বিয়ের পর কেটে গিয়েছে নয় বছর। এতদিন পর স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এক নৃত্যশিল্পীর অভিযোগ, দশ বছর আগে তাকে মদ খাইয়ে ধর্ষণ করেছিলেন তার স্বামী। যদিও তখন অভিযুক্ত ‘স্বামী’র সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি। একইসঙ্গে স্বামীর বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগও তুলেছেন ওই নৃত্যশিল্পী। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সার্ভে পার্ক থানায় ওই অভিযোগ দায়ের হয়।
এই ‘বিরল’ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর হতবাক পুলিশও। বধূ অত্যাচারের অভিযোগ প্রায়ই পুলিশের কাছে আসে। এমনকী বিয়ের পরও স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পুলিশের কাছে এসেছে। কিন্তু তাই বলে দশ বছর আগে স্বামী ধর্ষণ করেছিলেন, এমন অভিযোগ পুলিশের কাছে বিশেষ আসেনি। যদিও এই অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ বেশ গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত শুরু করেছে। অন্যান্য ধর্ষণের মামলার মতো ওই নৃত্যশিল্পীকেও আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানো হবে বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি ওই নৃত্যশিল্পী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তিনি ওড়িশি ও বিভিন্ন আধুনিক নৃত্যেও পারদর্শী। গত ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে একটি নামী রিসর্টে তার নাচের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানের শেষে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে পরিচিত হন এবং নিজের কার্ড দেন। এসময় ঐ ব্যক্তি বলেন, তিনি যাতে আরও অনেক বেশি অনুষ্ঠান পান, সেই ব্যবস্থা তিনি করবেন। কয়েক মাস পর নৃত্যশিল্পী ওই ব্যক্তির ফোন পান।
ঐ বছরের এপ্রিল মাসে ওই ব্যক্তি তাকে একটি হোটেলে দেখা করতে বলেন। তার কথামতো যুবতী হোটেলের একটি ঘরে যান। বাইপাসের পাশে ওই হোটেলটি এখন প্রগতি ময়দান থানা এলাকার আওতায় পড়ে। নৃত্যশিল্পীর অভিযোগ, ওই ব্যক্তি গল্প করতে করতেই তাকে ঠান্ডা পানীয় খেতে দেন। পানীয় খাওয়ার পর ওই যুবতী মাদকাচ্ছন্ন হয়ে যান। সেই সুযোগে ওই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি যুবতী বাড়িতে জানালেও ভয়ে বাইরের কাউকে জানাননি। এর পরও ওই ব্যক্তি তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। যুবতীর মা ওই ব্যক্তিকে বলেন তার মেয়েকে বিয়ে করতে। সেই প্রস্তাব মেনে ওই ব্যক্তি গত ২০০৭ সালে নৃত্যশিল্পীকে বিয়ে করেন।
পুলিশকে করা অভিযোগে ওই নৃত্যশিল্পী জানিয়েছেন, বিয়ের সময় নয় লাখ টাকার গয়না তার বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। তার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে তার উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তার উপর অত্যাচার বেড়ে চলে স্বামীর। স্বামী তাকে পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় নিয়ে যান। পাতিয়ালায় তাঁর উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। তার নয় লাখ টাকার গয়না অত্যাচার চালিয়ে স্বামী কেড়ে নেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই নৃত্যশিল্পী। এর পর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি এখন স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। তিনি দক্ষিণ কলকাতার নিউ সন্তোষপুর এলাকার একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থাকেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই নৃত্যশিল্পীর অভিযোগের ভিত্তিতে একসঙ্গেই পণের জন্য অত্যাচার ও দশ বছর আগের ধর্ষণের তদন্ত চলছে। এত বছর পর এই ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা চলছে। যদিও বিয়ের পর ওই যুবতী কেন স্বামীর বিরুদ্ধে পুরনো ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তদন্তের পর অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
বিডি প্রতিদিন/২২ আগষ্ট ২০১৬/হিমেল-১৬