আজ দ্বিতীয় রমজান। গত বছর যারা পবিত্র রমজান পেয়েছিলেন তাদের কতজন এবার রমজান পেলেন না। আবার যারা এবার রমজানে আছেন তারা হয়তো আল্লাহর মহা বরকতে আগামী রমজান পাবেন না। আল্লাহ আমাদের এই রমজানে সব পাপ-তাপ থেকে পবিত্র করুন, মুক্ত করুন- আমিন।
সেদিন পত্রিকা খুলেই দেখি বেগুনের কেজি ৮০ টাকা। অন্য কিছু না হয়ে বেগুন হওয়ায় ছেলেবেলার কথা মনে পড়ল। তখন আমার বয়স ১৪-১৫, '৬১-'৬২ সালের কথা। আমাদের শহরের বাড়িতে বেশ ফাঁকা জায়গা ছিল। প্রতি বছর বইল্যা হাট থেকে বাবা বেগুন, মরিচ, টমেটো, ঢেঁড়সের চারা আনতেন। কেন জানি বুনলেই ছেয়ে যেত। সেবার পাড়া-প্রতিবেশীদের দিয়ে নিজেরা খেয়ে শেষ হচ্ছিল না। তাই ২৫-৩০ কেজি বেগুন দিয়ে বাবা আমাদের দুই ভাইকে বাজারে পাঠিয়েছিলেন। বাজারে গিয়ে দেখি বেগুনের সের দুই পয়সা। দুই পয়সা হলেও আমাদের বেগুন ৫০-৬০ পয়সা হওয়া উচিত। অনেক চেষ্টা করলাম এক সেরও বেচতে পারলাম না। আমাদের বেগুন বেচে সংসার চালানোর প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু বাবার হুকুম ফেলার পথ ছিল না। ঘণ্টা দুই চেষ্টা করে এক দোকানির কাছে ২৫-৩০ কেজি বেগুন দুই আনা মানে ৮ পয়সায় বেচে লতিফ ভাই আর আমি চার আনা দিয়ে রিকশায় চেপে বাড়ি ফিরেছিলাম। তখন এমন বুদ্ধিমান ছিলাম বেগুন নিয়ে যাওয়ার পথে হেঁটে গেছি। দুই ভাই ছালার দুই দিক ধরে, কিছু পথ পিঠে এবং মাথায় করে নিয়েছি। বেগুন নিয়ে যাওয়ার সময় রিকশায় গেলে ভালো হতো। যাওয়ার পথে না গিয়ে ফেরার পথে রিকশায় চড়েছি। আজকাল জিনিসপত্রের দাম শুনলে খুবই অবাক লাগে। কষ্ট-ভালো দুটোই লাগে। আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশে আউলিয়াবাদ হাটে যে কাঁঠাল এক পয়সায় বিক্রি হতো সেটা নাকি এখন ঢাকায় ৩০০-৪০০ টাকা। ৮০ তোলায় সেরের সময় ১০৫ তোলার সেরে দুই পয়সা সের দুধ দেখেছি। এখন সেই দুধের দিকে তাকানো যায় না। সাদা দুধে অনেকে সরিষার ফুল দেখে।
আমাদের প্রাণের প্রাণ মা কুশিমণির বাঁ পায়ে ১৭ জুন বেশ বড়সড় একটা অপারেশন হয়েছে। কীভাবে যে পা উঁচু করে এতদিন বিছানায় পড়ে আছে, কোনো ঝুট-ঝামেলা করছে না। মাঝে-মধ্যে যা একটু আধটু বিরক্ত হওয়া ছাড়া তেমন কোনো ভয়ের কারণ এখনো হয়নি। যে মেয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলে রাখত, সে আজ দুই সপ্তাহ পা লটকে বিছানায় পড়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে ওর কাছে গিয়ে বসি। মাথায় হাত বুলাই। পায়ের কাছে বসলে কোলে পা তুলে দেয়। মা'র যেমন পা টিপতাম, মা মনে করে ওরও টিপি, বড় ভালো লাগে। মায়ের স্পর্শই অনুভব করি। ও যেদিন আবার ছোটাছুটি করতে শুরু করবে সেদিন হবে আমাদের জন্য মহাআনন্দের দিন।
লিখতে চেয়েছিলাম ভারতের নতুন বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের প্রথম বাংলাদেশ সফর নিয়ে। ২৫ জুন তিন দিনের জন্য তার বাংলাদেশ সফর ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যেমন বাংলাদেশে প্রথম, তেমনি বিদেশ সফরও প্রথম। তাই একটা তাৎপর্য অবশ্যই ছিল। সুষমা স্বরাজকে বহু বছর আগে থেকেই চিনি। '৭৭-এ জনতা পার্টির সরকার, তারপরে ভারতীয় জনতা পার্টি- এসবের জন্মকালে ভারতেই ছিলাম। জনতা পার্টির প্রাণপুরুষ সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ আমায় ভীষণ ভালোবাসতেন, আদরযত্ন করতেন। তিনি সমাজবাদী নেতা রাম মনোহর লহিয়ার অনুরক্ত-ভক্ত ছিলেন। শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণের কারণেই জর্জ ফার্নান্ডেজ, শ্রী চন্দ শেখর, বিজু পট্টনায়েক, মধু লিমাই, সুরেন্দ্র মোহন, রাজ নারায়ণ- এরকম অসংখ্য নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। সুষমা স্বরাজ ছিলেন জর্জ ফার্নান্ডেজের খুবই ঘনিষ্ঠ নেত্রী। '৯০-এ আমি যখন দেশে ফিরি তখনই তিনি বেশ আলোচনায় ছিলেন। এখন তো সর্বভারতীয় নেতা, কেন্দ্রশাসিত দিলি্লর মুখ্যমন্ত্রিত্বসহ অনেক দায়িত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করেছেন। এখন ভারতের কত সুবিধা। আগে এক দল ভারতপন্থি হলে আরেক দল থাকত বিরোধী। কিন্তু এখন কার আগে কে কত বেশি ভারতপ্রিয় হবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় মনে হয় এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি কিছুটা এগিয়ে। সব সময়ই বলা হয় ভারত কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক চায় না। মহান ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একটা অর্থবহ দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক চায়। মুখে বললেও বাস্তবে অনেকদিন তা হয়নি। আশা করা যায় এখন হয়তো সেদিকেই যাবে। ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জে উপনির্বাচন হয়েছে। নাসিম ওসমানের আকস্মিক মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় সেখানে উপনির্বাচন হলো। নাসিমের ছোট ভাই ব্যবসায়ী সেলিম লাঙ্গল মার্কা আওয়ামী লীগ হিসেবে জয়ী হয়েছে। অনেকে অনেক অভিযোগ করেছে। মারামারি কাটাকাটি ছাড়া নির্বাচন হওয়ায় আর কিছু না হোক জীবনহানি হয়নি। তাই ভোটারদের অভিনন্দন জানিয়েছি। বেশ কয়েক দিন নির্বাচনী প্রচারে নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দরে ঘোরাফেরা করেছি, নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এতদিন আমারও মনে হতো নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কৈলাশ থেকে দেবীমাতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জে অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু উপনির্বাচনে ঘোরাফেরা করে এখন আর তেমন মনে হচ্ছে না। কতজনের কাছে কত কথা শুনেছি লিখব বলে মনঃস্থিরও করেছি। একজন শামীম ওসমান, আরেকজন সেলিনা হায়াৎ আইভী। একজন খারাপ, আরেকজন ভালো। অথচ উভয়ই আওয়ামী লীগ। একজনকে বিএনপি বিরোধিতা করে, আরেকজনকে সমর্থন করে। এতদিন মোজেজা বুঝিনি। নারায়ণগঞ্জে মেয়র নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুরকে কোরবানি দিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জয়ী করা হয়েছিল। কথা ছিল সে বিএনপি হবে, হয়নি। এবার বিএনপিরা যে ক'জন ভোট দিয়েছে, অর্ধেক এস এম আকরাম, অর্ধেক সেলিম ওসমানকে দিয়েছে। দুই প্রার্থীই আড়ালে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জের বহু আলোচিত সাত খুনের রাস্তাঘাটে কত কথা শুনেছি। যে মরেছে সেও শামীম ওসমানের লোক, যারা আসামি হয়েছে তারাও শামীম ওসমানের। আলোচিত নূর হোসেন যেসব জায়গা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তুলে একে ওকে দিত সে জায়গাগুলো দেখলাম আর শুনলাম। ওসব ক্ষেত্রে যে মেয়রের কোনো হাত নেই তেমন মনে হলো না। বরং লোকজনের কথায় হাত থাকার ইঙ্গিতই বেশি মনে হলো। লড়াইটা জনগণের নয়, লড়াইটা জোহা পরিবার আর চুনকা পরিবারের। এক দল প্রতিক্রিয়াশীল হলেও ঢাকঢোলে প্রগতিবাদী। আরেক দলের অতীত প্রগতির আলোয় ঝলমলে হলেও প্রতিক্রিয়াশীল। এ দ্বন্দ্বের যা দেখেছি শুনেছি বুঝেছি পাঠকদের সামনে তুলে ধরার প্রবল ইচ্ছা আছে। কিন্তু এ যাত্রায় লেখা হলো না। সেদিন ময়নার কান্নায় সব এলোমেলো করে দিল। আমরা যে অতীত মনে রাখি না তার কত প্রমাণ দেব। হাজী শরীয়ত উল্যাহ, তিতুমীর, মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতাকে আমরা কতটা মনে রেখেছি? শেরে-ই-বাংলা একে ফজলুল হক, হুজুর মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদান কতটাইবা স্মরণ করি? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব জিয়াউর রহমান? এক দল আরেক দলের নেতার প্রতি কি বিদ্বেষই-না দেখাই। অথচ বঙ্গবন্ধু না হলে যে আমি হতাম না, জিয়াউর রহমান হতেন না। আজকাল যত বড় বড় নেতা, পাতি নেতা, ব্যবসায়ী, সম্পদশালী কেউ হতো না- সেসব কেউ মনে রাখে না। সমালোচনা গালাগাল ছাড়া কত সহজে কত বড় বড় মানুষদের ভুলে যাই। ইদানীং প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে কত রাত দিন হয়, জ্বলজ্বলে করোজ্জ্বল দিন অন্ধকারে তলিয়ে যায়, যার হিসাব রাখা ভার। এমনই আমাদের ময়না। আমার এক ভাগনী শেলি মুক্তিযুদ্ধে হানাদারদের ঘরে আগুন দেওয়া নিয়ে লেখা 'মাগো, আমার ময়না পাখির খাঁচাটা কেন আনলে না?' বড় দরদ দিয়ে গাইতো। '৭২ সালে আমাদের সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে সে কলকাতার গড়ের মাঠে, বনশ্রী সিনেমা হলে, রবীন্দ্র সদনে 'মাগো, আমার ময়না পাখির খাঁচাটা কেন আনলে না? যখন ঘরে জ্বললো আগুন কেন মনে করলে না...' গেয়ে কলকাতা মাতিয়েছিল। আমাদের এ ময়না সেই ময়না নয়। এ ময়না ১৪-১৫ বছরের এক হতভাগিনী। একেবারে হতদরিদ্র ঘরের সন্তান। বিথী আক্তার ইভার নামে এক দুশ্চরিত্রা বাটপাড়ের খপ্পরে পড়ে। নাটক থিয়েটারে অভিনয় করার সুযোগ করে দেবে বলে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ খুইয়েছে। মধুপুরের গভীর জঙ্গলে চার দিন আটকে রেখে মো. শাহজাহান আলী, এসএম নূরুজ্জামান গেদা, হারুনর রশিদ, মনিরুজ্জামান মনির- এই চার নরপশু তার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে তাদের বাড়ির কাছে রেললাইনের ওপর ফেলে যায়। রেল চলে গেলেই তাতে কাটা পড়ে সব ঝুট-ঝামেলা চুকেবুকে যেত। কিন্তু মানুষের চোখে পড়ায় সে বেঁচে যায়। গ্রামের হতদরিদ্র অসহায় অশিক্ষিত আধা উন্মাদ মা খবর পেয়ে মেয়েকে নিয়ে যায় তার বাবার বাড়ি চিনামুড়া। স্বামী আরও উদ্ভট। শিশু মেয়ে নির্যাতিত হয়েছে তাকে ছায়া দেবে- তা না দিয়ে লোকজন কী বলবে সেই ধান্ধায় মেয়ের মুখ দেখবে না। স্ত্রীকে গালাগাল, মারধর করে। যায় চার-পাঁচ দিন। একেবারে মরণাপন্ন হলে পেটের ব্যথার কথা বলে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। গরিবের কি কঠিন লজ্জা! অবিরাম রক্তক্ষরণ সেখানে পেটের ব্যথার চিকিৎসা করলে হয়? তিন-চার দিন পর মানবাধিকার ও সমাজকল্যাণের যুব ভলান্টিয়াররা কীভাবে কীভাবে রোগী এবং মাকে বলে-কয়ে আসল তথ্য বের করে। রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় দুই-তিন মাস চিকিৎসা হয়। মেয়েটি প্রায় এক মাস মুখে খাবার তুলেনি। ঢাকার ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আমি বেশ কয়েকবার সাথী আক্তার ময়নাকে দেখতে গেছি। আমার দৃষ্টিতে এ যুগের বিধান রায় প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, তখনকার মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ কতজন দেখতে গেছে, কতজন তাকে কত ফুলচন্দন দিয়ে মাথায় তুলে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই-তিন মাস পত্রিকার প্রথম পাতার খবর, চ্যানেলের শিরোনাম। আজ দেড় বছর কেউ তার খবর নেয়নি। আমি একা একা কতটা কি করতে পারি? দুই মাস আগে ঠাকুরগাঁওয়ে আবু হানিফের পরিবারকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে চার লাখ টাকার একটা স্থায়ী জামানত দিতে গিয়েছিলাম। আগের দিন হঠাৎই ময়না এসেছিল। ওর আকুল করা কান্না আমায় এলোমেলো করে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল নিহত হানিফের স্ত্রী, তার দুই বছরের অবুঝ সন্তানকে চার লাখের জায়গায় তিন লাখ দিয়ে এক লাখ ময়নাকে দিলে কেমন হয়! তাই ময়নার জন্য এক লাখ টাকা রেখে দিয়েছি। আজ দেই, কাল দেই করে দেওয়া হয়নি। সেই ময়না পরশু এসেছিল। ওর কান্না সহ্য করতে পারিনি। তার কান্না কেন যেন আমার মায়ের কান্না, আমার সন্তানের কান্নার মতো মনে হয়েছে। কী হয়েছে? কাঁদিস কেন? অনেকক্ষণ জবাব দিতে পারেনি। পরে যা বলল, তাতে সভ্য জগতের অসভ্যতায় হৃদয় ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। যেখানে পাকিস্তান হানাদার দানবেরও অধম চার পশুর জন্য কোর্টে কোনো উকিল দাঁড়ানো উচিত ছিল না, সেখানে সম্পদশালী আসামিদের উকিল ছোট্ট মেয়েটির ওপর একবার চার পশু পাশবিক নির্যাতন করে ক্ষতবিক্ষত তো করেছেই, আবার প্রকাশ্য কোর্টে নতুন ধর্ষকরা শত শত মানুষের মাঝে বাক্যবাণে ধর্ষণের চেয়েও বেশি জেরবার করেছে। বলিহারি যাই দেশের বিচার ব্যবস্থার। যে ঘটনা সারা দুনিয়া জানে সেই ঘটনা সাক্ষী প্রমাণের জন্য কোর্টে এমন পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে যে মেয়েটির মরে যাওয়াই ভালো। সরকারি পক্ষের উকিল মিন্টু তার মুহুরি পয়সা চায়। যদিও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ভিকটিমের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আসামি পক্ষের প্রধান উকিল আরফান মোল্লার কথা ভেবে অবাক হই। আসলে টাকার কি এতই দরকার! তার আত্দীয়স্বজনও তো ময়নার মতো নির্যাতিত হতে পারত! ভবিষ্যতেও তো হতে পারে! দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে! আমার ছোট চাচা ওয়াদুদ সিদ্দিকীর একমাত্র ছেলে রাসেল সিদ্দিকী, সে আবার আরফান মোল্লার জুনিয়র ময়নার মামলার বিপক্ষ উকিল। রাসেলকে খুবই স্নেহ করি, যত্ন করি। তাকে ডেকে বলেছি, শুনেছি তোর মেয়ের বয়স আড়াই বছরের মতো। আল্লাহ না করুন তার যদি ময়নার ভাগ্যবরণ করতে হয় সেদিনও কি তুই আইনের ফাঁকফোকর খুঁজবি?
নির্যাতনকারীরা সবাই ধনী এবং রাজনৈতিক দলের সদস্য- কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি। কুকাজে দলমতের পার্থক্য নেই- দারুণ মিল। ৩ জুলাই আবার সাক্ষীর তারিখ। ওরকম বিশ্রীভাবে ভরা কোর্টে একটি ১৪-১৫ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ মামলায় উকিলদের নাহোক জেরা ধর্ষণেরই নামান্তর। যে ঘটনা লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষ মাসের পর মাস পত্র-পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে জেনেছে।
বিশেষ করে বর্তমান মাননীয় স্পিকার মহিলা মন্ত্রী থাকতে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে তাকে সব রকম সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিল- এরকম অবস্থায় আমরা আশা করব সরকার ভালোভাবে এই অসহায় মেয়ের পাশে দাঁড়াবে। রাজনৈতিক পরিচয় অথবা টাকার জোরে ধর্ষকরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে- এ ব্যাপারে আমি সবার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : রাজনীতিক।