শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীতে কাবু দেশ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতে কাবু দেশ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে ঠান্ডা বাতাসে দিনাজপুরে বিপর্যস্ত জনজীবন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাঝ পৌষের পর হঠাৎ করেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি হিমালয় ঘেঁষে আসা উত্তরের কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু জনপদ। দিনের অধিকাংশ সময় মিলছে না সূর্যের দেখা। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঠান্ডায় ভয়াবহ কষ্টে আছে শিশু, বৃদ্ধ ও দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ। বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, বাত, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ। গ্রামাঞ্চলে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেক মানুষ। সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ও ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ৮ ডিগ্রির নিচে ও ৬ ডিগ্রির ওপরে থাকলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, নওগাঁ, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, পঞ্চগড় অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৫.৫ ডিগ্রির মধ্যেই ছিল। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় টেকনাফে ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মাদারীপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাত ও দিনের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, গতকাল ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নিকলি, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বগুড়া, বদলগাছী, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, ডিমলা, রাজারহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুমারখালী, বরিশালসহ অনেক স্থানে ১১ ডিগ্রি বা তার কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সারা দেশের রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে সামান্য বাড়তে পারে দিনের তাপমাত্রা। এ ছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের কোথাও কোথাও তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- বগুড়ায় বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার হাসপাতালগুলোতে দৈনিক ঠান্ডাজনিত রোগে ৩০ থেকে ৫৫ জন চিকিৎসা নিতে আসছেন। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। দুস্থ ও নিম্ন আয়ের শীতার্ত মানুষকে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। ফুটপাতে ছিন্নমূল মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।

লালমনিরহাটে পাঁচ দিন ধরে নেই সূর্যের দেখা। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। কমে গেছে যানবাহন চলাচল। ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন। কাজে বের হতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কনকনে ঠা া আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কয়েক লাখ শীতার্ত মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। গতকাল লালমনিরহাটের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে  ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হিলিতে প্রতিদিনই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পুরো এলাকা। হাসপাতালে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ। হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুন্নাহার আজাদী বলেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণে কিছুদিন ধরে উপজেলায় ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগ রোগীই বয়স্ক ও শিশু। রোগীদের চাপের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় শৈতপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক জানান, রোগীদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। রংপুরে কয়েকদিন ধরে হাড় কাঁপানো শীত, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি প্রাণীরাও কাবু হয়ে পড়েছে। প্রচ  ঠা ায় ক্যালসিয়াম সংকটে জ্বর, সর্দি, খাবার অরুচিসহ নানা রোগে ভুগছে এ অঞ্চলের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণী। রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শীতের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। শীতের পর রোগবালাই আরও বাড়তে পারে।  পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠপর্যায়ে কর্মীরা কাজ করছেন। হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে বিপর্যস্ত দিনাজপুরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শুক্রবার ঘন কুয়াশা না থাকলেও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস কাঁপিয়েছে দিনাজপুরের মানুষকে। জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে যেতে না পেরে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষদের জটলা বেঁধে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ধান লাগিয়ে বাড়িতে ফিরে ঠা াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কিরণ রায় (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর