নাটোরে হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিনে প্রায় দেড় শতাধিক ডায়রিয়া রোগী নাটোর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এসবের মধ্যে শিশু ও নারী ৬৮ জন, ৭৯ জন পুরুষ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা রয়েছে।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে ১২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, পানিবাহী থেকে এ ডায়রিয়া রোগ ছড়িয়েছে।
বুধবার দুপুরে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বিষয়টি জানার পর নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন। এসময় সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মুক্তাদির আরেফিন, সদরের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মাহবুব হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক রোগীদের শারীরিক খোঁজ-খবর নেন।
অপরদিকে, এ ঘটনায় ডা. রবিউল আওয়ালকে প্রধান করে (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) ৫ সদস্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন-ডা. আবু সাইদ, ডা. সোহরাব হোসেন, ডা. নাজমা খাতুন ও ডা. শ্রাবন্তি।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও রোগীর স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার রাতে শহরের ঝাউতলা, কাঠালবাড়িয়া, উলুপুরসহ ও আশপাশের কয়েকটি এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানা উপসর্গ দেখা দেয়। তৎক্ষণিকভাবে রাতেই ওই এলাকার ৩০-৩৫ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে ডায়রিয়ায় ৬৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্য পুরুষ ৬৬, মহিলা ৫৫ ও শিশু ২৬ জন রয়েছে। এরই মধ্য কিছু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালে ১২৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন।
স্থানীয় পৌরসভার বাসিন্দা বলছেন, শহরের ঝাউতলা, উলুপুর, আদর্শ গুচ্ছগ্রাম, উত্তর চৌকিরপাড়সহ এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এবং অনেক স্থান নিচু, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নাজুক। ড্রেনের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে অনেক বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রতি বর্ষাতেই এসব এলাকায় বাড়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মাহবুব হোসেন বলেন, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ খোঁজা ও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়াসহ পানি ফুটিয়ে খাওয়ার তাদের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণও করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মুক্তাদির আরেফিন বলেন, শহরের ঝাউতলা এলাকার কিছু ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৬৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এরপর দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ১৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, পানিবাহী থেকে এ ডায়রিয়া রোগ ছড়িয়েছে। আজকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ মেডিসিন সরবারহ করা হবে। হাসপাতালে আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবারহ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই