ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বামদের নির্বাচনি জোট আসছে নভেম্বরে। ‘বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, উদারনৈতিক ও স্বাধীনতার পক্ষের’ রাজনৈতিক দলগুলোর জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন ভিতরে ভিতরে আলোচনা এগিয়ে চলছে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হলেই জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে। বাম দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
নতুন এ জোট গঠনের উদ্দেশ্য ও জোট সম্পর্কে নেতারা বলছেন, গণ আন্দোলনের যে চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, পুঁজিবাদী, বুর্জোয়া, সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলগুলো দিয়ে এ লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। সেখানে জনগণের সামনে একটি বিকল্প রাজনৈতিক জোট দরকার। যে জোট এ চেতনাগুলো ধারণ করবে। এ জোট আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন নিজেদের ভিতরে আলাপ-আলোচনা করছি। কাজ এগিয়ে চলছে। ভোটের তফসিল ঘোষণা হলেই আমরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।’ তিনি বলেন, ‘বাম, গণতান্ত্রিক দলগুলোর বৃহৎ একটি বলয় আমরা গড়ে তুলতে চাই। নির্বাচন সামনে রেখে শাসক শ্রেণির দলগুলোর বিপরীতে বিকল্প একটি রাজনৈতিক জোট প্রয়োজন। এ নিয়ে আমাদের দুই-একটি বৈঠক হয়েছে। পুঁজিবাদ, সুবিধাবাদ টিকিয়ে রেখে গণ আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়ন হবে না। এজন্যই আমরা বাম, গণতান্ত্রিক এবং যারা পুঁজিবাদ-সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে তাদের নিয়ে একটি জোট করতে চাই।’
ভোটের তফসিল হলেই আমরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব
বজলুর রশিদ ফিরোজ
সাধারণ সম্পাদক, বাসদ
সূত্রমতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোট হওয়ার প্রস্তুতি আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। জানা গেছে, জোটে সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলো থাকছে। থাকবে বাংলাদেশ জাসদও। আলোচনা চলছে গণফোরামের সঙ্গে। এ জোটে আরও আসতে পারে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম জোটের দলগুলোও। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, ঐক্য ন্যাপ, পাহাড়ি সংগঠন, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের যেসব সংগঠন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে নেতৃস্থানীয় যাঁরা আছেন, তাঁদেরও এ জোটে টানার প্রক্রিয়া আছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো দল ও জোটের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে একাধিক আলোচনা হয়েছে। অচিরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হবে বলে নেতারা জানান।
ওই নেতারা আরও বলছেন, এ জোট গঠন হলে সেটি নির্বাচনি জোটে রূপ দেওয়া হবে। এখন বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এরপর আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। এদিকে নতুন এ জোটের পাশাপাশি সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক জোট নামে যে প্ল্যাটফর্ম রয়েছে বা ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম জোট, এ জোটগুলোও আলাদা যেভাবে আছে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে থাকতে পারবে। এ জোটগুলোতে যে দল রয়েছে সেগুলো নতুন জোটেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুই দলের মেরূকরণের বাইরে আমরা গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিকল্প একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে কোনো কোনো দলের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। আবার কোনো কোনো দল ও জোটের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে কর্মসূচিও পালন করেছি। আগামীতে আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে নতুন একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া আমরা তাড়াতাড়িই শুরু করব। সেখানে দ্বিদলীয় ধারার বাইরে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক দল ও সংগঠনগুলো, এমনকি ব্যক্তিকেও ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা থাকবে।’ বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘বৃহৎ একটি জোট গঠনের উদ্যোগ আছে। আমরা আলোচনা শুরু করেছি। সিপিবি, বাসদ, গণফোরামের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, উদারনৈতিক দল নিয়ে এ ধরনের একটি জোট গঠনের চেষ্টা চলছে।’