আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্টের ঘটনায় যেভাবে জিয়া জড়িত তেমনি ২১ আগস্টের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং তার ছেলে ও মন্ত্রীসভার সদস্যরা জড়িত। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সেদিনের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন বক্তৃতার জন্য দাঁড়ালাম, পাশেই দাঁড়ালেন হানিফ ভাই। সবাই চারপাশ থেকে মানববর্ম তৈরি করে আমাকে রক্ষা করলেন। আমার মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামত হচ্ছে। এতোগুলো গ্রেনেড হামলা হলো, ছিলো না প্রতিকারের ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, আমার চশমাটা হারিয়ে গেল, আমি ভাল করে দেখতেও পারছিলাম না। গাড়িতে উঠতে যাবো এমন সময় গুলি চালানো হলো। গুলিতে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী মাহবুব মারা যায়। আইভী রহমানসহ ২২জন নেতা-কর্মী মারা যায়। মানুষ যখন পড়ে আছে তখনও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। সাধারণত এরকম ঘটনা ঘটলে জায়গাটি কর্ডন করে রাখা হয়, আলামত নষ্ট যেনো না হয় তার চেষ্টা করা হয়। এখানে তার কিছুই করা হয়নি।
শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আহতদের যারা সেদিন উদ্ধার করতে এসেছিলেন তাদের ওপরও পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। এই বর্বরোচিত আক্রমণের সব চিহ্ন সেই সময়ের সরকার মুছে ফেলে। হামলার আলামতগুলো যাতে না থাকে সেজন্য সকল আলামত ধ্বংস করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব এর যারা কাজ করতেন, তারা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। পিজিতে আহত হয়ে অনেকে চিকিৎসার জন্য যায়, কিন্তু সেখানেও কাউকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগ নেতারা সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের আমিসহ ৫-৬ জন সংসদ সদস্য আহত হয়েছিলাম। এ নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপি নেত্রী সেটি করতে দেননি। বরং বলা হলো, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে বিস্ফোরিত করেছি।
এর আগে বিকাল সোয়া পাঁচটায় শেখ হাসিনা সেখানে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পাঠ করেন।
এ সময় সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ ওয়ার্ক পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রমুখ।