বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, প্রাবন্ধিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার ৮৯ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে নেত্রকোনাসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন যতীন সরকার। অনেক দিন ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়ি আসার পর গত সপ্তাহে আবারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। অধ্যাপক যতীন সরকার স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বরেণ্য এ শিক্ষাবিদের প্র?য়াণে লেখক সমাজ, শিক্ষক সমাজসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
প্রগতিশীল এ চিন্তাবিদ ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৬০-এর দশক থেকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের সব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, খালেকদাদ সাহিত্য পুরস্কার ও হিমু পাঠক আড্ডা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অবসর গ্রহণের পর থেকে নেত্রকোনা শহরের সাতপাই বানপ্রস্থ বাসভবনে তিনি বসবাস করতেন। তিনি প্রথম বই লিখেছিলেন ৫০ বছর বয়সে এবং শেষ বই লেখেন ৮০ বছর বয়সে। গুণী এই লেখক আজীবন বই পড়েছেন। তিনি জীবদ্দশায় একটি সাক্ষাৎকারে বলে গেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে ছাড়িয়ে যেতে চান না, তাই ৮০ বছর বয়সের পর আর লেখেননি।
অধ্যাপক যতীন সরকারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ময়মনসিংহ থেকে লাশ নেত্রকোনা স্থানীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। পরে শহরের বড় শ্মশানে অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
বিভিন্ন মহলের শোক : অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘যতীন সরকারের মৃত্যু বাঙালি জাতির চিন্তাজগতে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তাধারার অন্যতম উজ্জ্বল বাতিঘর ছিলেন তিনি।’ এদিকে যতীন সরকারের মৃত্যুতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়নসহ অনেক সংগঠন শোক জানিয়েছে। শোক বিবৃতিতে তারা বলে, অধ্যাপক যতীন সরকার বাংলাদেশের শিক্ষা আন্দোলনে অনিবার্য অপরিহার্য নাম। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে জাতি সত্যিকার অর্থে একজন দেশপ্রেমিক শিক্ষক ও সমাজ সংস্কারক হারাল।