১৩ জুন, ২০১৯ ১৭:০৪

মমতার হুঁশিয়ারি, পাল্টা গণইস্তফার পথে চিকিৎসকরা

অনলাইন ডেস্ক

মমতার হুঁশিয়ারি, পাল্টা গণইস্তফার পথে  চিকিৎসকরা

টানা তিন দিন ধরে চলা অচলাবস্থা কাটাতে জুনিয়র চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ কলকাতায় রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএম-এ আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেন মমতা। 

এসময় কর্মবিরতি তুলে নিয়ে চার ঘন্টার মধ্যে কাজ চালু করার নির্দেশ দেন মমতা। নির্দেশ না মানলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এসমা (এসেনসিয়াল সার্ভিস মেন্টেনেন্স অ্যাক্ট) জারি করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা আরও বলেন, বাইরে থেকে লোক এসে জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় বিজেপি ও সিপিআইএম'র সম্পৃক্ততা থাকারও অভিযোগ তুলেছেন মমতা।

কিন্তু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এসমা জারির হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও নিজেদের অবস্থানে অনড় চিকিৎসকরা। তাদের পাল্টা হুঁশিয়ারি আমরা কেউ সরকারের কাছে দায়বদ্ধ নই। সরকার এসমা জারি করার আগেই আমরা গণ ইস্তফা দেবো। 

সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পরই পাল্টা হিসাবে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ জন জুনিয়র চিকিৎসক ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন। তারা তাদের ইস্তফা পত্রটি পাঠিয়ে দেন হাসপাতালের সুপারের কাছে। সুপার সেই পদত্যাগ পত্রটি পাঠিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যভবনে। তবে তাদের ইস্তফা পত্রটি এখনও গৃহীত হয়নি বলে জানা গেছে। 

পরে হাসপাতালেই গণমাধ্যমের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন চিকিৎসকদের কাজ হল সেবা করা। একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কেউ ইচ্ছে না এসব করে না। ওদের সাথে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বসলেন, আমিও ওদের সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু এত বড় ঔদ্ধত্ব। ৪ দিন ধরে আবেদন করছি, কানই দিচ্ছে না।’ 

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জন্য তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান এসএসকেএম হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের বক্তব্য একজন মুখ্যমন্ত্রী এভাবে হুঁশিয়ারি দিতে পারেন না। জোর করে আন্দোলন তোলা যাবে না। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মমতার ইস্তফার দাবি তুলেছে এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসকরা। 

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরই রাজ্যের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠির দ্বারস্থ হয় চিকিৎসকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট ফোরাম অফ ডক্টর’র সদস্যরা। চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার দাবি নিয়ে এদিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ রাজ্যপালের সাথে দেখা করেন চিকিৎসকরা।  

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে কলকাতার নীল রতন সরকার (এনআরএস) মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে মোহম্মদ শাহিদ (৭৭) নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপরই রোগীর পরিবারের লোকজনেরা জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় পরিবহন মুখার্জি এবং যশ তখওয়ানি নামে দুই জুনিয়র চিকিৎসক মারাত্মক ভাবে আহত হন। ওই ঘটনার পরই রাত থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। 

এরপর সময়ের সাথে সাথে এনআরএস'র সীমা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাগুলিতে কর্মবিরতি ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতির ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীর পরিবারকেও। 

একাধিক হাসপাতালে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগী ও তাদের বাড়ির লোকজন। কোথাও আবার সড়ক অবরোধ, তালা ভেঙে জরুরী বিভাগ চালুর দাবিও জানানো হয়। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া জুনিয়র চিকিৎসকদের সাথে রোগীর পরিবারের মধ্য তুমুল সংঘর্ষ হয়। পরিষেবা না পেয়ে গত তিন দিনে দুইজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। 

সমাধান সূত্র খুঁজতে বুধবারই দফায় দফায় বৈঠক করেন রাজ্যটির স্বাস্থ কর্মকর্তারা। ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা মুখার্জিও। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয় কিন্তু কোন সমাধান সূত্রই বের হয়নি। 

এদিকে, কলকাতায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিনব কর্মসূচী গ্রহণ করেন দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া ইন্সিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালের ডাক্তরা। বৃহস্পতিবার মাথায় হেলমেট ও কপালে ব্যান্ডেজ পরে তারা রোগীদের পরিষেবা দেন। 

 

বিডি-প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর