আয়যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর বাধ্যতামূলক করারোপের প্রস্তাব জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘আয়যোগ্য প্রতিটি মানুষের কর দেওয়া উচিত। ৫, ১০ বা ২০ টাকা যা-ই হোক না কেন, তা দিয়ে হলেও দেশের উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। এটা করতে পারলে দেশে কর সংস্কৃতি তৈরি হবে, কর বিষয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি হবে।’
বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে ‘পে-রোল ট্যাক্স ও করনেট সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পে-রোল ট্যাক্স বা বেতন থেকে অগ্রিম কর কেটে রাখা বিষয়ক এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর সদস্য জিয়াউদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন।
বাধ্যতামূলক করের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বাধ্যতামূলক করারোপের বিষয়টি নাগরিক সমাজসহ সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। কারণ কর প্রদান গর্বের বিষয়। যিনি কর দিচ্ছেন, তিনি দেশের উন্নয়নের অংশীদার। এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কর প্রদানে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যাদের আয় নেই বা যারা অন্যের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এ কর বাধ্যতামূলক নয়। বাকি সবাইকে এ করের আওতায় আনা যায় কি-না, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কর পরিশোধের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা করের আওতায় রয়েছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের বেতন পরিশোধের সময় ট্যাক্স কেটে রাখা উচিত। এটা করলে কর আদায়ে সুবিধা হয়। দেশের সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এটা কার্যকর করতে পারলে পে-রোল ট্যাক্সের আওতা বাড়বে। একই সঙ্গে কর ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে পে-রোল ট্যাক্স এখনও মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। অথচ বেসরকারি কর্মীদের অবদান এখানে বেশি থাকার কথা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এর আওতা বাড়াতেই হবে।
চলতি অর্থবছর ৩ লাখ করদাতা বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুহিত বলেন, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় এই লক্ষ্যমাত্রা অনেক কম। এটা আরো বেশি হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে কর প্রদান করেন মাত্র ১২ লাখ। এটা অত্যন্ত লজ্জাকর। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর করদাতার সংখ্যা ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে করযোগ্য আয় থাকা স্বত্ত্বেও অনেকেই কর দেন না। এ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দেশে করবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের দেশের স্বার্থে পে-রোল ট্যাক্স ব্যবস্থা চালু করার আহ্বান জানান।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এনায়েত করিম