দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভার ভোট। ভোটারদের মন কাড়তে কেউ কেউ প্রচারণা শুরু করেছেন, আবার কেউ ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। যদিও নির্বাচনকে সামনে রেখে একে অপরকে লক্ষ্য করে কটাক্ষের পালা শুরু হয়ে গেছে।
কেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে উৎখাত করতে বিরোধীরা যেমন নিজেদের মধ্যে বিরোধী ভুলে একজোট হয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে তেমনি চুপ করে বসে নেই বিজেপিও। বিরোধীদের মহাজোটকে লক্ষ্য করে প্রতিনিয়ত আক্রমণ ধেয়ে আসছে।
মহাজোটকে লক্ষ্য করে মোদির বক্তব্য দুর্নীতির হাত থেকে বাঁচতেই বিরোধীরা একত্রিত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তার অভিমত ‘বিরোধীরা যদি একজোট হয় তবে বলতে হবে ‘তাদের লক্ষ্যই হল নিজেদের ব্যক্তিগত সুবিধা চরিতার্থ করা’।
রবিবার তামিলনাড়ুর মাদুরাই থেকে বিরোধীদের একহাত নিয়ে তিনি বলেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের ফলে সারা দেশ জুড়েই মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকেছে। যারা সরকারি চুক্তি, প্রতিরক্ষা চুক্তি, জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প থেকে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেছে তারা আজ একজোট হয়ে এই ‘পাহারাদার’কে সরাতে চাইছে।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য গেরুয়া শিবিরের সাথে একটা পেরে উঠবেন না বলেই সারা দেশ থেকে লোক জোগাড় করছেন মমতা।
তিনি বলেন, ‘আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে অন্য দলের কাছে যে বিজেপি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে-তা সকলেই বুঝতে পারছে। মমতা ব্যনার্জিও তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন।’
১৯ জানুয়ারি কলকাতার বিগ্রেড সমাবেশকে কটাক্ষ করে দিলীপ বলেন, ‘মমতা জানেন যে একা বিজেপির সাথে লড়ে পাড়বেন না। তাই সারা দেশ থেকে মানুষ জড়ো করতে চাইছেন। এটাতেই প্রমাণ যে মমতা ব্যাক- ফুটে চলে গেছেন।’
বিগ্রেডে বিজেপি বিরোধী ওই সমাবেশে কংগ্রেস সহ ২৩ টিরও বেশি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি.দেবগৌড়া, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ.ডি.কুমারস্বামী, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।
ব্রিগেডের সমাবেশ সফল করার জন্য জাতীয় নেতাদের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন মমতা। আসলে এই মুহূর্তে মোদি বা বিজেপি বিরোধী দলের অন্যতম মুখ হলেন মমতা। রাজ্য থেকে কেন্দ্র-সুযোগ পেলেই তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছেন মমতা। যা বিজেপির কাছেও রীতিমতো চিন্তার।
এব্যাপারে বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মধাব বলেন, ‘কারও প্রতি আমাদের কোন দুর্বলতা নেই। মমতা ব্যনার্জি আমাদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তিনি সবসময় আমাদের (বিজেপি) স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিরোধিতা করেন এবং আমরা যে কোন সমাবেশই করি না কেন, সমস্ত চাপের মধ্যেও মানুষের প্রচুর সমর্থন পাই। আর এটাই মমতা দিদিকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। আর সেই কারণেই তিনি (মমতা) আমাদের জনসভাগুলোকে বন্ধ করতে চাইছে। আমি বিশ্বাস করি যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মমতা ব্যানার্জিকে উৎখাত করবে এবং আমাদেরকে সমর্থন দেবে’।
মাধবের স্পষ্ট বক্তব্য ‘২০১৯ সালের নির্বাচন হবে একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঁচ বছরের জনকল্যাণ মূলক কাজ-অন্যদিকে কিছু স্বার্থান্বেষী, ক্ষমতালোভী মানুষ-এই দুইয়ের লড়াই। তার দৃঢ় বিশ্বাস দেশের মানুষ পুনরায় মোদিকে ফের ক্ষমতায় আনবেন।
এর আগে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল তাদের দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে ঝাড়গ্রামে সভা করতে দেওয়া হয়নি, তার হেলিকপ্টারকে নামার অনুমতি না দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে তাদের প্রস্তাবিত রথযাত্রাকেও অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ছিল বিজেপির।তবে বিজেপিকে পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূলও। তাদের বক্তব্য বিজেপি বুঝতে পেরেছে যে এবারের নির্বাচন উন্নয়নের নিরিখে হবে, হিন্দু-মুসলিম ইস্যুতে নয়।
এব্যাপারে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী ও তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় জানান ‘এটা পশ্চিমবঙ্গ-এখানে নির্বাচন হয় উন্নয়নের নিরিখে, কোন হিন্দু-মুসলিম ইস্যুতে নয়। আসলে উন্নয়ন ছাড়া এরাজ্যে অন্য কোন ইস্যুই নেই। আর এটাই বিজেপিকে ভীত করে তুলেছে।’
এরাজ্যে বিরোধী দল বিজেপির কোন সাংগঠনিক শক্তি নেই ঠিকই, কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তাদের ভোট শতাংশ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ইতোমধ্যেই দলের নেতাদের এরাজ্য থেকে ২২টি আসনে জেতার লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছেন। আর তাকে সামনে রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছেন গেরুয়া শিবিরের বড়-মেজো-ছোট নেতা-কর্মীরা।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন