ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রায় প্রতিদিনই নানা দাবি নিয়ে রাজধানীতে মিছিল, বিক্ষোভ, আলটিমেটাম দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন পেশাজীবী, চাকরিপ্রত্যাশী ও স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। পরিস্থিতি দেখে মনে হতে পারে এ যেন দাবি আদায়ের মৌসুম চলছে। প্রায় প্রতিদিনই সড়কে থাকছেন আন্দোলনকারীরা। কখনো রাস্তা বন্ধ করে, কখনো সচিবালয়ে ঢুকে কিংবা ঘেরাও করে চলছে বিক্ষোভ।
এতে সাধারণ মানুষ পড়ছেন বিপত্তিতে। অনেকেই বলছেন, যারা গত ১৫ বছরে টুঁশব্দটিও করেননি, তারাও এখন দাবিদাওয়া নিয়ে সরব। এদের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন কভিডে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা। মৌখিক পরীক্ষা ইচ্ছাকৃতভাবে স্থগিত করার অভিযোগে পেট্রোবাংলার সামনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এতে ভিতরে আটকা পড়েন শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী। অন্যদিকে লটারি নয়, মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে ভর্তির দাবি করে আসাদগেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সমাধান না হলে আবারও আন্দোলনের আলটিমেটাম দিয়ে সরে গেছেন শিক্ষার্থীরা।
স্থায়ীকরণের দাবিতে কভিডে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের বিক্ষোভ : চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন কভিডে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁদের দাবি, মরণঘাতী কভিডের সময় জীবনঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে অবহেলা-বঞ্চনায় দিনাতিপাত করছেন ১ হাজার ৪ কর্মী। একদিকে চাকরি হারানোর ভয়, অন্যদিকে চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ায় নতুন কোনো চাকরিতে যোগদানেরও সুযোগ না থাকায় সংসার নিয়ে পথে বসার উপক্রম এসব কর্মীর। এ অবস্থায় শর্তহীনভাবে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর। গতকাল সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কভিডের সময় আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এ বিক্ষোভ চলে।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে সড়ক ছাড়লেন রেসিডেন্সিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা : লটারি নয়, মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে ভর্তির দাবিতে গতকাল সকাল ১০টার পর আসাদগেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধকারীরা রাস্তা ছেড়ে যান। তারা জানান, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীদের দাবি, লটারির ভিত্তিতে ভর্তির প্রথা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ কারণে মেধা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরাও কলেজটিতে পড়ার সুযোগ হারাচ্ছেন।
পেট্রোবাংলা অবরুদ্ধ, ভিতরে আটকা পড়েন শত শত কর্মকর্তা : মৌখিক পরীক্ষা ইচ্ছাকৃতভাবে স্থগিত করার অভিযোগে পেট্রোবাংলার সামনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত পেট্রোবাংলা অফিসের প্রধান ফটকের সামনে বসে আন্দোলন করেন তাঁরা। এতে ভবনের ভিতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সংস্থাটির শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অবরোধ শেষে তাঁরাও আলটিমেটাম দিয়ে সরে যান।