প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের গতি ত্বরান্বিত করতে পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শামসুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে এ কথা জনান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করতে অর্থনৈতিক দিক হতে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। ফাস্ট ট্রাকভুক্ত প্রকল্প ছয়টি হলো- পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা মাস ট্রাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) উন্নয়ন মেট্রো রেল প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর-কক্সবাজার এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প।’
তিনি বলেন, এ ছাড়া আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো- ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের দিকে উন্নত সুসভ্য দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা, ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যরেখার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াট থেকে উন্নীত করে ২৪ হাজার মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের সঠিক রফতানি নীতি এবং তার বাস্তব প্রয়োগের ফলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করতে সক্ষম হয়েছে। যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র সাড়ে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
মো. ছলিম উদ্দীন তরফদারের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০১৪ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে নাটোরে ৫২ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে মোট ছয় হাজার ৮৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ সমস্ত কেন্দ্র ২০১৪ সাল হতে ২০১৮ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ৫ হাজার ৬৮৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যেগুলো ধারাবাহিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হবে। এলএনজি হতে আনোয়ারা, যশোর ও মহেশখালীতে মোট ৩ হাজার মেগাওয়াট এবং নিউক্লিয়ার হতে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিকল্পনাধীন রয়েছে। বর্তমানে ভারত হতে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার আলোচনা চলছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভূটান ও মায়ানমার হতে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
মো. আফসারুল আমীনের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা মহাজোট সরকারেরই ছিল কিন্তু বন্দরটি পিপিপি বা জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বিধায় বিষয়টি একনেকে উত্থাপন করা হয়নি।’