পশ্চিমবঙ্গের মোহনপুরের অনিমেষ দ্বিবেদীর উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। গত মার্চ মাসে জুনপুট কোস্টাল থানার বামুনিয়া পঞ্চায়েতের পূর্ব পুরুষোত্তমপুর গ্রামের ধানক্ষেতে ২৮ বছর বয়সী অনিমেষের গলাকাটা মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু হত্যাকারী রয়ে যায় নাগালের বাইরে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
অবশেষে সোমবার হত্যা রহস্যের জট খুললো। এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হল অনিমেষের বাবা পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরের বৈতা গ্রামের বাসিন্দা অশোক দ্বিবেদীকে।
পুলিশের দাবি, জেরায় অপরাধের কথা কবুল করে অশোক জানিয়েছেন, ছেলের আচরণে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। মঙ্গলবার অশোকবাবুকে কাঁথি আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ছেলেকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুনের অভিযোগে বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দোষের কথা তিনি কবুল করেছেন। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অশোকবাবুর কাঠ চেরাই কলের পৈতৃক ব্যবসা এবং একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। তার দুই ছেলে অমৃত এবং অনিমেষ। বাড়ির অংশীদার ওই দু’জনই। বখাটে আর মদ্যপ হিসেবে বরাবরই বদনাম ছিল অনিমেষের। শাসন করতে গেলে বাবাকে সে মারধর করত, এমনকি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিত বলেও অভিযোগ। বাড়ির সকলে তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তার জন্য পাড়ায় অশোক অশোক দ্বিবেদীদের বদনামও হচ্ছিল। গত ৬ মার্চ অনিমেষের দেহ যখন মেলে, তখন তা শনাক্ত হয়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ চলতি মাসের গোড়ায় পূর্ব পুরুষোত্তমপুর থেকে জয়দেব মাইতি নামে এক যুবককে ওই খুনের অভিযোগে ধরে। তাকে জেরা করে ধরা হয় জুনবনির দেবদুলাল মাইতি নামে আরও এক জনকে। তাদের জেরা করেই পুলিশ তদন্তের কিনারা করে।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে কটকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অশোকবাবুর সঙ্গে দেবদুলালের পরিচয় হয়। ছোট ছেলেকে নিয়ে তার সমস্যার কথা দেবদুলালকে জানান অশোক দ্বিবেদী। কটকেই খুনের পরিকল্পনা করেন। গ্রামে ফিরে অনিমেষের সঙ্গে দেবদুলালের বন্ধুত্ব করিয়ে দেন। লুকিয়ে ছেলেকে খুনের জন্য দেবদুলালকে এক লক্ষ টাকাও দেন প্রৌঢ়। পরিকল্পনামাফিক গত ৬ মার্চ অনিমেষকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব পুরুষোত্তমপুরে মদ খেতে যায় দেবদুলাল। সঙ্গে নেয় ওই এলাকারই বাসিন্দা জয়দেবকে। সেখানকারই একটি ধানক্ষেতে মদ খাওয়ার ফাঁকে সুযোগ বুঝে অনিমেষের গলা কেটে খুন করা হয়।
স্বামীই যে ছেলেকে খুন করিয়েছেন, তা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনিমেষের মা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ