ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কেক খাইয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাকে। মুখে কেক নিয়ে পুলিশের পোশাক পরা সেই পুলিশ কর্মকর্তা মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছেন! সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এ রকমই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ভিডিও দেখার পর খোদ পুলিশ এবং শীর্ষ আমলাদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা কর্তব্যরত অবস্থায় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন? বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ওই ভিডিওকে হাতিয়ার করে ‘দলদাস প্রশাসন’-এর অভিযোগ তুলে শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রচারে নামার জন্য তৈরি হচ্ছে।
খবরে আরও বলা হয়, ৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও'র সত্যতা পত্রিকা যাচাই করে দেখেনি। তবে ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পিছনে সমুদ্র। সৈকতের দিকে মুখ করে বসে আছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁকে ঘিরে ছোটখাটো একটা জটলা। সামনের সারিতে মমতার বাঁ দিকে পর্যটনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর পাশে রাজ্যের এডিজি পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা। মুখ্যমন্ত্রীর ডান দিকে দাঁড়িয়ে শিশির অধিকারী। তাঁর ডান দিকে পুলিশের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে রাজ্যের আইজি পশ্চিমাঞ্চল রাজীব মিশ্র।
মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের কাছে বাঁ দিকে একটি কেকের বাক্স খোলা। তিনি প্রথমে একটি কেকের টুকরো তুলে নিজে হাতে খাইয়ে দিলেন সামনে দাঁড়ানো ডিরেক্টর সিকিউরিটিজ বিনীত গোয়েলকে। বিনীতের খাওয়া বাকি টুকরোটি মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে দিলেন পাশে দাঁড়ানো রাজীব মিশ্রের দিকে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে কেকের টুকরো মুখে পুরে সামনে বসা মমতাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। ততক্ষণে শিশির অধিকারীকে কেক খাওয়াচ্ছেন মমতা। এঁদের পিছনে দাঁড়ানো জটলা থেকে অনেকে মোবাইলে ভিডিও করছেন।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, ওই ভিডিওটি তোলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিঘা সফরের সময়ে। গত সোমবার ২১ আগস্ট দিঘাতে যান মমতা। সেখানে জনসংযোগের পাশাপাশি প্রশাসনিক বৈঠকও করেন। দিঘাতে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত।
ভিডিওটি দেখে রাজ্যের শীর্ষ কয়েক জন পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা ভিডিওটি ২১ আগস্ট তোলা। কারণ ২১ আগস্ট বিনীত গোয়েলের জন্মদিন। ওই পুলিশ কর্তার জন্মদিন পালন করতেই মুখ্যমন্ত্রী কেক খাইয়ে দিচ্ছেন বিনীতকে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিনীত ছিলেন সাদা পোশাকে। তার পরনে পুলিশের পোশাক ছিল না। পাশে দাঁড়ানো রাজীব মিশ্র ছিলেন পুলিশের পোশাক পরে। তিনি আইজি পশ্চিমাঞ্চল হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন কলকাতা পুলিশের ডিসি পোর্ট, ডিসি সেন্ট্রাল-সহ বিভিন্ন পদে ছিলেন। দক্ষ অফিসার হিসেবেই পরিচিত তিনি।
প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্ত গোটা ঘটনার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘‘একজন পুলিশ কর্মী হিসেবে তিনি অল ইন্ডিয়া সার্ভিস কনডাক্ট রুল মেনে চলতে বাধ্য। সেই রুল অনুযায়ী তিনি একজন সাংবিধানিক পদাধিকারীকে ডিউটিতে থাকাকালীন স্যালুট করতে পারেন। কিন্তু কোনও ব্যক্তিকে প্রণাম করা সার্ভিস রুলের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
বুধবার সকাল থেকে একাধিক বার রাজীব মিশ্রকে ফোন করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপ করে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। তিনি এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব