বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে ঝরে গেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্তত ৩১ শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের প্রাণ। এ ছাড়া আগুনে দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাতরাচ্ছেন আরও প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কেউ কেউ মুমূর্ষু অবস্থায় জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন। এমন দুর্ঘটনার পর শোক-আতঙ্কে নিস্তব্ধ অবস্থা বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানটিতে। গতকাল সকাল থেকেই তালাবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গেট। কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার পর শ্রেণি কার্যক্রম চালু না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকতে পারেনি ছাত্রছাত্রীরা। সাধারণ মানুষকেও প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকের সামনে ছিল শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ উৎসুক জনতার ভিড়। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, প্রধান ফটক ভিতর থেকে আটকে দেওয়া হয়েছে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর আগে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আর সরকারের দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবকে দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় গতকাল ঢুকতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির গেটে কয়েকজন বর্তমান শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সাবেক শিক্ষার্থী রোকনুল ইসলাম জানান, কোচিং ক্লাস চলাকালীন শ্রেণিকক্ষে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় শিক্ষকের পাশাপাশি মাইলস্টোনের অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। কিন্তু কোথাও নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে নানা গুজব আর সংশয় বাড়ছে। দুর্ঘটনার দিন ক্যাম্পাসেই ছিলেন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আহমদ সাফওয়ান। সে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলে, ‘নিয়মিত ক্লাস শেষ হওয়ার পর দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে কোচিং ক্লাস করতে হয়। আর এই ক্লাসের বিনিময়ে মাসে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। এ টাকার পরিমাণ শ্রেণিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাইলস্টোনের এক অভিভাবক জানান, মাইলস্টোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন এ অভিভাবক। তিনি আরও বলেন, ‘যদিও বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি দুর্ঘটনা। আর দুর্ঘটনা আগে থেকে জানা যায় না। তবুও সেদিন কোচিং ক্লাসের আয়োজন না থাকলে এত ছাত্র-ছাত্রীকে প্রাণ হারাতে হতো না।’
এদিকে, বিমান বিধ্বস্তে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক কর্মচারী ও অভিভাবক আহত-নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্র।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২৭ জুলাই (রবিবার) থেকে সীমিত পরিসরে ক্লাস চালু হবে। এ দিন কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে চালু করা হবে অন্যান্য শ্রেণির কার্যক্রম।
গত রাতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ দপ্তর সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্রটি জানায়, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বস্তি এবং একাডেমিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ধীরে ধীরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।