাযোগ্য' মর্যাদায়।
গত রবিবার রবীন্দ্রসদনে রেজ্জাকের ডাকে সাড়া দিয়ে এই সম্মেলনে এসেছিলেন আর এক বিদ্রোহী সিপিএম নেতা, তপশিলি জাতির প্রতিনিধি লক্ষ্মণ শেঠ। তিনিও নৈতিকভাবে এই আন্দোলনের শরিক হতে চান। মঞ্চে না-উঠলেও লক্ষণের আক্ষেপ, তার দল সিপিএমও দলিত, অনগ্রসর, মুসলমানদের পার্টি বা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে তুলে আনতে পারেনি।
রেজ্জাকের নতুন এই দল ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়বে বলেও জানিয়েছেন তিনি। উৎস এ রাজ্যে হলেও বিহার-
গোড়া থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে সমস্ত রকম ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সংগঠনের সভাপতি রেজ্জাক মোল্লা ঘোষণা করেছেন, 'এটা কিন্তু জাতপাতের লড়াই নয়। আমরা ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্যদের বিরুদ্ধে নই, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে।'
সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন নিম্নবর্গীয়দের ক্ষমতায়নের পক্ষে জোরদার সওয়াল করার তাকেও সাধুবাদ দিয়েছেন রেজ্জাক।
কোন প্রেক্ষিতে এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে রেজ্জাক বলেন, 'একদিকে আছে রেজিমেন্টেড বামফ্রন্ট, অন্যদিকে ক্লাব-লাইক তৃণমূল। আমাদের ভোটের মেরুকরণের মাধ্যমেই এগোতে হবে।'
রেজ্জাকের যুক্তি, 'ইএমএএস নাম্বুরিদিপাদ সবার সঙ্গে (নিচু জাত) মিশে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বলেই সেখানে অচ্যুতানন্দন (দলিত শ্রেণির প্রতিনিধি) মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।' ঠিক এই কারণেই শিক্ষা ও সমাজ চেতনায় কেরালা বাংলার তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে বলে তার অভিমত।
দলিত ও সংখ্যালঘুদের এই আন্দোলনকে মজবুত করতে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা হজরত কাশেম সিদ্দিকি এবং বসিরহাটের পীরজাদা সভামঞ্চে হাজির হয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন।