বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন বেড়াতে। এরপর দেশটির ভুয়া ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড বানিয়ে ভারতীয় নাগরিকও হয়ে গিয়েছিলেন। পরে এক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীকে বিয়ে করে এদেশেই জমিয়ে সংসারও হচ্ছিল। এরপর ভুয়া পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভারতীয় পাসপোর্টও পেয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলো না। ভারতীয় পাসপোর্টের পুনঃযাচাইয়ের (রি-ভেরিফিকেশন) সময়ই ধরা পড়ে গেলেন এই বাংলাদেশি নারী। প্রতারণাসহ একাধিক অভিযোগে আপাতত পুলিশ হাজতে দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুর এলাকার দেবলপুরে। ঘটনায় যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
জানা গেছে, আটক ওই অভিযুক্ত বাংলাদেশি নারীর নাম জুলি দাস। ২০১৮ সালের আগেই মা জ্যোৎনা রানী দে’এর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসেন। কিন্তু আর দেশে ফিরে যাননি, খড়গপুরেই থেকে যান তিনি। খড়গপুরের ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা দেবাশিস দাস নামে ভারতীয় রেলওয়ের এক সদস্যকে বিয়েও করেন। তাদের একটি সন্তানও আছে।
এদিকে বিয়ের পরই নাম পরিবর্তন করে জুলি দে হয়ে যান জুলি দাস। এরপর নিজের নামে স্কুল সনদ, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড বানিয়ে ফেলেন তিনি।
এরই মধ্যে ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই নিজের বাংলাদেশি পাসপোর্টটি বাতিল করে দেন জুলি। জানা গেছে, ওই একই দিনে মা জ্যোনা রানীর পাসপোর্টটিও বাতিল করা হয়। এরপর ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ২০১৯ সালে ভারতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানান জুলি। ভারতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে এদেশের পাসপোর্টও পেয়ে যান তিনি। কিন্তু এরপর জুলির দেওয়া সমস্ত নথি পুনঃযাচাইয়ের (রি-ভেরিফিকেশন) সময় তা দেখে সন্দেহ হয় পাসপোর্ট দফতরের কর্মকর্তাদের। তারা জানতে পারেন জুলি আসলে এক বাংলাদেশি নাগরিক। এরপরই পুরো ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডিরেক্টর অব ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোকে (ডিআইবি) জানিয়ে ২০১৯ সালেই একটি মামলা করা হয় কলকাতায় অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের তরফে। এরপর তদন্তে নামে ডিআইবি’র গোয়েন্দারা এবং প্রাথমিকভাবে প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি খড়গপুর টাউন থানায় একটি মালা করা হয়। করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন পর্ব চলাকালীন সময়ে তদন্তের অগ্রগতিতে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও অবশেষে বুধবার জুলি দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বুধবারই জুলিকে খড়গপুর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় হাকিমের এজলাসে তোলা হলে আদালত তাকে পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেয়।
খড়গপুর টাউন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজা মুখার্জি জানান ‘নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখে ওই বাংলাদেশি নারী এক ভারতীয় রেলের সদস্যকে বিয়ে করেন। জুলির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪৭২, ২০১, ৪০৬, ৪২০, ৩৪ এবং ১৯৪৬ সালের বিদেশি নাগরিকত্ব আইন ও ১৯৬৭ সালের পাসপোর্ট আইনে মামলা করা হয়েছে।’
জানা যায়, খড়গপুর পুলিশ সূত্রে খবর, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে মাকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসেন জুলি। এরপর এখানে ভারতীয় পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যান জ্যোনা রানী। কিন্তু দেড় বছর আগেই জ্যোনা রানীর বাংলাদেশি পাসপোর্টটি বাতিল করে দিলেও কীভাবে তিনি সেদেশে ফিরে গেলেন তা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পুলিশের এও অনুমান যে, ২০১৮ সালের অনেক আগেই জুলি ভারতে আসেন এবং ২০১৫ সালের কোনো একটি সময়ে জুলি ও দেবাশিষের বিয়ে হয়। কিন্তু এক বাংলাদেশি হয়েও কীভাবে ওই ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করে ফেললেন কিংবা ভারতে এসে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাসের পেছনে জুলির অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তাও জানার চেষ্টা করছেন জেলার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এই ঘটনার সাথে জুলির ভারতীয় স্বামী দেবাশিষের কতটা যোগসাজশ আছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ