ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১০ লঞ্চের তৃতীয় তলার স্টাফ কেবিন থেকে এক গৃহবধূর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্বামীসহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে লঞ্চের যাত্রী ও স্টাফরা। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে চলন্ত লঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম লিমা আক্তার মিনা। তার বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। আটক স্বামীর নাম আনিচুর রহমান। তার বাড়ি শরীয়তপুরের গোশাইর হাটে। মিনা ঢাকার অদূরের সাভার এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করতো, আর তার স্বামী আনিচ সাভারের একটি জুতার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। আটক অপর দু'জন হলেন আনিচের চাচাতো ভাই কালাম ও তার বন্ধু নওগাঁর তুষার।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় আনিচ ও মিনা এমভি পারাবত-১০ লঞ্চের তৃতীয় তলার স্টাফ কেবিন ভাড়া নেয়। রাত ২টার দিকে যাত্রী ও লঞ্চের স্টাফরা চিৎকার ও ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে স্টাফ কেবিনে গিয়ে মিনাকে গলা কাটা অবস্থায় দেখতে পায়। তখন কেবিনে থাকা কালাম ও তুষার চাকু নিয়ে কোপাতে যাত্রীদের তেড়ে যায়। তারা কেবিনের বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলে ভেতরে আটকা পড়ে খুনিরা। পরে স্বামী আনিচকে লঞ্চের ছাদ থেকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, মোবাইল ফোনে মিনার সাথে আনিচের পরিচয় হয়। গত ঈদুল ফিতরের ৪-৫ দিন পর তারা বিয়ে করে। আনিচের দাবি, তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মিনা তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। এরপর বিষয়টি প্রতিকারের জন্য চাচাতো ভাই কালামকে জানায় আনিচ। কালামের পরামর্শ অনুসারে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১০ লঞ্চের স্টাফ কেবিনে ওঠে মিনা ও আনিচ। গভীর রাতে আনিচ কেবিন থেকে বেরিয়ে চাচাতো ভাই কালাম ও তুষারকে প্রবেশ করায়। তারা কেবিনের মধ্যে ছুরি দিয়ে গলা কেটে মিনাকে হত্যা করে।
আটক কালাম জানায়, আনিচ ও মিনার দাম্পত্য জীবন ভালো চলছিলো না। তাই স্ত্রীকে হত্যার জন্য তাদের সাথে ২০ হাজার টাকার চুক্তি করে। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করে এবং বাকী টাকা হত্যাকাণ্ডের পর পরিশোধ করার কথা।
মঙ্গলবার ভোরে লঞ্চটি বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছলে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। আটক ৩ জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেছে।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ্ মো. আওলাদ হোসেন জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আটক ৩ জনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। নিহতের পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এসে পৌঁছলেই হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ আগস্ট, ২০১৬/সালাহ উদ্দিন/মাহবুব