মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাসন্তী ভালোবাসা দিবস

মোস্তফা মতিহার

বাসন্তী ভালোবাসা দিবস

‘পৃথিবীটা তোমারি থাক/পারলে নীল রং দিও/আকাশটা তোমারি থাক/পারলে কিছু তারা দিও/মেঘটাও তোমারি থাক/পারলে একছু ভিজতে দিও/হৃদয়টা তোমারি থাক/পারলে একছু জায়গা দিও।’ ভালোবাসার এমন হাজারো পঙ্ক্তিমালায় প্রেমিক তার প্রেয়সীর প্রতি হৃদয়ের আকুতি জানায়। অন্যদিকে বৃক্ষরাজিতে নতুন পত্রপল্লব জানান দেয় ফাগুন যে এসেছে ধরায়। যেজন্য কবি বলেছিলেন, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’। বাংলা পঞ্জিকার হিসাবে আজ পয়লা ফাল্গুন। একই সঙ্গে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। শিমুল ফোটা, পলাশ ফোটার দিনে আগুনলাগা ফাগুনের আবিরে মাখা বাসন্তী ভালোবাসা দিবস আজ। ঋতুরাজ বসন্ত ও ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে ভরা আজকের দিনটি। আজ তারুণ্যের ঢল নামবে রাজধানীসহ সারা দেশে। এমন ভালোবাসার দিনে প্রেমিক-প্রেমিকা হাতে হাত রেখে বলবে, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’। মুঠোফোনের মেসেঞ্জার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফেসবুক, ইমো, হোয়াটস অ্যাপের চ্যাটবক্সে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয়ে ভালোবাসা ও বসন্ত হয়ে উঠবে পল্লবিত। এদিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, প্রিয় উপহার, বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন বিনিময় হয় কপোত-কপোতীর মাঝে। এ ছাড়া নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দুই ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে উপহারের অনুষঙ্গ। অন্যদিকে ঋতুরাজের আগমনে কোকিলের কুহুতানে প্রকৃতিতে বসন্তের বাতাস উজ্জীবিত করবে বসন্তপ্রিয় বাঙালিকে। আগুনলাগা ফাগুনের সঙ্গে ভালোবাসার লালে রাজপথে নামবে বাসন্তী ভালোবাসার মিছিল। হিমেল শীতের আড়মোড়া ভেঙে পুরনো পাতা ঝরে গিয়ে বৃক্ষরাজিতে নতুন পত্রপল্লবে বসন্ত যেভাবে প্রকৃতিতে সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়েছে, ঠিক তেমনি ফাল্গুনী রঙের বসনের সঙ্গে ফুলের চাদর গায়ে দিয়ে কপোত-কপোতীদের পরানের গহিন থেকে উচ্চারিত হবে ভালোবাসার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। হলুদ-কমলার বাসন্তী আবিরের সঙ্গে ভালোবাসার লাল গোলাপে রাজপথ থেকে গলিপথে ছড়িয়ে পড়বে বাসন্তী দিনের ভালোবাসা। শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি থেকে বাংলা একাডেমিসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চারুকলা ও টিএসসি, ধানমন্ডি লেক, রবীন্দ্রসরোবর, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বেইলি রোডের ফাস্টফুডের দোকান, হাতিরঝিল, ফুটপাতের চটপটি-ফুচকার দোকানেও বিনিময় হবে অনুভূতির ডালপালা। লাল-হলুদ শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে হলুদ গাঁদা আর লাল গোলাপের অনিন্দ্য সৌন্দর্যের সঙ্গে বসন্তের দিনে তরুণীরা যেভাবে ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়াবে, ঠিক তেমনি বসন্তের হাওয়ায় মিশে ভালোবাসার উত্তাপে পাঞ্জাবি আর ফতুয়ায় তরুণরাও একাকার হয়ে যাবে।

ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদরি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদ দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেন্টাইন তাঁর আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে পালন শুরু করেন। ভ্যালেন্টাইনস ডে সর্বজনীন হয়ে ওঠে আরও পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর