অপহরণের পর উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেছেন, আমি ব্যবসা করি। আমার কোনো শত্রু নেই। আমার কাছে আগে কেউ কখনও চাঁদা দাবি করেনি। অপহরণের পর অপহরণকারীরা আমার সঙ্গে কথাও বলেনি।
সাভারের নবীনগর এলাকার র্যাব-৪ এর কার্যালয়ে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে এক প্রেস বিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। র্যাব-৪ এ প্রেস বিফিংয়ের আয়োজন করে। এ সময় র্যাবের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস বিফ্রিংয়ে সাইফুল বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে সানারপার বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এর পর মাইক্রোবাসের সিটের নিচে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে গাড়ি চালানো হয়। এরপর ৫ থেকে ৭ মিনিট পরেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফেরে তখন বুঝতে পারি আমার চোখ বাধা এবং আমি কাঁচা মেঝের একটি ঘরে বসে আছি। এরপর একটি লোক আমাকে একটি পাউরুটি দিয়ে যায়। আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এক লোক লাঠি দিয়ে আমার পায়ে ৫/৬টি বাড়ি মারে। আমি অসুস্থ্ হয়ে পড়ি। রাতে তারা আমাকে একটি গাড়িতে উঠতে বলে। পরে স্মৃতি সৌধের সামনে এসে লাথি মেরে আমাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের তৎপরতার অংশ হিসেবে আমরা আনুমানিক একটা লোকেশন পাই যে, তিনি সম্ভবত ঢাকা শহরের পশ্চিমে কোনো একটি জায়গায় রয়েছেন। অপহরণকারীরা এ জায়গায় থেকেই তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছে। পরে র্যাবের গোয়েন্দা ও একাধিক ব্যাটালিয়ন তৎপরতা শুরু করে।
প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, একাধিক অপরাধী সাইফুলকে অপহরণ করেছিল। কিন্তু তিনি কারও পরিচয় দিতে পারেননি বলে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি। তার গায়ে কিছুটা আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাতে সাইফুল তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এক আত্নীয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ৪/৫ জন লোক তাকে ধরে পাজাকোলা করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আমরা ধারণা করছি ওনার পূর্বপরিচিত কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
র্যাব অপহরণের ঘটনাগুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরাধী ধরার ব্যাপারে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। এ জন্য আমরা সাইফুলের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু জেনেছি। আমাদের আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ বাকি আছে। এর পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ জানান, সাইফুল ইসলাম অপহরণের ঘটনায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে শুক্রবার রাতে নূরজাহান নামের এক মহিলাকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সাইফুল ইসলামকে নারায়ণগঞ্জে এনে অপহরণের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সানারপার এলাকা থেকে অপহৃত হন ব্যবসায়ী সৈয়দ সাইফুল ইসলাম। শুক্রবার সকালে তার মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের রাস্তা থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ও র্যাব।