মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির ও মুক্তিযুদ্ধকালীন আলবদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রাণ ভিক্ষার আবেদন না করায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ফাঁসি কার্যকরে রাত ১০টা ৬ মিনিটে সিভিল সার্জন আব্দুল কাদের মৃধা এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার মসজিদের পেশ ঈমাম মাওলানা মনির হোসেন কারাগারে প্রবেশ করেন। এরপর সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে প্রবেশ করেন। এরপর ঢাকা মেট্টোপলিট্রন পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি হিসেবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা শেখ নাজমুল আলম প্রবেশ করেন।
নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকাল থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সড়কে গাড়ি চলাচল। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। কারাফটকের সামনে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও অবস্থান নেয়। সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও উপস্থিতি দেখা যায়। এদিন দুপুরেই জল্লাদ রাজুকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সন্ধ্যার পর কারা কর্তৃপক্ষের ডাকে নিজামীর সঙ্গে শেষ দেখা করেন পরিবারের সদস্যরা।
গত বৃহস্পতিবার নিজামীর রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সোমবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান সৈয়দ সিদ্দিকীর স্বাক্ষরের পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। সন্ধ্যায় সেই রায় কারাগারে পৌঁছালে রাতেই মিজামীকে পড়ে শোনানো হয়।
রায় খারিজের পর নিজামীর সামনে ছিল শুধু দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। তিনি প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় আজই ফাঁসি কার্যকর করা হলো।
১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিনটি অপরাধের দায়ে গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এর আগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীকে চারটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। আপিল বিভাগ তিনটি অপরাধে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে। আপিল বিভাগের এই রায়ের বিরুদ্ধে নিজামী রিভিউ পিটিশিন করলে সেটিও খারিজ করে দেওয়া হয়।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ