সিবিআই’এর হাতে তৃণমূলের প্রভাবশালী সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের আটক হওয়ার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি। বেআইনি অর্থলগ্নিকারী সংস্থা ‘রোজভ্যালি’ থেকে বিভিন্ন সময়ে একাধিক সুবিধা নেওয়া এবং এই সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার দুপুরেই সুদীপকে আটক করে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা। এই ঘটনার খবর কানে পৌঁছনো মাত্রই পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্ন থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের প্রধান মমতা ব্যানার্জি। এই ঘটনায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে পাল্টা মোদি ও অমিত শাহকে আটকের দাবি জানান মমতা।
নেত্রীর অভিযোগ নোট বাতিলের প্রতিবাদ করার জন্যই তৃণমূলকেও বন্দি করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে আগামীকাল বুধবার থেকে দেশ জুড়ে লাগাতার আন্দোলন ও ধরনা চালানোরও ঘোষণা দেন মমতা। মমতার নির্দেশেই এদিন সন্ধ্যায় সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই’এর দফতরে ছুটে যান সুদীপের স্ত্রী বিধায়ক ও অভিনেতা নয়না বন্দোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, সাংসদ সৌগত রায়, কাকুলি ঘোষ দস্তিদার, ডেরেক ও ব্রায়েন, বিধায়ক সুজিত বসু, সব্যসাচী দত্ত সহ রাজ্যের শীর্ষ পর্যায়ের একঝাঁক নেতা-মন্ত্রীরা। একসঙ্গে একাধিক নেতা-মন্ত্রী, তৃণমূলের সমর্থক, কৌতুহলী মানুষ ও সাংবাদিকদের ভিড়ে সিজিও কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।
এদিকে সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের আটকের পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিজেপি’র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সদর দফতরের সামনে। এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি’এর বিরুদ্ধে। লাঠিপেটা করার পাশাপাশি অনবরত ইট বৃষ্টি চলে। ভাঙচুর করা হয় বিজেপি দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি। ইটের আঘাতে আঘাতপ্রপ্ত হন বিজেপি’র কয়েকজন কর্মী-সমর্থক ও পুলিশের সদস্য। এসময় কলকাতার সেন্ট্রাল এভিনিউ’তে অবস্থিত বিজেপি দফতরের আশপাশের এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্র চেহারা নেয়। এমনকি বিজেপি’র পতাকা ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় ব্যস্ততম ওই রাস্তার যান চলাচল। পুলিশের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ছিল কার্যত নীরব।
এই ঘটনায় বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা অভিযোগ করে বলেন তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণেই বিজেপি দফতরের সামনে এমন নক্কারজনক হামলা চালালো। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে জাতীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ জানানো হয় বিজেপি’র রাজ্য দফতর থেকে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছেও অভিযোগ জানায় বিজেপি। এই ঘটনার কিছু পরেই বিজেপি দফতরের সামনে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এরপরই তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত বলেও বর্ণনা করেন তৃণমূলের নেতারা। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রাহুল সিনহাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সিবিআই’এর হাতে প্রথমে তাপস পাল এবং পরে সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের আটক হওয়ার ঘটনায় রাজ্য-রাজনীতি যথেষ্ট উত্তপ্ত।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ জানুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব