২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:১৩

‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা’ গ্রন্থ পথ দেখাবে নতুন প্রজন্মকে

অনলাইন ডেস্ক

‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা’ গ্রন্থ পথ দেখাবে নতুন প্রজন্মকে

তরুণ প্রজন্ম মনে করে, শেখ হাসিনা শুধু একজন রাষ্ট্রনায়ক, প্রধানমন্ত্রী? তিনি দেশের উন্নয়ন করছেন, দৃশ্যত এটা সঠিক। কিন্তু তিনি এই জায়গায় আসতে কত যে প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছেন, কীভাবে এসেছেন, আমরা কি তা তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি? ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা’ বইটিতে এসব নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সোমবার রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মো. মফিজুল হক সরকার রচিত, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উৎসবে বক্তারা এসব কথা বলেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বাংলা জার্নাল। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাটোর-৪ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমস্ত গুণ ধারণ করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সহজ, সরল জীবনযাপন করেন। জনগণের প্রতি ভালোবাসা আছে। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর মতো সততা, সাহসিকতা আছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের জীবনযাপনের সাথে শেখ হাসিনার জীবনযাপনে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ ছিলেন গ্রামের কৃষক। মুক্তিযুদ্ধে শহরের ছেলেদের সংখ্যা কম ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা জানত না মায়ের কাছে, পরিবারের কাছে ফিরতে পারবে কি না। তাদের একটাই সংকল্প, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করতে হবে, দেশ স্বাধীন করতে হবে।

তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়ার মতো অজপাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। 'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা' বইটি লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, এক রাতের মধ্যে শেখ হাসিনা মা-বাবাসহ প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। এরপর সেই ঘাতকদের বুলেট তাকে ইউরোপেও তাড়া করেছে। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। তিনি আজও বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করছেন, উজ্জীবিত করছেন।

তিনি বলেন, মেঘের ঘনঘটা দেখলে আমরা পালিয়ে বাঁচতে চাই, কিন্তু শেখ হাসিনা তা করেননি। এই ট্রমার মধ্যেও শেখ হাসিনা শোকে মুহ্যমান হয়ে যাননি। নিজের সন্তানের কথা চিন্তা না করে তিনি আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেছেন।

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে যেভাবে চিনি আসলে তিনি কী এমন, না হলে কেমন। তরুণ প্রজন্ম মনে করে শেখ হাসিনা শুধু একজন রাষ্ট্রনায়ক, প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশের উন্নয়ন করছেন, দৃশ্যত এটা সঠিক। কিন্তু তিনি যে এই জায়গায় আসতে কত প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছেন, কীভাবে এসেছেন, আমরা কি তা তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি?

'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা' বইটি লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ ধরনের বই আরও বের করতে হবে।

মেজর (অব.) এটিএম হামিদুল হোসেন তারেক বীর বিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু, এটা পৃথিবী স্বীকৃত। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা জানি, বঙ্গবন্ধু কী ছিলেন? বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের ভিতর প্রোথিত এক নাম।

তিনি বলেন, ইতিহাস আর বই পড়ে আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আর বই পড়ে আমি মুক্তিযুদ্ধের কথাও বলি না। যুদ্ধের মাঠে আমরা যা করেছি, আর যা দেখেছি সেটাই বলছি। যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান আর্মির ৮টা গুলি আমার শরীরে লেগেছে। এমন সময়ও ছিল মার খেতে খেতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবুও পিছপা হইনি। আমার জীবনের প্রাপ্তি, বঙ্গবন্ধু আমাকে স্পর্শ করেছেন। একবার এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আমার হাত ধরে বললেন, এই দেখো! আমার সোনার ছেলে, ১৯ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করে বীর বিক্রম উপাধি পেয়েছে। এরাই তো আমার সোনার বাংলাদেশ গড়বে।

আক্ষেপ করে এই বীর বিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পরে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে গেলাম ব্যানার। সব সরকার বলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। অথচ আমরা দেখি, কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়ে আসছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) আতমা হালিম বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ড. এম এম মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা’ বইটি অনেক তথ্যবহুল। আমি আশা করি, বইটি তরুণ প্রজন্ম, পাঠক ও লেখকদের উপকারে আসবে।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন, সেটা বইতে লেখক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আর পদ্মা সেতুসহ আমাদের যে সফলতা, সেটাও লেখক তথ্যবহুলভাবে তুলে এনেছেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ নাজমুল আহসান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ল্যাবরেটরি স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। সেইদিন আমাদের দায়িত্ব ছিল স্কুলে বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে বরণ করার। কিন্তু আমাদেরও দুর্ভাগ্য আর জাতিরও দুর্ভাগ্য সেইদিন এখানে আসার আগে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ১৯৮২ সালে শেখ হাসিনা দেশে আসলে আমরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তাকে বরণ করলাম। এরপর তাকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানোর সুযোগও আমার হয়েছে। কাজেই আমি বলতে পারি, শেখ হাসিনা ব্যতিক্রম একজন রাষ্ট্রনায়ক। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট খুব ভালো করে উপলব্ধি করেন। আর সেই অনুযায়ী দেশের মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বিষয়গুলো ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা’ বইয়ে খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে এটি খুবই একটি সুন্দর প্রয়াস।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই পড়তে হবে। কারণ না পড়লে তরুণরা বিভিন্ন বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।

যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, একটি মানুষ যখন তার পরিবারের কাউকে হারান, তখন স্বাভাবিকভাবে সে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে যান। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা যিনি ১ দিনে ১৮ জন আপনজনকে হারিয়েছেন। তবুও তিনি বুক ভরা দুঃখ-কষ্ট নিয়ে এদেশের মানুষের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। আর এখনও তা করেই যাচ্ছেন। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন। এদিন উপলক্ষে আমরা তার দীর্ঘায়ুর জন্য দোয়া করি।

ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। কারণ উনার অভিজ্ঞ নেতৃত্ব আরও বেশি প্রয়োজন। উনি যে জাতিসংঘে বক্তব্য দিয়েছেন-বিশেষ করে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে বলেছেন, এই দুটি দেশে যুদ্ধের কারণে এবং আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যে সুন্দর এবং সহজভাবে বলেছেন- এমন বক্তব্য আমি কখনও শুনি নাই।

তিনি বলেন, আমাদের দেশেও উন্নয়ন হচ্ছে। সেই বিষয়গুলো এই বইতে খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে।

‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার শেখ হাসিনা' বইয়ের লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মো. মফিজুল হক সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা ঋণী। তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর এই ঋণ কিছুটা শোধ করতেই এই বই লেখার ক্ষুদ্র প্রয়াস।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া আমার পিঠে আছে। আর বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে যে সকল গুণাবলী ছিল, সেই কারণে তখন সাড়ে ৭ কোটি মানুষ তাকে ভালোবাসতেন। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।

বাংলা জার্নালের প্রকাশক হাবিবুর রহমান রোমেলের সভাপতিত্বে এবং জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন উৎসবে আরও উপস্থিত  ছিলেন বিবার্তা’র সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি, অ্যাসাইনমেন্ট অ্যান্ড লিটারেরি এডিটর সামিনা বিপাশাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর