অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে গ্রেফতার হয়েছিলেন এক বাংলাদেশি সন্তানসম্ভবা নারী। আদালতের নির্দেশে এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত চার মাস ধরে ওই নারীর ঠিকানা কারাগারের চার দেওয়াল। চাঁদনী শেখ নামে ঢাকার বাসিন্দা ওই নারী আসামের এক জেলা হাসপাতালে ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
কারাগার সূত্রে খবর, কাজের খোঁজে দুই বছর আগে স্বামীর হাত ধরে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় প্রবেশ করেন চাঁদনী। এরপর স্বামীকে নিয়ে ভারতের মুম্বাই শহরে চলে যান তিনি। কিন্তু এরই মধ্যে সেখানে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ার কারণে কয়েক মাস পরেই চাঁদনীকে তার এক আত্মীয়র সাথে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করেন স্বামী। সেই মতো মুম্বাই থেকে ট্রেনে চেপে আসাম হয়ে বাংলাদেশে ফিরতে চাচ্ছিলেন ওই নারী।
কিন্তু বৈধ ভিসা ও পাসপোর্ট না থাকার কারণে আসামের করিমগঞ্জের বদরপুর রেলওয়ে স্টেশনে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় চাঁদনীর সাথে থাকা তার আত্মীয়কেও। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা হয়। তোলা হয় আদালতে। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে চাঁদনীকে পাঠানো হয় করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে।
গত প্রায় চার মাসের বেশি সময় ধরে ওই কারাগারেই বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন চাঁদনী ও তার আত্মীয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কারাগার কর্তৃপক্ষও জানতে পারেন চাঁদনীর সন্তানসম্ভবার কথা। কারাগার কর্তৃপক্ষের তরফে তার শারীরিক অসুস্থতার খবর জানানো হয় রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। ৪২ বছর বয়সী চাঁদনীকে ভর্তি করা হয় করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালের মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে।
সিভিল হাসপাতালের সুপার লিপি দেব বলেন, ‘ওই বাংলাদেশী নারী যখন তার দেশে ফিরে যাচ্ছিলেন করিমগঞ্জ পুলিশ তাকে বদরপুর রেল স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে। কারাগারে বন্দী থাকাকালীন তার যখন প্রসব বেদনা ওঠে সেসময় দ্রুততার সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে সিজারিয়ান বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর একটি সন্তানের জন্ম দেন তিনি।’
বুধবার করিমগঞ্জের যুগ্ম অধিকর্তা (স্বাস্থ্য) শামসুল আলম বলেন,‘কয়েকদিন আগে যখন কারাগার পরিদর্শন করছিলাম তখন ওই বাংলাদেশি নারী বন্দীর বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। দুই দিন আগে তার যখন প্রসব বেদনা ওঠে, কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। গত সোমবার সেখানেই এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী।’
তিনি জানান, ‘মা ও তার সন্তান- উভয়ই ভালো আছে।’
বুধবারই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় চাঁদনী ও তার সন্তানকে। সেখান থেকে তাদের স্থানান্তরিত করা হয় করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে। সূত্রের খবর চাঁদনী ও তার সন্তান করিমগঞ্জের কারাগারে বন্দী থাকলেও তার স্বামী এখনো মুম্বাইতে রয়েছেন। তার সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।
এও জানা গেছে, দালালকে ২০ হাজার রুপি দিয়ে অবৈধভাবে স্বামীকে নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন চাঁদনী। ভারতের মুম্বাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন তিনি। এটি তার চতুর্থ সন্তান।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ