নিজামীর ফাঁসি আজ (মঙ্গলবার) হবে কিনা, তিনি ক্ষমা চাইলেন কিনা, ক্ষমা চাইলে কী হবে, না চাইলে কী হবে- এমন নানা প্রশ্ন দিনভর ঘুরছিল জনমনে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে চলছিল সরাসরি সম্প্রচার। কোটি কোটি স্বাধীনতাকামী মানুষ উৎসুক হয়ে প্রতীক্ষা করছিলেন একটি সংবাদের। নানা ঘটনাপ্রবাহের পর অবশেষে বুধবার প্রথম প্রহরে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় জামায়াতের আমির ও একাত্তরে বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর।
নিচে সংক্ষিপ্তাকারে ফাঁসির দিনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো:
সকাল ৮টা ৩০ মিনিট: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একে একে প্রবেশ করতে থাকেন কারাগারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা। এদের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল, সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেছার আলমসহ বেশ কয়েকজন।
সকাল ৯টা: ঊর্ধ্বতনরা ফাঁসির মঞ্চ পরিদর্শন করেন এবং কার্যকরের বিষয়ে কারাগারে একটি বৈঠক করেন।
বিকেল ৩টা: নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের জন্য কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয় জল্লাদ রাজুকে। তিনি নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করেন।
বিকেল ৫টা: ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে কারা অধিদফতরে আবারো বৈঠকে বসেন ঊর্ধ্বতনরা।
বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিট: কারা অধিদফতরের সভা শেষে কারাগারে ফিরে আসেন জেলার ও জেল সুপাররা।
বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট: কারা ফটকে ৫ টনের একটি ট্রাকে করে আনা হয় অসংখ্যক কাটাতারের বেড়া। কারাগারের নিরাপত্তা দ্বিগুণ করা হয়।
সন্ধ্যা ৭টা: কারাগারের তিনদিকের সড়ক কাটাতারের বেড়া, ব্যারিকেড ও বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কারাগার থেকে চাঁনখারপুল, চকবাজার ও বংশাল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করা হয় কারাগারের আশপাশের স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানপাট।
সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট: কারাগারে অতিরিক্ত র্যাব-পুলিশ মোতায়েন। উপস্থিত ছিলেন মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা।
রাত ৭টা ৪৮ মিনিট: কারাগারে প্রবেশ করেন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মফিজউদ্দিন আহমেদ। নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের সময় মঞ্চের পাশে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
রাত ৭টা ৫৪ মিনিট: শেষবারের মতো নিজামীকে দেখতে কারাগারে আসেন তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা। এসময় ২৬ জন কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রাত ৯টা ৩০ মিনিট: নিজামীর পরিবারের সদস্যরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।
রাত ৯টা ৪৫ মিনিট: কারাগারে প্রবেশ করেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুকুরপাড় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মনির হোসেন। তিনি নিজামীকে তওবা ও কালেমা পড়ান।
রাত ৯টা ৫০ মিনিট: কারাগারে প্রবেশ করেন সিভিল সার্জন আবদুল খালেক মৃধা। নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর তিনিই তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
রাত ১০টা ৮ মিনিট: ২০ জন সশস্ত্র কারারক্ষী কারাগারে প্রবেশ করে। তারা ফাঁসির মঞ্চের চারিদিক ঘিরে রাখে।
রাত ১০টা ১২ মিনিট: ঢাকা জেলার প্রশাসক (ডিসি) মো. সালাউদ্দিন কারাগারে প্রবেশ করেন। তিনি ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাত ১০টা ২০ মিনিট: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধি হিসেবে কারাগারে প্রবেশ করেন ডিবির উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম।
রাত ১০টা ৫৬ মিনিট: অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হোসেন কারাগারে প্রবেশ করেন।
রাত ১২টা ১০ মিনিট: অবশেষে জল্লাদ রাজুর নেতৃত্বে ৫ জন সহযোগী জল্লাদকে নিয়ে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
রাত ১২টা ২০ মিনিট: কারাগারে প্রবেশ করে ২টি অ্যাম্বুলেন্স।
দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিট: নিজামীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স র্যাব-পুলিশের প্রোটকলে পাবনার উদ্দেশে রওনা হয়।
ফাঁসি কার্যকরের সময় নিজামী স্বাভাবিক ছিলেন বলে জানান সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ