মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক-ঢোল, কাঁসা, শঙ্খের তাল। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের প্রতিমা। ঝলমলে আলোকসজ্জা। লালপাড়ের সাদা শাড়িতে নারীদের সাজগোজ। তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের নতুন পোশাকে বেড়ানো। বন্ধু, স্বজনের সঙ্গে নাচ, গান আর আড্ডা। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এখন এমনই উৎসবের আমেজ।
গত রবিবার ষষ্ঠী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। সোমবার সপ্তমীতেও উৎসবের কোনো কমতি ছিল না। তবে মঙ্গলবার মহাঅষ্টমী ও পরদিন মহানবমীতে উৎসব চূড়ান্ত রূপ পাবে। শরতের আকাশে মেঘের ছায়া দেখা দিলেও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী এ কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে বাতাসে বাড়তি আর্দ্রতা কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করছে।
পূজা উদযাপন পরিষদ জানায়, পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা, বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক ও মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ও নগরে এবার সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা ১ হাজার ৯০৬টি। এর মধ্যে জেলায় ১ হাজার ৬১৪টি ও নগরে ২৯২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ বলেন, “২৯২টি মণ্ডপে নির্বিঘ্নে পূজা পালনে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা সহযোগিতা করছে। আশা করছি সবকিছু সুন্দরভাবে শেষ হবে।”
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় মজুমদার দোলন জানান, এবারের পূজার বাড়তি ছুটি উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। জেলার মণ্ডপগুলোতে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে পূজা চলছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছেন।
সরেজমিনে নগরীর চেরাগীপাহাড়, হাজারীগলি, জেএমসেন হল এলাকার মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সমকালীন ও ধর্মীয় নানা থিমে প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে। মণ্ডপে এখন পূজারি ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই প্রতিমা দর্শনে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছেন। প্রতিটি মণ্ডপে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়েছে, অনেক স্থানে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা লাইনও করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় পূজামণ্ডপগুলোকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ—এ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১ হাজার ৪৪০টি মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, বাকি মণ্ডপেও কঠোর নজরদারি চলছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় বিশেষ চেকপোস্ট, রোবাস্ট পেট্রোলিং এবং সাদা পোশাকের টিম সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ২৫টি নিয়মিত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল