প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে - কোন ঋণ নেওয়া হয়নি। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছি। আর শুধু ঋণ নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তিবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা দেশি-বিদেশি ঋণ নিচ্ছি। তবে তা যাতে বোঝা হয়ে না উঠে সে দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ এবং ২০২৩ হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আর কয়েক মাস পরেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মাসেতু। এই সেতু জিডিপি-তে ১.২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছরের শেষ নাগাদ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু হবে। আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামি বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত মাসে পায়রায় ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে তা অর্থনীতির সামস্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০৯ সালে জিডিপি’র আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২,৫৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা এবং দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে। গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রেখে মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ফলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। তবে আমি মনে করি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা সরকারের দায়িত্ব। জাতির পিতা যে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়ন করতে অবদান রাখতে পারছি বলে আমরা গর্বিত। যতদিন বেঁচে আছি, মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে কাজ করার সামর্থ্য দিবেন, ততদিন মানুষের জন্য কাজ করে যাব, জনগণের সেবা করে যাব।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে চাই:
জীবনের এই পথ, কে বলিতে পারে
বাকি আছে কত?
মাঝে কত বিঘ্নশোক, কত ক্ষুরধারে
হৃদয়ের ক্ষত?
পুনর্বার কালি হতে চলিব সে তপ্ত পথে,
ক্ষমা করো আজিকার মতো--
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত