নাগরিকত্ব ইস্যুতে ফের সরব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন তার সরকার কোনোভাবেই এ রাজ্যে ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ (সিএএ) চালু করতে দেবে না। তার অভিযোগ, জিরাটে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এসব নিয়ে খেলছে।
বুধবার রাজ্যটির নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে এক দলীয় সভা থেকে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি বলেন, নির্বাচনে আসলেই বিজেপির তখন সিএএ’র কথা মনে পড়ে। এটা নিয়ে আপনাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে আর নির্বাচন আসলে মাথায় এনআরসি ঢোকে, মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করে, রাজবংশীদের নিয়ে বাংলা ভাগ করার চেষ্টা করে, পাহাড়িদের নিয়ে বাংলা ভাগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এই মানুষগুলো তা চায় না।
এসময় তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, নদীয়ার মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ, তাই এই মানুষগুলোর মধ্যে বিভ্রান্ত ছড়ানোর চেষ্টা করছে। গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। ওই রাজ্যের পাশাপাশি আবার বলছে বাংলাতেও সিএএ চালু করবে। কোথা থেকে সিএএ করবে? আমরা এটা করতে দেব না। সিএএ মানে কি নাগরিকত্ব?
মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো...আপনারা কি চাকরি করেন? দোকান করেন? আপনাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়? রেশন কার্ড পান? স্বাস্থ্যসাথী পান? লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পান? জমি জায়গা আছে? তাহলে সবই যদি থাকে সেটা তো আপনার অধিকার। আপনি যদি নাগরিক না হতেন, তবে এগুলো কিভাবে পেতেন? এটা মিথ্যে কথা। বিজেপি কিছু লোককে এখান-ওখান থেকে ডেকে নিয়ে আসতে চায়। তারা বাংলার লোক নয়। তাদের বাংলায় অনুপ্রবেশ করানোর জন্য নাগরিকত্ব দিয়ে আপনার অধিকারকে ছোট করবে। আমি মনে করি মতুয়ারা এখানকার নাগরিক। রাজবংশী বাঙালি, উদ্বাস্তু, তপশিলি, আদিবাসী, সংখ্যালঘুরা সকলেই এখানকার নাগরিক। আমরা সকলেই নাগরিক আর আপনারা যদি নাগরিক না হন, তবে আমিও নাগরিক নই। আপনারা ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য, বিধায়ক, পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ পৌরসভা নির্বাচন করেন। আপনার ভোটেই নরেন্দ্র মোদি জিতেছে ও প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। যদি আপনাদের ভোটাধিকার না থাকে, তবে উনি প্রধানমন্ত্রী হলেন কিভাবে? আমাকেও যারা জিতিয়েছেন, তাদের যদি ভোটাধিকার না থাকে তবে আমাদের কিভাবে জিতিয়েছেন? এটা পুরো মিথ্যা কথা। আমি মতুয়া ভাই-বোনদের এখনো বলছি আপনারা এখানকার নাগরিক এবং আপনারা পুরোপুরি নাগরিক থাকবেন। আপনাদের উপর কোনোরকম কিছু করতে দেব না। আপনাদের নাগরিকত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমি জীবন দেওয়ার জন্য তৈরি, কিন্তু আপনাদের নাগরিকত্ব কাড়তে দেব না।
মমতা আরো বলেন, বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ এসেছে, কত কষ্ট করে সংসার চালিয়েছে। আজকে তাদের সবাইকে আমি নিঃশর্তে জমির দলিল দিচ্ছি, তার কারণ তাদের জমি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এখন রেল কর্তৃপক্ষ অনেক জায়গা থেকে উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ করছে কিন্তু একটা জায়গা থেকেও উচ্ছেদ করতে দেবেন না। উদ্বাস্তুরা যারা রয়েছেন তাদের ঘরবাড়ি আমরা ভাঙতে দেব না, তাদের উচ্ছেদ করতে দেব না-এটাই আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতি।
আগামী সাধারণ নির্বাচনে দিল্লিতে বিজেপি যে ক্ষমতায় আসছে না, তাও এদিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন। মমতা বলেন, আমরা এখনো মনে করি ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না। আগেরবার ২০১৯ সালে তারা যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন ঝাড়খণ্ড, বিহারসহ একাধিক রাজ্যে তাদের সরকার ছিল। কিন্তু এখন বিহার, ঝাড়খণ্ডে তাদের সরকার নেই। কর্নাটক, কেরকে হারবে। উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতেও পারবে না। গুজরাট, দিল্লি, উত্তর প্রদেশে পুরো আসন পাবে না। কোনো অঙ্কেই বলছে না।
বিডি প্রতিদিন/এমআই