সম্প্রতি মিয়ানমারে সহিংসতার ঘটনায় কক্সবাজারের দেড় লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তে বিস্ফোরণ, আগুন, গোলাগুলির শব্দে মিয়ানমারের টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সারা বিশ্বে। তারপরও রোহিঙ্গা নিয়ে এত নানা ঘটনার মধ্যেও কক্সবাজারে পর্যটকের কমতি নেই। রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে পর্যটনে কোন প্রভাব পড়েনি। ঈদুল আজহার বন্ধে কক্সবাজারে পর্যটকে ভরপুর ছিল। এখনো পর্যটকে মুখরিত কক্সাবাজার। পর্যটকদের অনেকে উখিয়া-টেকনাফে গিয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছেন এবং সহযোগিতা করছেন।
নরসিংদী থেকে আসা সাইফুল আলম ও ইসতিয়াত সাদেক বলেন, '৭ বন্ধুর সিলেট ভ্রমণের সিদ্ধান্ত পাল্টে কক্সবাজার এসেছি। কারণ কক্সবাজারে বেড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার সুযোগ হয়েছে।’
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে পর্যটনে কোনো প্রভাব পড়েনি। কক্সবাজারের হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ এবং তারকা মানের আবাসিক হোটেলসমূহ ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ককসবাজারের ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল ভাড়া হয়ে গেছে।
হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে রুমের বুকিং বাতিল হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা করলেও পরে তার প্রভাব পড়েনি। আমার ৩টি আবাসিক হোটেলের সব রুম ভাড়া হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের কলাতলির তারকা মানের হোটেল সী গালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী রুমি জানান, আমাদের হোটেলের সব কক্ষ অগ্রিম ভাড়া হয়ে গেছে। বিশেষ করে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার পর্যন্ত কোন কক্ষ খালি নেই।
কলাতলির তারকা মানের হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সাইমন, লং বীচ, ককস টুডেসহ মাঝারি মানের হোটেলসমূহে পর্যটকে ভরপুর।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. রায়হান কাজেমী জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে পর্যটনে কোনো প্রভাব পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রচুর পর্যটক নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা রক্ষায় টুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে ভ্রাম্যমাণও টিম কাজ করছে।
এদিকে কক্সবাজারের পর্যটন স্পট সমুদ্র সৈকত, ইনানী, হিমছড়ি, সোনাদিয়া, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলহাজারা, বঙ্গবন্ধু সাফারি র্পাক, রামুর রামকোট, ১শ' ফুট বিশিষ্ট সিংহশর্য্যা বৌদ্ধমূর্তি দেখতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। বার্মিজ মার্কেট, কলাতলীর শুটকীর দোকান, বাজার ঘাটার বিভিন্ন মার্কেটসমূহে বেড়েছে বিকিকিনি। রাত অবধি চলছে পর্যটকদের বিচরণ। তবে বৈরী পরিবেশের কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ- সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। তবে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণ করছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ জানান, রোহিঙ্গাদের একটি নিদিষ্ট স্থানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তাই তাদের কারণে কোনো প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে না। এবারও আশানুরূপ পর্যটক এসেছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/মাহবুব