১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:৫৭

‘পরকীয়ার’ পর ভারতীয় নারীকে হত্যা, উত্তরপ্রদেশে বাংলাদেশি গ্রেফতার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

‘পরকীয়ার’ পর ভারতীয় নারীকে হত্যা, উত্তরপ্রদেশে বাংলাদেশি গ্রেফতার

প্রতীকী ছবি

এক নারীকে হত্যার অভিযোগে ভারতে বেআইনিভাবে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে দেশটির উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ। ৩৬ বছর বয়সী ওই ভারতীয় নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ওই বাংলাদেশি নাগরিক। কিন্তু সেই সম্পর্ক থেকে ওই নারী বেরিয়ে আসার চেষ্টা করাতেই তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ৪৩ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম বাবুল মিয়া এবং খুন হওয়া ভারতীয় নারীর নাম ফাতিমা বিবি। গত ৫ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের সরফাবাদ এলাকায় এই খুনের ঘটনা ঘটে।

সরফাবাদ এলাকায় যে বাড়িটিতে নিহত ফাতিমা ভাড়া থাকতেন, সেই ঘর থেকে দুর্গন্ধ পাওয়ার পরই বাড়ির মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা সেক্টর-৪৯ থানায় বিষয়টি জানায়। এরপর ওই ঘর থেকে ফাতিমার বিকৃত লাশ উদ্ধার করা হয়।

সোমবার নয়ডার সেক্টর-৪৯ থানার পুলিশ কর্মকর্তা বিনোদ কুমার সিং জানান, অভিযুক্ত বাবুল মিয়া নয়ডাতেই শ্রমিকের কাজ করেন। গত ৫ আগস্ট ফাতিমার সাথে তুমুল ঝগড়া হয় তার। একসময় রাগের মাথায় ফাতিমার গলায় থাকা ওড়না পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন বাবুল।

পুলিশের ধারণা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ফাতিমার সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবুল। কিন্তু সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকেন ফাতিমা। আর তা থেকেই ঝগড়া ও খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাংলাদেশে স্ত্রীসহ পরিবার আছে অভিযুক্ত বাবুলের। প্রায় ১৫ বছর আগে বেআইনিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোচবিহার জেলায় পাড়ি জমিয়ে বসবাস শুরু করেন বাবুল। সেখানে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন। এরপর সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় চলে যান। সেখানেই নয়ডার সেক্টর-১৩৭ এলাকায় সুপারটেক সোসাইটিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন বাবুল। গত কয়েক বছর ধরে নয়ডার বারোলা, গেঝা, সরখা, সরফাবাদ এলাকায় বাসা পরিবর্তন করে থাকছিলেন বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নয়ডা ফেরার পথে ট্রেনের মধ্যেই ফাতিমার সাথে পরিচয় হয়েছিল বাবুলের। আর নয়ডাতে ফিরে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। চার বছর আগে স্বামীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর কার্যত নিঃসঙ্গ ছিলেন ফাতিমা। কারণ তাদের বড় সন্তান থাকে গুরুগ্রামে, বাকিরা তাদের বাবার সাথেই থাকতো। স্বাভাবিকভাবেই ফাতিমাও বাবুলকে সাথে নিয়ে নয়ডার গেঝা এলাকায় একসাথে থাকতে শুরু করেন।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাবলু ও ফাতিমা- উভয়েই নয়ডার বারাউলা এলাকায় স্থানান্তরিত হন। আর সেখানেই দৈনিক শ্রমিকের কাজ শুরু করেন ফাতিমা। এক পর্যায়ে কনট্রাক্টর সাজিদ মালিকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। গত জুলাই মাসে সাজিদকে সাথে নিয়ে ফাতিমা সরফাবাদ এলাকায় চলে যান।

এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট ফাতিমার সন্ধান পান তার পুরনো প্রেমিক বাংলাদেশি নাগরিক বাবুল। ফাতিমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি পুরনো সম্পর্কে ফিরে আসতে রাজি হননি। আর তখনই রাগের মাথায় ফাতিমার ওড়না দিয়েই তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেন বাবুল।

তদন্তে নেমে গত ৬ আগস্ট সরফাবাদ এলাকায় নিজের ভাড়া নেওয়া ঘর থেকে ফাতিমার বিকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। 

পুলিশ জানিয়েছে,ফাতিমাকে খুনের পরই রাজস্থানে পালিয়ে যান বাবুল। এরপর ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গে পৌছান এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু করোনার কারণে ভিসা না পাওয়ায় সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি বাবুলের। ফলে গত ১০ সেপ্টেম্বর ফের নয়ডায় ফিরে আসেন তিনি। থাকতে শুরু করেন গেঝা গ্রামে। 

এরইমধ্যে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার নয়ডার ৫২ সেক্টর মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে বাবুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট, একই নম্বরের দুটি আধার কার্ড, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক বাবুলের বিরুদ্ধে খুন, ১৪ ফরেনারর্স অ্যাক্ট, পাসপোর্ট আইনসহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর