শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাত্তা দিচ্ছে না সিন্ডিকেট

♦ শুল্ক কমানোর পরও কমেনি চিনির দাম ♦ অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম ♦ ৬০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না কাঁচা সবজি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পাত্তা দিচ্ছে না সিন্ডিকেট

আগে থেকেই উদ্যোগ নেওয়ার কারণে এবার রমজানে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দোকানে সব ধরনের পণ্যও মিলছে। সারা দেশে সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও রোজার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চিনির শুল্ক কমানো হলেও পণ্যটির দাম এক টাকাও কমেনি। কারণ ছাড়াই পোলট্রি মুরগির দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিচ্ছে; তবে এসবে পাত্তা দিচ্ছে না বাজার সিন্ডিকেট।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চিনির দাম কমানোর জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করতে এনবিআরকে সুপারিশ করেছিলাম। এখন এনবিআর চেয়ারম্যান আমার কাছে জানতে চাইছেন- কেন চিনির দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা যদি প্রতিশ্রুতি দিয়েও দাম না কমান, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ভাবতে হবে। সচিব জানান, চিনি ব্যবসায়ীরা সাত দিনের সময় নিয়েছেন। কেজিপ্রতি ৫ টাকা করে দাম কমানোর বিষয়েও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আমরা এ সাত দিন দেখে তারপর ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তারপরও কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছে। এটি অন্যায়। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব জিনিসের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু গত বছরের চেয়ে কোনো কোনো জিনিসের দাম শতভাগ বেড়েছে। পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ যারা কার্ড করতে পেরেছেন, তারা টিসিবি ডিলারের দোকানে লাইন দিচ্ছেন। যাদের কার্ড নেই, তারা প্রয়োজনের অর্ধেক বা তারও কম পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিদফতর, টিসিবিসহ সরকারের সংস্থাগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরপরও থেমে নেই বাজার কারসাজি। কিছু পণ্যের দাম সহনীয় থাকলেও রোজার আগেই পরিকল্পনা করে বাড়ানো হয়েছে সুনির্দ্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম। পোলট্রি মুরগির দাম গত দুই মাসে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু রোজা শুরু হওয়ার কারণে ডিমের ডজন ২৪ ঘণ্টায় বাড়িয়ে ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা রাখা হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। লাল চিনি মিলছে দেড় শ টাকা কেজিতে। খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া ফলের বাজারে আইটেমপ্রতি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। চিনি, ছোলা, বেসন, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংসসহ সব ধরনের মাছ, মাংসের দাম রমজানের আগেই নাগালছাড়া। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে কাঁচা সবজির দামও। এখন ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি মিলছে না। বরং করলা, লতার মতো সবজিও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর ডিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেবুর হালির দাম। বাজারে এখন প্রতি ডজন লেবুর দাম ১২০ টাকা। এদিকে অযৌক্তিকভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ানোর কারণে গতকাল চারটি কোম্পানিকে তলব করেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এরপর কোম্পানিগুলো খামার পর্যায়ে নির্ধারিত দামে মুরগি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এ প্রতিশ্রুতি পোলট্রি ব্যবসায়ীরা রক্ষা করবেন কি-না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, কাজী ফার্ম, সিপি, প্যারাগন ও আফতাব ফার্মের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আজ থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করবেন। এতে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কম দামে কিনতে পারবেন ভোক্তারা।

ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার

শুধু মনিটরিং করে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়

ভোক্তাকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে

 

সর্বশেষ খবর