সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, গত দশ বছরে দেশ থেকে ৪০ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরেই পাচার হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে রবিবার সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, দেশের টাকা মালয়েশিয়া, আমেরিকা, কানাডা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, পানামায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ টাকা ফেরত আসবে না। এ টাকা যদি বিনা বাক্যে ব্যয়, বিনা অজুহাতে আবাসন খাতে, পর্যটন খাতে, শেয়ার মার্কেটে, শিল্প খাতে, মৎস্য খাতে, হাঁস-মুরগি খামারে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে কোন কথা থাকতো না। কিন্তু এখানে সুযোগ দেওয়া হয় না। এনবিআর এমনভাবে ব্যবস্থা করে যে, আয় অল্প দেখায়, বাকি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। বিরোধী দলের এ নেতা বলেন, গত ৭ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অর্থ কেলেঙ্কারিতে কেউ শাস্তি পায়নি, একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। চলতি বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা, মামলা হয়েছে কিন্তু কেউ চিহ্নিত হয়নি। ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে লুট হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা, মামলা নেই, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ১১০০ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ডেসটিনি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, সাজা হয়নি। বিচারাধীন আছে। অগ্রণী ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা লুটপাট। শত শত, হাজার কোটি টাকা লুটপাট হবে আর আমরা এখানে বসে বসে তামাশা দেখবো, চেয়ে চেয়ে থাকবো, এটা হয় না। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলো, তানভীর, জেসমিন চৌধুরীর সাজা হয়নি, বিচারাধীন রয়েছে। তিনি সোনালী ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংক বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ারও দাবি জানান।
ফিরোজ রশিদ বলেন, জাতি জানতে চায় সাগরচুরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? অর্থমন্ত্রী নিজেই এ সংসদে দাঁড়িয়ে স্বীকার করেছেন, ব্যাংকিংখাতে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হলে সর্বাগ্রে আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা-লুণ্ঠন বন্ধ করতে হবে। পুঁজিবাজারকে রক্ষা করতে হবে। অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তা মোটেই বিশাল নয়। কিন্তু আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে এ বাজেট বাস্তবান সম্ভব না।
বাজেট আলোচনায় আরো অংশ নেন উপাধক্ষ্য আবদুশ শহিদ, কামাল আহমেদ মজুমদার, আবদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল, কাজী রোজী, এ কেএম ফজলুল হক।
বিডি-প্রতিদিন/ ১২ জুন, ২০১৬/ আফরোজ