১০ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:৫৫

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে লণ্ডভণ্ড পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা, নিহত ৪

সমগ্র ভারতে নিহত ৬

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে লণ্ডভণ্ড পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা, নিহত ৪

সংগৃহীত ছবি

দিক পরিবর্তন করে পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু যাওয়ার আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দাপট দেখিয়ে গেল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। শনিাবর রাতে প্রবল বেগে তা আছড়ে পড়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার নামখানা, বকখালির সমুদ্রউপকূলবর্তী এলাকায়। বকখালির বিস্তীর্ণ জায়গায় রীতিমতো ধ্বংসলীলা চালায় বুলবুল। ভেঙে পড়েছে বহু বাড়ি, দোকানপাট, বড় হোর্ডিং। উপড়ে গিয়েছে গাছ, বিদুতের খুঁটি, বাড়ির টিন বা অ্যাজবেস্টরের ছাদ। বহু চাষযোগ্য জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী বাসিন্দারা শনিবার কোনক্রমে প্রাণ হাতে করে নিরাপদে সরে গেলেও রবিবার সকালেই তারা ফের চলে এসে নিজেদের চোখে ক্ষয়ক্ষতি দেখেন। ধ্বংস্তস্তুপের মধ্যে থেকেও সকলেই চাইছেন কিছুটা গুছিয়ে নিতে। কেউ বা নিজের হাতেই মেরামত করছে মাথার ছাদ। নামখানাতেও একই ছবি। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে নামখানাতে দুই জেটি ভেঙে পড়ে। এরমধ্যে একটি নির্মীয়মাণ অন্যটিতে ভেসেল বাঁধা ছিল। কিন্তু সেটি ভেঙে যাওয়ার কারণে ভেসেলটিও পানির তোড়ে ভেসে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নামখানা রেল স্টেশন। কাকদ্বীপ রেলস্টেশনের অ্যাজবেস্টরের ছাদ উড়ে গিয়ে পড়েছে অন্যত্র। 

যদিও এরই মধ্যে সকালের নতুন আবহাওয়ায় ফের বকখালি সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমান পর্যটকরা। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় অনেক পর্যটকরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেলেও কয়েকজন থেকে গিয়েছিলেন সেখানে। রবিবার সকালেই এরকম অনেক পর্যটককে সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। তবে সকলেরই চোখে মুখে আতঙ্কের ছবি। 

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি, নন্দীগ্রাম, মন্দারমনিতেও বুলবুলের দাপট। ক্ষতিগ্রস্ত বহু ধান জমি, ভেঙে পড়েছে গাছ, বাড়ির ছাদ। 

কলকাতাতেও ভোর রাত পর্যন্ত টানা বর্ষণ, সাথে ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে একাধিক ছোট-বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। এর ফলে কিছু জায়গায় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। 

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে ট্যুইট করে মোদি জানান, ‘বুলবুল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। কেন্দ্রের তরফে সমস্ত রকমের সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমি সকলের সুরক্ষা ও সুস্থতা কামনা করি।’  

অন্যদিকে, রাজ্যে বুলবুলের প্রভাবে এখনও পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শনিবার দুপুরে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে কলকাতার বালিগঞ্জে সোহেল শেখ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এরপর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরের খোদামবাড়ি এলাকায় বাড়ির ছাদে গাছ ভেঙে পড়ে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। উত্তরচব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের গোপনা এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে রেবা বিশ্বাস নামে ৪৮ বছর বয়সী এক নারীর। এছাড়াও সুন্দরবন লাগোয়া এই জেলার হিঙ্গলগঞ্জে বহু কাঁচা বাড়ি, গাছ ভেঙে পড়েছে, উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বিচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহ। দক্ষিণ চব্বিশপরগনা জেলার নোদাখালিতে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় নবম শ্রেণির এক ছাত্রের। 

যদিও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় শনিবার সকাল থেকে রাজ্য প্রশাসনও তৈরি ছিল। ঝড়ের আশঙ্কায় শনিবারই ১ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।  রাজ্যজুড়ে ৩১৮টি ত্রাণ শিবির খোলা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে গভীর রাত পর্যন্ত নবান্নে কন্ট্রোল রুমে বসে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির সাথে যোগাযোগ রেখে চলেন। কলকাতায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির আভাস পেতে কলকাতা পুলিশের তরফে নামানো হচ্ছে ‘দুর্দান্ত’ নামক একটি ড্রোনকে। 

অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কলকাতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়ান পরিষেবা বন্ধ থাকার পর রবিবার সকাল ৬টা থেকে ফের পরিষেবা চালু হয়। 

বুলবুলের প্রভাব পড়েছে উড়িষ্যাতে। এই রাজ্যের চারটি জেলা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক বড় বড় গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে, বহু জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। রাজ্যটির কেন্দ্রপাড়া এলাকায় দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর