স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গতমাসেই পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় নাগাদ প্রায় পঞ্চাশ কোটি রুপি।
সপ্তাহ খানেক আগেই গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে ভারতের আরেকটি তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এরপরেই রাজ্যজুড়ে বিজেপি ‘চোর ধরো, জেলে ভরো’ স্লোগান তুলে প্রতিবাদ, মিছিল শুরু করে। একই ইস্যুতে সিপিআইএম, কংগ্রেসও রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়।
এবার সেই ইস্যুতেই বিরোধীদের নিশানা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যটির ক্ষমতাশীল দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যানার্জি। বিরোধীদের হুমকি ‘রাজনীতি না করলে শিক্ষা নিয়ে অপপ্রচারকারীদের জিভ টেনে খুলে ফেলার কথা বলতাম।’
তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষার্থী সংগঠন ‘তৃণমূল ছাত্র পরিষদ’এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উপলক্ষে সোমবার কলকাতার মেয়ো রোডে এক জনসভা থেকে মমতা বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে যারা এত অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছেন... বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ফলে আমি সেটা নিয়ে কথা বলবো না।’
‘...কিন্তু আপনারাই বলুন তো, কত ছেলেমেয়ে শিক্ষকের চাকরি পেয়েছে, সিপিআইএম'এর আমলে সেই লিস্ট, আলমারি কোথায়? তারা পয়সা নিয়েছে, চাকরি দিয়েছে। তাই সিস্টেমটা তারাই ভালো জানে। আজকে তৃণমূলকে বলা হচ্ছে চোর। আমি যদি আজ রাজনীতি না করতাম, আর এই চেয়ারে না থাকতাম, আমি আমাদের বোনদের বলতাম, যারা এই মিথ্যে কথা রটনা করছে, তাদের জিভগুলোকে টেনে খুলে ফেলে দিতে।’
তিনি বলেন, ‘একটা দলের নামে বদনাম করা হচ্ছে, অথচ এখনো বিচার হয়নি, এখনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।’
মমতা বলেন, ‘পার্থ যদি চোর হয়, আইন তার বিচার করবে। কিন্তু মনে রাখবেন পার্থও চোর, কেষ্টও (অনুব্রত মণ্ডল) চোর, ববিও (ফিরাদ হাকিম) চোর, অরূপ বিশ্বাসও চোর, অভিষেক ব্যানার্জিও চোর, মমতা ব্যানার্জিও চোর, রেড রোডও চোর। সবাই চোর আর আপনারা সাধু? এ দিয়ে জীবন চলবে না।’
তার আশঙ্কা দলের সাংসদ ও তার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জীকে হয়তো আবার নোটিশ পাঠাবে। তার কয়েক মাসের বাচ্চাকেও হয়ত নোটিশ পাঠাতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
বিরোধীদের নিশানা করে তার বক্তব্য ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় দোষ করলেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবেন, ববির বিষয় হলেও মমতাকে টেনে আনা হবে, ভাত কেন গরম নেই তাতেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবেন, আকাশে মেঘ নেই কেন তাতেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবেন। তোমরা কী ভাবো? মমতা ব্যানার্জি কি মাথা নত করে রাজনীতি করতে এসেছে? মমতা ব্যানার্জি এসেছে মাথা উঁচু করে, আদর্শ নিয়ে, দর্শন নিয়ে।’
তার দাবি ‘আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য, আমি চুরি, ডাকাতি করার জন্য রাজনীতি করি না। আমাদের মধ্যে অনেক জনকেই আমি গ্রেফতার করিয়েছি।’
এ দিনের সভা থেকে আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি থেকে বিজেপিকে হটানোর ডাক দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিজেপিকে উৎখাত করবোই। দিল্লির লড়াই (বিজেপিকে উৎখাত করা) আমাদের শেষ লড়াই হবে। বাংলাতে তো আমরা লড়াই করছিই, বাংলাকে বাঁচানোর আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। আর বাংলাকে ঠিক রেখেই আমরা অঙ্গীকার করছি যে, আগামী ২০২৪ সালে বিজেপিকে দিল্লি থেকে উৎখাত করবোই।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ