বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন এমপি বলেছেন, আমরা কাওকে জোর করে পুশব্যাক করতে চাই না, এরা (রোহিঙ্গা) বড় নিপীড়িত মানুষ। এরা নির্যাতিত। আমরা মানবিকতায় বিশ্বাস করি। সেজন্য আমরা চাই এরা স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফেরত যাক। এরা যদি না যায় সেক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে যে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে মাদকসহ কিছু ক্ষেত্রে তৎপরতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যদি বাড়ে সেক্ষেত্রে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। ভারত, চিন, জাপান যারা মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে তাদের বিনিয়োগ ভেস্তে যাবে। অশান্তি সৃষ্টি হলে এই অঞ্চলের উন্নয়ন বিঘ্নিত হবে। তাই আমরা এর আশু সমাধান চাই। এই বিষয়ে ভারত সরকারকে আরো উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মন্ত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার মোহরকুঞ্জে ৯ তম ‘বাংলাদেশ বইমেলা ২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, "প্রায় দু বছর হয়ে গেছে, পর পর দুইবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা করে। মিয়ানমার সরকার বারবার আমাদের বলে, তারা তাদের লোকগুলো নিয়ে যাবে। আমরাও বলেছি আপনাদের ওখানে এই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে যাতে বাঁচতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারাও স্বীকার করেছে তা তারা দেবে। কিন্তু আমাদের এখানে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে না যে মিয়ানমারে ফিরে গেলে নিরাপত্তা পাবে।''
জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) নিয়ে ভারত সরকারের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করলেও দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সভপতি অমিত শাহ বলেছেন, সমস্ত বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীকেই নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এই নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আতঙ্কিত কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, "আমরা ভারত সরকারকে বিশ্বাস করি। তারা আমাদেরকে বলেছেন এন.আর.সি তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক কারণে তারা হয়তো এটা বলছেন।"
সম্প্রীতি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গীতে এক বিএসএফ কনস্টেবলের মৃত্যুর ঘটনা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি।
আগামী ২২ নভেম্বর ইডেন টেস্ট নিয়ে মন্ত্রী বলেন "সৌরভের মতো একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দাওয়াত করেছেন, তিনিও আসবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমি আশা করব ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সেখানে আসবেন এবং দুই দেশের সোনালি অধ্যায়ের বহি:প্রকাশ করবেন এবং তিস্তাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের উপহার দেবেন।"
উল্লেখ্য, কলকাতাস্থত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সম্মিলিত উদ্যোগে এই বইমেলা চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই মেলা ।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ, বাংলাদেশের লেখক, গবেষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, কলকাতার পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড সম্পাদক সুধাংশু দে, কলকাতা পৌরসভার মেয়র পারিষদ আশীষ কুমার প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সেখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী এবং নৃত্য পরিবেশন করেন শান্তিনিকেতনের আদিবাসীরা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল