অবিরাম বর্ষণের কারণে ধসে বিপর্যস্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য সিকিমের একাংশ। ধসের কারণে অধিকাংশ রাস্তাতেই আটকে পড়তে হয়েছিল পর্যটকদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কেই আটকে থাকতে হয়েছে। কার্যত জীবন হাতে নিয়ে কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে শিলিগুড়িতে ফিরে এখন স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন তারা। ঘুরতে গিয়ে ভয়ংকর এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলো বাংলাদেশি পর্যটকরা।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিল ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার পাশাপাশি সিকিমেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হবে। সেই সাথে ধসেরও অশনি সংকেত শুনিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। সেই মতোই গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার টানা বৃষ্টিতে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় ধসে বিপর্যস্ত একাধিক এলাকা। বিশেষ করে উত্তর সিকিমের বেশ কয়েকটি জায়গাতে ধসের কারণে একপ্রকার স্তব্ধ যান চলাচল।
এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণে সিকিম সরকার উত্তর সিকিমে যাওয়ার পারমিট বাতিল করেছে। ফলে এই মুহূর্তে উত্তর সিকিমে যাওয়া নিষিদ্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুজোর এই মৌসুমে সিকিম বেড়াতে এসেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এক প্রকার ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলো দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
তবে প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের মাঝে পড়ে কোনোক্রমে বেঁচে ফিরতে পেরে এখন স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে সিকিম ফেরত পর্যটকরা। যদিও প্রাণে বেঁচে ফিরে তাদের চোখে-মুখে এখনো সেই ভয়ংকর ধসের ছবি ভেসে উঠছে।
পুজোর আগে থেকেই পর্যটক মৌসুম শুরু হয়ে যায়। মূলত দেশি-বিদেশি পর্যটকরা উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমেও ভ্রমণে যায়। গত দুই বছর করোনার কারণে পর্যটকদের জন্য সিকিমের দরজা বন্ধ থাকায় সেভাবে পর্যটকরা সিকিমে যেতে পারেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই চলতি বছর সিকিমে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।
এই মুহূর্তে কেবল দেশীয় পর্যটকরাই নয়, বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর পর্যটক সিকিমে বেড়াতে গেছে। তবে সিকিমে বেড়াতে গিয়ে এই ধরনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে হবে বলে কল্পনাতেই আসেনি বাংলাদেশের এক পর্যটক দল।
বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটক দলের সদস্য আরিফিন ইমতিয়াজ বলেন, চলতি মাসের ৭ অক্টোবর তারা সিকিম বেড়াতে গিয়েছিল। এরপরই তারা সোমবার সিকিম থেকে উত্তর সিকিম বেড়াতে লাচুং থেকে জিরো পয়েন্টে যায়। আর সেখান থেকে ফেরার পথেই ঘটে রাস্তায় একের পর এক ধসের ঘটনা। আর এই পরিস্থিতিতেই কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে তারা শিলিগুড়িতে ফিরতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
তিনি আরো জানান, অনেকটাই আতঙ্কে ছিলাম। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। কিন্তু আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে, এটাই অনেক।
অন্যদিকে ওই পর্যটক দলের অন্যান্য সদস্যরা জানিয়েছেন, এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার আগে তাদের হতে হয়নি।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে সিকিমের অধিকাংশ জায়গায় ধসের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকরা ভ্রমণের প্ল্যান কাটছাঁট করে বাড়ি ফিরতে শুরু করে দিয়েছে। তাই পর্যটকরা যাতে সঠিকভাবে নিজেদের বাড়ি পৌঁছাতে পারে, সেজন্য রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের পক্ষে মঙ্গলবার রাতের দিকে একটি বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই