শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আড্ডা-আলোচনায় ঢাকা লিট ফেস্ট

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

আড্ডা-আলোচনায় ঢাকা লিট ফেস্ট

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সোমালি সাহিত্যিক নুরুদ্দিন ফারাহ গতকাল ‘লস্ট কান্ট্রি, লাস্ট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক সেশনে কথা বলেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দেশ-বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ শিল্পের বিভিন্ন শাখার মানুষজন নিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে ঢাকা লিট ফেস্ট-২০২৩। গতকাল দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান কেটেছে আড্ডা-আলোচনা-সংগীত ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এ সময় আলাপচারিতায় অতিথিদের কেউ মন্তব্য করেন-বাংলা কনটেন্টের রাজধানী হবে ঢাকা, কেউ বলেছেন- আতঙ্কের পৃথিবীতে বীর হওয়া যায় না, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার রয়েছে, কেউ বলেছেন- প্রত্যেকটা মানুষের নিজের গল্পটা জানানো উচিত, মানুষ প্রকৃতির চেয়ে দুর্বল-ইত্যাদি। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে শীত উপেক্ষা করেই সকাল ৯টায় শাহ সুফি সরদার আমির উদ্দিন চিশতীর সুফি সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। সংগীত পরিবেশন করেন সরদার আফসার উদ্দিন। এরপর সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে উদ্ভাবনী আলাপে বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার সঙ্গে আলাপে মজেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একই সময় অনুষ্ঠিত হয় আরও তিনটি সেশন, যার মধ্যে ছিল শিশুদের জন্য গল্প বলার সেশন। ‘আগামীর আখ্যান’ নিয়ে আলাপ করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন, সঞ্চালনা করেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। বেলা সোয়া   ১১টায় ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষের সঙ্গে আলাপে বসেন ঢাকা লিট ফেস্টের প্রযোজক ও পরিচালক সাদাফ সায্। পাশাপাশি সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করেন দেশবরেণ্য সাংবাদিকরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় যুক্ত হন সাফ ফুটবল বিজয়ী নারী দলের সদস্যরা। শিশুদের জন্য একই সময়ে ‘পাপেট শো’ পরিবেশন করেন প্রখ্যাত শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার। দুপুর পৌনে ২টায় লেখার স্বাধীনতা নিয়ে আলাপ করেন আলোচকরা। সাংস্কৃতিক যুদ্ধ নিয়ে আলাপ করেন যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক সারাহ চার্চওয়েল। দুপুর ৩টায়  সোমালি লেখক নুরুদ্দিন ফারাহর মুখোমুখি হন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ। একই সময় অনুষ্ঠিত হয় ওটিটি কনটেন্ট নিয়ে আলোচনা। বিকাল সাড়ে ৫টায় ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিল্ডা সুইনটনের সঙ্গে আলাপে বসেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক আহসান আকবার। এ ছাড়া সারা দিন শিশুদের জন্য নানা আয়োজনের পাশাপাশি ছিল সংগীত পরিবেশনা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। ‘হাচ ক্রসওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশন’ জয়ী উপন্যাস ‘দি হাংরি টাইড’ নিয়ে আলোচনার সেশনে মানুষ প্রকৃতির চেয়ে দুর্বল উল্লেখ করে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষ বলেন, ‘প্রকৃতিকে ধ্বংস করার সক্ষমতা মানুষের নেই। মানুষ পরিবেশের যা-ই ক্ষতি করুক, প্রকৃতি তার সবটাই ফিরিয়ে দেবে। ফলে নিজেরা ভালো থাকতে পরিবেশের ভালো চাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’ ‘লস্ট কান্ট্রি, লাস্ট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক সেশনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সোমালি সাহিত্যিক নুরুদ্দিন ফারাহ বলেন, ‘আমার মধ্যে বরাবরই স্বাধীনচেতা মনোভাব বিরাজ করত। আমাকে কী করতে হবে, তা  কেউ বলে দিলে আমি তা পছন্দ করতাম না। বরং আমি সবসময় তার বিপরীত কাজটাই করতাম।’ ‘ওটিটি : দ্য ফিউচার অব কনটেন্ট ক্রিয়েশন’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশনে চিত্রনাট্যকার-অভিনেতা গাউসুল আলম শাওন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওটিটি সেই বিপ্লবের নতুন মাধ্যম। সব বাধা উতরে ঢাকা হবে বাংলা কনটেন্টের রাজধানী। ‘এই সময়ের পৃথিবী বীরের নয়’ উল্লেখ করে কথাসাহিত্যিক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘দেশপ্রেম এখন প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। এই আতঙ্কের পৃথিবীতে বীর হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা ফুল, লতা, পাতা আর বনরুটির কথা বলি সাহিত্যে।’

সর্বশেষ খবর