হবিগঞ্জে মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে উঠে আসা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধান শেষেই মামলা দায়েরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। শুক্রবার দুপুরে দুদক হবিগঞ্জ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে কাগজ-পত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। পত্র পাঠানো হয়েছে মৎস্য অধিধপ্তরেও। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে মামলা দায়েরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবিতে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ প্রেরণ করেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। যাতে ৮৯ ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর ছিল।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদ আলম নবীগঞ্জের কুর্শি কার্প হ্যাচারিতে কর্মরত অবস্থায় প্রতি বছর হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় পোনামাছ সরবরাহের মাধ্যমে দুর্নীতি করেছেন। ৩৮ লাখ টাকা লোপাট করেছেন ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পুকুর পুনঃখনন বাবত। আত্মসাৎ করেছেন যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবত ৩ লাখ টাকা। একই অর্থ বছরে ১১টি উপজেলায় পোনা সরবরাহ করলেও সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন সামান্য টাকা।
এছাড়া সরকারি হ্যাচারির নিজস্ব পোনা বিক্রয় করে নিম্নমানের হ্যাচারি থেকে রেনু পোনা সংগ্রহ করেন তিনি। টার্গেটের অতিরিক্ত রেনু, পোনা ও মাছ বিক্রয়ের টাকা যায় তারই পকেটে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পুকুর পুনঃখনন দেখিয়ে আত্মসাত করেছেন কোটি টাকা। প্রশিক্ষণের নামে ভূয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে উধাও করেছেন সরকারি অর্থ। হ্যাচারির সামনে খোলা জায়গা বহিরাগত লোকদের নিকট লিজ দিয়ে সবজি চাষের ব্যবস্থা করে হাতিয়েছেন টাকা। মোহাম্মদ আলম হ্যাচারির পুরাতন গাছ বিক্রয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের কথাও উল্লেখ করা হয় এতে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা অফিস মেরামত দেখিয়ে লুটপাট করেছেন মোহাম্মদ আলম। সরকারি কোয়ার্টার ব্যবহারে সম্মানী থেকে বিধি মোতাবেক বাড়ি ভাড়া কর্তনের নিয়ম থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি তা করছেন না। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৬ মাসে রাজস্ব ও প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা কোন কাজ না করেই ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন।
মোহাম্মদ আলম বানিয়াচং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় আবেদনে।
এদিকে, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম দীর্ঘদিন এক কর্মস্থলে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন আলম। কিন্তু এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় সাংবাদিক চৌধুরী মো. মাসুদ আলী ফরহাদ ও সাংবাদিক বদরুল আলমসহ আরও কয়েকজনকে। মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে মামলা দায়েরের পর আন্দোলনে নেমেছেন হবিগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ। মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ও রিপোর্টার্স ইউনিটির ব্যানারে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মৎস্য কর্মকর্তা আলমের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাজাদা খসরু বলেন, একটি অভিযোগের কপি পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্তও হয়েছে। তবে প্রতিবেদন আমাকে দেয়া হয়নি। মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমার স্মরণে নেই।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ