ভিয়েতনামে গিয়ে যথাযথ কাজ ও বেতন না পাওয়া আরও ১৭ জন বাংলাদেশি আজ সোমবার ভোরে দূতাবাসে হাজির হয়েছেন। এর আগে গতকাল রবিবার একই অভিযোগে আসেন আরও ১২ জন। গত সপ্তাহে এসেছেন আরও ছয়জন। আগে থেকে সেখানে আছেন আরও ২৭ বাংলাদেশি। এ নিয়ে মোট ৬২ বাংলাদেশি এখন দূতাবাসে প্রতিকার চাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
নতুন ভুক্তভোগীদের একজন ফরিদুল ইসলাম জানান, ভিয়েতনামের গুনতাও এলাকায় দীর্ঘ সাত মাস তাদের ঠিকমতো কাজ না দিয়ে, বেতন না দিয়ে এখানে সেখানে ঘোরায় দালালেরা। বেতন চাইতে গেলে তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন করা হতো। প্রতিকারের আশায় দুই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোমবার ভোর ৪টায় হানয়ে বাংলাদেশ দুতাবাসে তারা মোট ১৭ জন এসেছেন।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে নরসংদির জাহাঙ্গীর আলম, ফেনীর আবু সায়েম, নোয়াখালীর নুর হোসেন, ময়মনসিংহের আব্দুল হক, শহিদুল ইসলাম ও মিলন মিয়া জানান, তারা ১৭ জন ভুক্তভোগী ভোর ৫টায় দূতাবাসের সামনে যান। দূতাবাস সকালে বন্ধ থাকার কারণে নিরূপায় হয়ে দূতাবাসের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নেন। পরে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন খাবার বা থাকার ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে ফুটপাতেই আছেন।
এর আগে একইরকম পরিস্থিতির শিকার হয়ে ৩ জুলাই ২৭ জন, ১২ জুলাই ৬ জন এবং গতকাল ১৯ জুলাই ১২ বাংলাদেশিসহ মোট ৬২ ভুক্তভোগী ক্যাম্পে থেকে পালিয়ে দূতাবাসে আশ্রয় জন্য আসেন। এ সকল ভুক্তভোগীরা ভিয়েতনাম সরকারের সহায়তায় দূতাবাসের পার্শ্বে একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।
অভিবাসন আইনের ধারা: ২৯ এর উপ-ধারা (১) বলা হয়েছে, কোন অভিবাসী কর্মীর, বিশেষত বিদেশে আটককৃত কিংবা আটকেপড়া বা বিপদগ্রস্ত কর্মীর দেশে ফিরিয়া আসিবার এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন বা দূতাবাসের নিকট হইতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাইবার অধিকার থাকিবে। তবে এখনো এই প্রবাসীরা যথাযথ সহায়তা পাননি।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, জুলাই মাসের শুরুতে ভিয়েতনাম থেকে ১১ বাংলাদেশি ঢাকায় ফেরত আসার পরেই আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি আরও অনেকেই একই পরিণতির শিকার। গুনতাওসহ ভিয়েতনামের বিভিন্ন ক্যাম্পে শতাধিক বাংলাদেশি আছেন। এখন তো ৬২ বাংলাদেশি সহায়তার আশায় দূতাবাসে গিয়েছেন। সরকারের উচিত বিষয়টা যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাতে এমন ঘটনা না ঘটে। একইসঙ্গে তাদের ফিরিয়ে আনতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
ভুক্তভোগীরা বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাদের কোন সহযোগীতা করা হচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, ভিয়েতনামে বাংলাদেশি কর্মীরা প্রতারণা, নির্যাতন ও মানব পাচারের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ সরকারি সব নিয়মকানুন মেনে জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে তারা ভিয়েতনামে এসেছিলেন। কিন্তু কাজ না দিয়ে তাদের সাপ্লাই এজেন্টের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, ভিয়েতনামে কর্মী প্রেরণের ডিমান্ডলেটারে দূতাবাসের এ্যাটাস্টেশন ছাড়াই কি করে বিএমইটি এই কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র দিল?
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন