শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুবাইয়ে গরুর মাংস ৫০০ টাকা আমাদের কেন ৭৫০

এফবিসিসিআই সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বাজারে গরুর মাংসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেছেন, আমদানি করার পরও দুবাইয়ে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকা। তাহলে আমাদের কেন ৭৫০ টাকায় কিনতে হবে? এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দাম কমাতে সরকার আমদানির উদ্যোগ নেবে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই বোর্ড রুমে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, বাজার পরিস্থিতি ও বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্রয়লার মুরগি এখন ২৮০ টাকা। এখন সরকার যদি মনে করে আমদানি করলে দাম কম পড়বে, তাহলে আমদানি করবে। তিনি বলেন, দুবাইয়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা। কিন্তু দুবাইয়ে গরু উৎপাদন হয় না। তারা আমদানি করে যদি ৫০০ টাকায় দিতে পারে তাহলে আমরা উৎপাদন করে কেন এত দামে কিনব।

এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন যদি তারা সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই। মো. জসিম উদ্দিন জানান, এবার চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আমদানি করা হয়েছে। শুধু খেজুর নয়, চিনি ও ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য পণ্যও পর্যাপ্ত রয়েছে।

রমজানে তেল, চিনি, ছোলাসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী, আমদানিকারক এবং বাজার কমিটিগুলোকে আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে ইতোমধ্যে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

এক্ষেত্রে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। ভোক্তাদের যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটা থেকে বিরত থাকতে হবে, ব্যবসায়ীদেরও অতি মুনাফা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজায় সরকার বাজার মনিটরিংয়ে কঠোর রয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বেশি মূল্য রাখা হলেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না- কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক বা কাউকে আটক করা হোক। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। তবে সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আশা করব, আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না। কোনো অসাধু ব্যবসায়ীর দায় এফবিসিসিআই নেবে না বলেও সভায় জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, এম এ মোমেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন ও নিত্যপণ্যের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ বাজার কমিটির সভাপতিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এফবিসিসিআইর ডাকে সাড়া দেননি মুরগি ব্যবসায়ীরা : গতকালের বৈঠকে মুরগির খামারি, করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীদের ডাকা হলেও তারা সাড়া দেননি। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কয়েক দিন ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম অনেক বেড়েছে। আমরা আজ এ নিয়ে মুরগি ব্যবসায়ীদের ডেকেছিলাম, তারা আসেননি। এর আগে দাম বাড়ল। তখন ধরপাকড় করা হলে দাম কমে আসে। এখন রমজান সামনে রেখে আবার মুরগির দাম বাড়ানো হলো কেন? এভাবে সমাধান আসবে না। আমরা সরকারের কাছে আমদানি উন্মুক্ত করে দিতে বলব। আগামী দু-তিন মাস আমদানি করা হোক। এ ছাড়া আমরা আর কোনো পথ দেখছি না। এফবিসিসিআইর আরেকজন পরিচালক জানান, দুপুর দেড়টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে ডাকা হয়েছে মুরগি ব্যবসায়ী চারটি বড় কোম্পানিকে। এ কারণে হয়তো তারা এখানে আসেননি। তবে এফবিসিসিআইর সভায় মুরগি ব্যবসায়ীদের কোনো প্রতিনিধিকেও দেখা যায়নি।

সভায় সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ বলেন, আমাদের কাছে চিনি ভোজ্য তেলের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে রোজায় কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআইর সহসভাপতি এম এ মোমেন, মো. আমিন হেলালী, পরিচালক এম জি আর নাসির মজুমদার, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, আবু হোসেন ভূঁইয়া রানু, আক্কাস মাহমুদ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতা।

সর্বশেষ খবর