জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙড়। উত্তপ্ত গ্রামবাসীকে থামাতে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হয়েছে ২ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে চার জন, এর মধ্যে এক পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার দাবি, পুলিশের গুলিতে ওই দুই গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়নি। গুলি চালিয়েছে বহিরাগতরা।
পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা ও জমি ফেরতের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছিল ওই এলাকার বাসিন্দারা। সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের দুই নেতাকে আটক করে কাশীপুর ও নিউটাউন থানার পুলিশ। এতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ের মাছিভাঙা, খামারআইট, পদ্মপুকুর গ্রাম। গাছের গুঁড়ি ফেলে, অগ্নিসংযোগ করে শুরু হয় হাড়োয়া রোড অবরোধ। পরে ওই দুই নেতাকে ছেড়ে দিলে অবরোধ উঠে যায়। সমাধান সূত্র না মেলা পর্যন্ত পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়।
কিন্তু মঙ্গরবার দুপুর থেকে ফের উত্তপ্ত হতে থাকে ভাঙড়ের পরিবেশ। নন্দীগ্রামের কায়দায় আন্দোলন চলতে থাকে। একাধিক জায়গায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট ছুঁড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা। পাল্টা ইঁট ছোঁড়ে পুলিশ সদস্যরাও। দুই পক্ষের মধ্যেই দফায় দফায় ইঁট ও পাথর যুদ্ধ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস-লাঠি পেটা করতে বাধ্য হয় পুলিশ। কিন্তু এতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।
গ্রামবাসীরা উত্তপ্ত হয়ে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ঘটায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের তরফে সংলাপের মধ্যে দিয়ে গ্রামে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়। একসময় বিক্ষোভকারীদের থামাতে গুলিও চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। এতেই আহত হয় মফিজুল খান ও আলমগীর নামে দুই জন। তাদের কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তাদের। সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয় গণমাধ্যমের কর্মীরাও।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রেই এদিন ঢুকতে পারেননি রাজ্যের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এলাকার বিধায়ক সেখানে ঢুকতে এলে গ্রামবাসীদের বাধায় তাকে ফিরে আসতে হয়।
বিডি প্রতিদিন/১৮ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা