শপিংমলের দোকানদার যেন মাছি তাড়াচ্ছেন। এমনকি রেস্তোরাঁ, সিনেমা হলও ফাঁকা। ভিড় পুরোটাই টেনে নিয়েছে মলে থাকা এটিএম কাউন্টার! দোকান কিংবা পার্কিংয়ের ডিউটি ছেড়ে নিরাপত্তারক্ষীরা সেই লাইন সামলাতেই ব্যস্ত। ভারত সরকার দেশটির ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করার পর রবিবার ছুটির দিনে এমনই ঘটনা সাক্ষি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ এলাকায় কোথাও এটিএম কাউন্টারের শাটার নামানো, কোথাও এটিএম খোলা থাকলেও টাকা নেই। রবিবার তাই টাকার খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে লোকজন এসে ভিড় করেছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলে। সেখানেও এক-একটি এটিএমের সামনে লম্বা লাইন।
শপিং মলের দোতলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অনুত্তমা মুখোপাধ্যায়। জানালেন, নগদ টাকার খুব দরকার। কিন্তু কোন এটিএম খোলা পাচ্ছিলেন না। সোমবার আবার ব্যাংক বন্ধ। ‘‘শেষমেশ এক বন্ধুর কাছ থেকে জানলাম, এই শপিং মলের এটিএমে টাকা বেরোচ্ছে,’’ বলেন অনুত্তমা। ওই মলের তিনতলায় আর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনেও লম্বা লাইনে দাঁড়ানো এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘বাইরে লাইন দিলে ধুলো, রোদ খেতে হতো। শপিং মলের ভিতরে অন্তত সেই কষ্ট নেই।’’
ছুটির দিনে হরিদেবপুরের অনেকেই টাকা তুলতে পাড়ার এটিএমে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই এলাকার কোন এটিএমেরই এদিন ঝাঁপ ওঠেনি! এলাকার বাসিন্দা চৈতি বসাক বলেন, ‘‘ছেলেকে টালিগঞ্জের মালঞ্চর কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। সেখানেও এটিএম বন্ধ।’’ যাদবপুর, লেক এলাকাতেও এটিএম পরিষেবার একই দশা। সকাল থেকে এটিএম কাউন্টারে বিশাল লাইন পড়েছিল একবালপুরসহ বন্দর এলাকাতেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুধু পুলিশই মোতায়েন করা হয়নি, থানার পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয়েছে পানিও। বিভিন্ন এটিএমের সামনে মোট ২২০টি পানির গাড়ি পাঠায় কলকাতা পৌরসভা। এ দিন কলকাতার এটিএম পরিস্থিতি দেখতে পথে নেমেছিলেন খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও।
রবিবার সাত সকালেই সল্টলেক পিএনবি মোড়ের কাছে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএমের সামনে ২০০ জন গ্রাহকের লাইন। সেই লাইনে দাঁড়ানো উল্টোডাঙার বাসিন্দা সৌমেন দাস জানান, ‘‘নিজের এলাকায় সব এটিএমে ভিড়। তাই এখানে এসেছিলাম।’’ সল্টলেকের বেশির ভাগ এটিএমেই এদিন বেলা এগারোটার আগে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল। ফলে টাকা না পেয়ে অনেককেই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার টাকার আসায় এটিএমের সামনেই ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন।
সুকান্তনগরের বাসিন্দা চাকুরিজীবী তমাল সরকার বলেন, ‘‘দুপুরে ফের টাকা আসবে এটিএমে। টাকা তুলে তবেই বাড়ি ফিরব। তাই দাঁড়িয়ে আছি।’’ অনেকে এটিএমের খোঁজে গাড়ি নিয়েও চক্কর কেটেছেন। এটিএম দেখতে পেলেই গাড়ি থামিয়ে টাকার খোঁজ করেছেন। লেকটাউন, বাগুইআটি, নিউ টাউনেও এটিএম ভোগান্তির ছবিটা কমবেশি একই।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ নভেম্বর, ২০১৬/মাহবুব