শিরোনাম
প্রকাশ: ০১:০১, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২০ আপডেট:

বান্ধবী লায়লার কাছে ভূট্টোর তথ্য ফাঁস ও বঙ্গবন্ধুর আকাশ পথে ১৩ ঘণ্টার স্বদেশ ফেরার যত ঘটনা

পীর হাবিবুর রহমান
অনলাইন ভার্সন
বান্ধবী লায়লার কাছে ভূট্টোর তথ্য ফাঁস ও বঙ্গবন্ধুর আকাশ পথে ১৩ ঘণ্টার স্বদেশ ফেরার যত ঘটনা

বান্ধবী লায়লার কাছে ভূট্টোর তথ্য ফাঁস ও বঙ্গবন্ধুর আকাশ পথে ১৩ ঘণ্টার স্বদেশ ফেরার যত ঘটনা

গেলো বছর সামারে লন্ডনে সেই শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে পাকিস্তান কারাগার থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির খবর কিভাবে ভূট্টো আগাম ফাঁস করেন। মুক্ত জাতির পিতা মুক্ত হয়ে লন্ডনে বিরতি নিয়ে কিভাবে দিল্লী হয়ে স্বাধীন স্বদেশে ফিরে এলেন। আকাশ পথের ১৩ ঘন্টার সফরসঙ্গী শশাঙ্ক এস ব্যানার্জী তার নিখুঁত বর্ণনা দিলেন। তিনি তখন লন্ডনে দিল্লীর কূটনীতিক।

৬২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতের পর তার হাতেই ইত্তেফাক অফিসে মানিক মিয়ার ডাকা বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরিকল্পনাসহ নেহেরুর সহায়তা চেয়ে চিঠি দেন। তিনি সেই থেকে ইন্দিরাযুগ পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতার সাথে জড়িয়ে থাকেন মহাকালের সাক্ষী হয়ে।

মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করায় যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারতের কাছে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের চিফ সেক্রেটারি জনাব এম হোসেনসহ ৯৩ হাজার পাকিস্তানিকে ভারতে নেওয়া হয়। কিন্তু তিনি উচ্চ পদমর্যাদার কারণে যুদ্ধবন্দি হলেও তাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডি পি ধরের বাসায় ব্যক্তিগত অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছিল। আর তার স্ত্রী লায়লা হোসেন লন্ডন বেড়াতে গিয়ে কয়েকদিন আগেই আটকা পড়েন। শশাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, ডি পি ধর ছিলেন একজন কাশ্মিরী পন্ডিত। চমৎকার মানুষ। উর্দু ও পারস্যের কবিতার ওপর দখল ছিল। যেহেতু আমি ভারতের হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম এবং উর্দু কবিতা শিখেছিলাম এতে আমাদের উভয়ের দেখা হলেই আমরা উভয়েই উভয়কে উর্দু ও পারস্যের কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতাম। ডি পি ধর কূটনৈতিক চ্যানেল এড়িয়ে আমাকে একটি অনুরোধ করেন, লায়লা হোসেনের কাছে তার স্বামীর সিল করা ব্যক্তিগত চিঠি পৌঁছে দিতে। এই চিঠি পেয়ে লায়লা হোসেন নিশ্চিত হন, তার স্বামী সুস্থ, আরামে এবং আনন্দে আছেন। তাদের বার্তা আনা নেওয়া করতে গিয়ে আমিও লায়লা ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। সুন্দরী লায়লা আকর্ষণীয় স্মার্ট ও প্রাণবন্ত ছিলেন। আমরা ভারত পাকিস্তান সম্পর্কও বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে সীমাহীন আলোচনা করেছি।

এর মাঝে হঠাৎ খবর এলো নিউইয়র্কের জাতিসংঘ থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টো লন্ডন হয়ে পাকিস্তান ফিরছেন। সেখানে গিয়ে ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে পাকিস্তানের চিফ মার্সাল ল এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে দায়িত্ব নিবেন। তখন চতুর্দিকে প্রশ্ন ছিল সামরিক আদালতের রায় কার্যকর করে শেখ মুজিবকে কি ফাঁসি দেওয়া হবে? নাকি যাবতজীবন কারাদ-, না মুক্তি? জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর চারপাশে এবং পাকিস্তান আর্মি হেডকোয়ার্টারে অনেক চ্যানেল খোলা হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর জন্য। দিল্লি এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহ নিল। ইন্দিরা শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য অস্থির ছিলেন। নয়াদিল্লিতে ‘র’ এর সেকেন্ড ইন কমান্ড শাঙ্কারাইন নায়ার দারুণ আইডিয়া দিলেন। লায়লা হোসেনকে কেন ভুট্টোর লন্ডন বিরতির সময় কৌশলে মুজিবের মুক্তির বিষয়টি তুলতে বলা হচ্ছে না? নায়ার ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত। লায়লার অতীত ব্যক্তিগত জীবন জানতেন। লায়লা ও ভুট্টো পুরনো বন্ধুই ছিলেন না। তাদের মধ্যে অন্যরকম একটা রোমান্টিক সখ্যতা ছিল। ভুট্টোকে তাই লায়লা আদর করে ‘জুলফি’ বলে ডাকতেন। পাকিস্তানে তারা হাই সোসাইটিতে অবাধ মেলামেশা করতেন। শেষ পর্যন্ত কাজের দায়িত্বটি আমাকে দেওয়া হলো। আমি নিশ্চিত ছিলাম এই স্পর্শকাতর অপারেশন আমাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।

প্রাথমিক চিন্তা ছিল কীভাবে বুঝালে কাজটি হবে? তিনি উত্থাপন করলে ভুট্টো সন্দেহ করবেন না তো?। অপারেশনের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের পর সব কিছু প্রস্তুত হলো। লায়লা হোসেন তার ওপর অর্পিত মিশন নিয়ে বেশ উত্তেজিত ছিলেন। আমাদের পরিকল্পনা মতো তিনি তার সঙ্গে গোপনে মাইক্রোফোনসহ রেকর্ডারও রাখলেন। একটি নিখুঁত গোয়েন্দা অপারেশনের রূপ দিলেন তিনি। ব্যানার্জি বলেন, তখন আমার কাছে মনে হলো, পাকিস্তানের সমাজের উচ্চ পর্যায়টি এভাবেই তৈরি। একই সঙ্গে আরও মনে হলো-পাকিস্তান আসলে কি ধরনের রাষ্ট্র! । হিথ্রো বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ‘এলিয়ক এন্ড ব্রাউন স্যুটে’ পৌঁছলেন লায়লা। তিনি ভুট্টোকে তার স্বামীর মুক্তির বিষয়ে ইন্দিরার সঙ্গে আলোচনা করবেন কিনা জানতে চাইলেন। এমনকি তিনি শেখ মুজিবের মুক্তির বিনিময়ে তার স্বামীসহ সব যুদ্ধবন্দিদের বিষয়টি মুক্তির বিষয়ে সহায়ক হতে পারে বলেও মতামত দিলেন। পেশাদারি নির্দেশনা ছাড়াই লায়লার ভাষা এতটাই আসল ছিল যে, শুনতে দারুণ লাগছিল। তার কথা অবশ্যই ভুট্টোর মস্তিষ্কের কোষগুলোকে নাড়া দিয়েছিল। ভুট্টোর উত্তর ছিল তীক্ষ্ণ, পরিষ্কার ও ঠাট্টাপূর্ণ।! প্রেমিকার মতোন লায়লাকে লাউঞ্জের এক কোণায় নিয়ে ভুট্টো ফিস ফিস করে বললেন, ‘লায়লা, কেন তুমি তোমার স্বামীকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করছো? আমি হোসেনের চেয়ে আরও সুদর্শন পুরুষ তোমার জীবনে দেবো! আচ্ছা, ঠাট্টা ছাড়ো। তোমার পরামর্শের জবাবে বলছি-তুমি তোমার দিল্লির ‘প্রভুদের’ জানাতে পার যে, আমি দায়িত্ব নিয়েই মুজিবকে মুক্ত করে দিব। আশা করি তারপরেই তারা তোমার স্বামীকে মুক্ত করে দিবে। পরে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ঠিক করব, এর বদলে কী আমি চাই।’ ব্যানার্জি বরেন, আসলে ভুট্টোও চেয়েছিলেন মুজিবকে মুক্ত করবেন এ খবরটি লিক করে দিতে। শশাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, এটাই স্বাভাবিক যে তার মাথায় ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দি মুক্ত করার বিষয়টি ছিল। আর লায়লা স্বামীর মুক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হলেন। গোটা রেকর্ডিংসহ গোপন যন্ত্র ফিরে এসেই লায়লা আমার হাতে দিলেন।

ভুট্টোর বিস্ফোরক উক্তির পর এক্সক্লুসিভ গরম খরবটি সবচেয়ে দ্রুততম কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে দিল্লি পৌঁছে দেওয়া হলো। RAW এর সেকেন্ড ইন কমান্ড শাঙ্কারাইন নায়ার প্রথম খবরটি জানলেন। আর কপি পেলেন আর এন কাউ এবং ডি পি ধর। খবরটি যখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাউথ ব্লক অফিসে পৌঁছানো হলো তখন তার প্রতিক্রিয়া ছিল সাবধানী। ‘অপেক্ষা করি, দেখা যাক কি হয়?’ প্রতীক্ষার খেলা শুরু হলো সঙ্গে সঙ্গেই। ভারতের কূটনৈতিক ইতিহাসে এটি সবচেয়ে দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক সময়। হেরল্ড উইলসনের বিখ্যাত উক্তি, ‘রাজনীতিতে একটি সপ্তাহই অনেক বড় সময়।’ দিল্লির উত্তেজনা ভরা আবহাওয়ায় মুজিবের মুক্তির খবর শোনার অপেক্ষা হয়ে উঠেছিল সহ্যের অতীত।
এ পর্যায়ে আমি ব্যানার্জিকে বললাম, আপনারও তো কোড না ছিলো ‘হোসেন’! এটা কী সত্য? আমার ইঙ্গিতে তিনিও হালকা রসিকতার হাসি দিয়ে বললেন, আপনি জানেন কী করে? বললাম, আপনার সম্পর্কে পাঠ করতে গিয়ে। ব্যানার্জি তার মিষ্টি হাসির মাধুর্য্য ছড়িয়ে বললেন, বিচারপতি আর সাঈদ চৌধুরী গণহত্যার আগে এখানে ছিলেন। ঢাকায় গণহত্যা ও মুজিবের স্বাধীনতার ডাকে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মুক্তি সংগ্রামে এখানেও বিশ্বজনমত গঠনে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। গণহত্যার রাতে তার ছাত্রদের নিহত হবার সংবাদ তিনি সইতে পারছিলেন না। তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন আমার সঙ্গে। চমৎকার মানুষ। আমরা ভীষণ ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তিনি একদিন বললেন, ফোনে কথা বলার সময় পাশে নানা লোকজন থাকে। একটি কোড নামে ডাকতে চাই। বললাম, আপনার ইচ্ছে। মি: চৌধুরী তখন বললেন, আপনি এখন থেকে ড. হোসেন। আমি আবু সাঈদ চৌধুরীর ‘হোসেন’ ছিলাম, লায়লার হোসেন নয়, বলেই হাসলেন ব্যানার্জি।

শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি বলেন, জুলফিকার আলী ভুট্টো কথা দিয়ে কথা রাখার ক্ষেত্রে খুব একটা বিখ্যাত ছিলেন না। তাই লায়লা হোসেনকে যে খবর দিয়েছিলেন সেটি আমাদের প্রতীক্ষার প্রবল উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখে। কিন্তু লায়লাকে জানানোর সময় অনুসারে ৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের বন্দীশালা থেকে মুক্ত করে দিলেন।

একজন গণধিকৃত একনায়ক হিসেবে অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হলে ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ রাওয়ালপিন্ডির সামরিক সদর দফতরে ডাক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলামাবাদ ফিরে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন ভুট্টো। তিনি নিজে যদিও পরাজয়ের গ্লানিতে জর্জরিত ছিলেন, তবুও দানবীয় অহংকার ও অতি উচ্চাকাক্সক্ষার জন্য সময় নষ্ট করলেন না; যদি কেউ তার গদি আবার উল্টে দেয়, এই আশঙ্কায়। মুজিবের মুক্তির বিনিময়ে ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দীকে ঘরে ফিরিয়ে এনে ভুট্টোর ক্ষমতার আসন শক্ত করার পরিকল্পনা থেকে ইন্দিরা গান্ধীর ওপর নৈতিক চাপ ফেলার কথা ভাবছিলেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে পাকিস্তানের ইমেজের উন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। ভুট্টো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সিমলা কনফারেন্সে ইন্দিরা গান্ধীর সামনে তিনি কোনো উচ্চবাচ্য করবেন না। কিন্তু সিমলা থেকে ইসলামাবাদে ফিরেই সিংহের মতো গর্জন করে বলে বসলেন, ভারতকে তিনি উচিত শিক্ষা দেবেন। ফলাফল যাই হোক না কেন, ভুট্টো জুয়া খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মাথায় রোডম্যাপের পরিষ্কার নকশা নিয়ে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান এয়ারলাইনসের (পিআই) একটি ফ্লাইটে লন্ডনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন এবং ভারতীয় দূতাবাসে বার্তা পাঠালেন।

সেই শীতের রাতে খবর পেয়ে লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আপাবিপন্তসহ আমরা তুমুল উত্তেজনা ও আনন্দে রাত ৪টার সময় হিথ্রো বিমানবন্দরে ছুটে গেলাম। ৯ জানুয়ারি, ১৯৭২ সকাল ৬টায় শেখ মুজিব লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের ‘এলিয়ক অ্যান্ড ব্রাউন্ড স্যুইট’-এ এসে পৌঁছেন। ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ইন্ডিয়ান ডেস্কের সাদারল্যান্ড তাকে অভ্যর্থনা জানালেন। আমাকে দেখেই বঙ্গবন্ধু বলেন উঠলেন, ‘আরে ব্যানার্জি, কেমন আছো?’ আসো আসো বলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললাম, আপনি কী মনে করেছিলেন আমিও জেরে আছি? আমি ভালোই আছি। হাই কমিশনার ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলিয়ে দেন। ৩০ মিনিটের সেই টেলিফোন কথোপকথনে ইন্দিরা মুজিবকে তার জীবনের স্বপ্ন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম উপলক্ষে অভিনন্দন জানান এবং ঢাকা যাওয়ার পথে নয়াদিল্লি ঘুরে যাওয়ার জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ জানান। মুজিব তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ইন্দিরা এ সময় আরও বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ভিআইপি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছেন তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য।

এরই মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি বৈঠকের ব্যবস্থা ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে করে ফেললেন সাদারল্যান্ড। ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে মুজিব যখন লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে এসে উঠলেন তার আগে থেকেই টেলিভিশন ব্রেকিং নিউজ দিতে শুরু করে, শেখ মুজিব এখন লন্ডনে। খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাকে একনজর দেখতে কনকনে ঠান্ডা ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে হোটেলের সামনে এমনভাবে ভিড় করলেন যে হোটেল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্রিটিশ পুলিশের শরণাপন্ন হলেন।

এ সময় আমার প্রশ্ন ছিল, আমি জানতাম ভারতীয় হাইকমিশনার যখন ক্লারিজ হোটেলে এয়ার ইন্ডিয়ার কথা বলেন তখন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে দেশে ফেরার কথা বলেছিলেন। তার যুক্তি ছিল ব্রিটিশ সরকার তখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাই তাদের বিমানে উড়ে দেশে ফিরলে এক ধরনের নৈতিক স্বীকৃতি দৃশ্যমান হবে। এ বিষয়ে শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি বললেন, এটা ঠিক নয়। ইন্দিরা গান্ধী এয়ার ইন্ডিয়ায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত বাতিল করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে আলাপ করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে দিল্লি হয়ে তার স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করেছিলেন। কারণ অনেকগুলো সোর্সের যে কোনো একটি ইন্দিরা গান্ধীকে জানিয়েছিল, পাকিস্তানি আইএসআইয়ের কোনো এজেন্ট এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তাই বিমান পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের দায়িত্ব তিনি বঙ্গবন্ধুর ওপরও ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের নেতা সেটি গ্রহণ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্য যখন এয়ার ইন্ডিয়ার ভিআইপি ফ্লাইট প্রস্তুত করা হচ্ছে তখন ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবকে দ্বিতীয়বার টেলিফোনে এটি জানিয়েছিলেন। ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের একটি মিলিটারি জেট বিমান বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রস্তুত করা হলো। ইন্দিরা গান্ধী ও এডওয়ার্ড হিথ দুজনেরই ইচ্ছা ছিল বঙ্গবন্ধুকে তার ঘর গোছাতে সাহায্য করা এবং তার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রশাসন ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চালু করে দেওয়ার। ইন্দিরা চাইছিলেন ব্রিটেন যেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বৈঠকটি ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ এবং শেখ মুজিবের জন্য সন্তোষজনক। এডওয়ার্ড হিথ তাকে সম্মান জানাতেও কার্পণ্য করেননি। স্বীকৃতি না দেওয়া একটি স্বাধীন দেশের নেতাকে গাড়ির দরজা খুলে তুলে দিয়ে সম্মান জানাতেও ভুললেন না। ব্রিটেনের তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা যিনি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন, সেই হ্যারল্ড উইলিয়ামও ক্লারিজ হোটেলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন এবং তাকে প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করলেন।

শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সব প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত তখন প্রশ্ন এলো বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী কে হবেন? উপদেষ্টা ডি পি ধর, গোয়েন্দা প্রধান রামনাথ কাউ, পররাষ্ট্র সচিব পি এন কাউল এবং ‘র’-এর দ্বিতীয় প্রধান শঙ্করণ নায়ার আলাপ করে ইন্দিরা গান্ধীকে বললেন যে, মুজিবের সফরসঙ্গী হিসেবে আমার থাকা উচিত। কারণ আমি মুজিবকে চিনতাম, তার স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে এবং এই মুক্তির সংগ্রামে ঢাকা ও লন্ডনের সঙ্গে একাত্ম ছিলাম। ইন্দিরা গান্ধী এটিকে বিচক্ষণ প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সফর করার অধিকার প্রদান করেন। এমনকি আকাশপথে বঙ্গবন্ধুকে আমার কী বার্তা দিতে হবে, কোন বিষয়ে পটাতে হবে সে সম্পর্কে একটি গাইডলাইনও দেন। আমাদের একজন নিরাপত্তাকর্মীকেও সফরসঙ্গী করা হয়েছিল, কিন্তু ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের কমেট জেট অস্ত্রবহন করার অনুমতি দিল না।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে আসা তার সফরসঙ্গী হলেন ড. কামাল হোসেন। আকাশপথে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এই ১৩ ঘণ্টার সফর আমার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিশনে পরিণত হয়। আয়ান সাদারল্যান্ড আমাকে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায় তার পাশের আসনটি গ্রহণ করতে দেন। আর পেছনে খানিকটা দূরেই ড. কামাল হোসেনসহ অন্যজন। ভিআইপি ফ্লাইটে আমাদের টুইন সিট একটি ওয়ার্কিং ডেস্কের পেছনে অবস্থিত ছিল। ডেস্কটি রেফারেন্স কাগজপত্র ছড়িয়ে রাখতে উপযোগী ছিল। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটি ব্যবহার করেছিলেন তার ধূমপানের পাইপটি রাখার কাজে। তার প্রিয় তামাক ছিল এরিন মোর। তিনি যখন পাইপ টানতেন, আকাশে তখন তার সুগন্ধি ছড়াত। বিমান উড্ডয়নের পূর্বমুহূর্তে সাদারল্যান্ড বিদায় নেওয়ার সময় জানতে চাইলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছবি তুলতে আমার কোনো আপত্তি আছে কিনা? আমি বললাম, নিশ্চয়ই কোনো আপত্তি নেই। তিনি জানালেন, ফ্লাইট চলাকালে পাইলট আমার এবং মুজিবের যুগল ছবি তুলবেন যার কপি দিল্লিতে নামার আগেই দেওয়া হবে। তিনি যাত্রা আনন্দময় হোক বলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ইশারায় খেয়াল রাখতে বলে করমর্দন করে বিদায় নিলেন।

বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার স্বপ্নকালীন সময় থেকেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ এটি গুন গুন করে গাইতেন। তিনি সেটি গুন গুন করে গাইতে থাকলেন। হঠাৎ বললেন, ব্যানার্জি তুমি গান গাইতে জানো? অবাক হয়ে বললাম, আমি তো গানের গ-ও জানি না। তিনি বললেন, আরে তাতে কী! তুমি আমার সঙ্গে ধরো। বলেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। বেশ পেছনে বসা ড. কামাল হোসেনদেরও দাঁড়াতে বললেন এবং তার সঙ্গে গান ধরতে বললেন। তিনি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ খুব দরদ দিয়ে গাইতে থাকলেন আর তখন তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকল। একজন মহান নেতার গভীর দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি পরম ভালোবাসা আমাকে আবার মুগ্ধ করল। গান গেয়ে তিনি যখন বসলেন, তখন আমি আমার কূটনৈতিক প্রথা ভেঙে একজন দেশপ্রেমিক নেতাকে বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু, আপনাকে আমি প্রণাম করতে পারি? তিনি কিছু বলার আগেই আমি তার চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করলাম।’ কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, এটি হবে আমার স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত। এতদিন তার শক্তিশালী উৎফুল্ল চেহারা দেখেছি।

এবার আমি তার ভিতরের কোমল মানুষটির দেশপ্রেমিক রূপ দেখলাম। যেটি তখনকার দিনের রাজনীতিবিদদের মধ্যে অল্পই দেখা যেত। তিনি যখন বললেন, জাতীয় সংগীত হিসেবে এটি কেমন হবে? তখন আমি বললাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতা ছিল সীমাহীন। এটি ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী সেতুর বাঁধন শক্ত করতে যেমন ভূমিকা রাখবে; তেমনি ইতিহাস হবে যে দুটি দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা একজন। বঙ্গবন্ধু বললেন, যদিও ইতিহাসের কোথাও লিখিত রেকর্ড থাকবে না; কিন্তু তোমার ভালো লাগার কথা যে আমরা দুজন মিলে কবিগুরুর এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কী বলো ব্যানার্জি? যদিও আমার জন্য এটি ছিল অভাবনীয় ও আবেগময় করার বিষয়, তবুও আমার কূটনৈতিক মন বলল; বঙ্গবন্ধু আমাকে জয় করে আমাকে দিয়েই কোনো একটি কাজ করাতে চান। তখনো আমার ওপর ইন্দিরা গান্ধীর অর্পিত নির্দেশ পালন করতে বাকি রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু একপর্যায়ে বললেন, ব্যানার্জি তুমি তো জানো; প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা বলেছেন ৬ মাসের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে তার ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবেন বলেছেন? বললাম, জানি। তিনি বললেন, আমি চাই ৬ মাস নয়; তিন মাসের মধ্যেই ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করে নেবেন। কিছুক্ষণ হাসিঠাট্টা ও অরেঞ্জ জুস পান করার পর বঙ্গবন্ধু গোপনীয়ভাবে ফিসফিস করে আমাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে বললেন। তার কথায় কোনো দ্বিধা ছিল না। বললাম, আমার ক্ষমতায় থাকলে আমি সহযোগিতা করব। তিনি বললেন, দিল্লি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আমি যেন এই বার্তাটি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পৌঁছে দিই। আমি বললাম, আমি পৌঁছাব। কিন্তু এটি কার্যকর করতে হলে আপনাকেই প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে। তিনি বললেন, রাষ্ট্রপতি ভবনে মিসেস গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই অনুরোধটি করবেন। কিন্তু তার আগেই আমাকে বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে। ব্যানার্জি বলেন, প্রথম কয়েক সেকেন্ড আমি নার্ভাস ছিলাম, মিশনটি আসলে কী? দিল্লির আনন্দঘন উৎসবমুখর পরিবেশে আমি কি প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত মুজিবের ইচ্ছা পৌঁছাতে পারব? বঙ্গবন্ধুর ভাষায় তিনি চাইছিলেন তার বার্তা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিয়ে আমি যেন আগাম খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখি, যাতে তিনি তার আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে বোঝালেন তার অনুরোধের পেছনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের একটি আকাক্সক্ষা রয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী যদি ঘোষিত ৩০ জুন, ১৯৭২ এর তিন মাস আগে ৩১ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যহার করে নেন; তাহলে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিটেনের স্বীকৃতিদানের পথ সুগম হবে। আমি এবার ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শ উত্থাপন করার কঠিন পথটি নিলাম।

ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, আমি যেন ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের মডেলের কথা না বলে, ব্রিটিশ সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাজি করাই। ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, সংসদীয় শাসনব্যবস্থা না হলে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থায় সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা থেকে যায়। আমি যখন বঙ্গবন্ধুকে ওয়েস্ট মিনিস্টার মডেলটি উত্থাপন করে আমার নিজের পদ্ধতিতে কথা বলা শুরু করলাম, তখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কোন ধরনের গণতন্ত্র সবচেয়ে উপযোগী, বিশেষ করে যারা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অভিনব আত্মপ্রকাশ করেছে। আমরা রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা নিয়েও কথা বললাম। ব্যানার্জি জানান, তাদের তর্কে এলো যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল পরিণত গণতন্ত্রের জন্য হয়তো রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা সবচেয়ে উপযোগী। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা তার পথ হারিয়ে ফেলছে বলে মনে হচ্ছিল। উদাহরণস্বরূপ পাকিস্তানের মতো দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা সামরিক একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়। এরপর ওয়েস্ট মিনিস্টার মডেলের সংসদীয় গণতন্ত্রের আলোচনা শুরু হলে সবচেয়ে পুরনো অনুশীলনকারী ব্রিটেন হলেও ভারতে এর চর্চা অনেক বছর ধরে অব্যাহত থাকায় দেশটি বিশ্বাস করে এটি তাদেরই পদ্ধতি।

ভারতীয় অভিজ্ঞতা বাদ দিলেও ওয়েস্ট মিনিস্টার মডেল বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হবে। আমি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, এটি বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে বড় কারণটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিচারক ও শিক্ষাবিদ যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে অক্লান্ত এবং নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মুজিবের প্রতি আনুগত্যে অটল বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর মতো একজনকে রাষ্ট্রপতি করে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করা যাবে। বঙ্গবন্ধু নিজে জাতির পিতা, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী? হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস হবে ক্ষমতার কেন্দ্র। আমার কথা শুনে বঙ্গবন্ধু হাসলেন। খুব দ্রুত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর পক্ষে কথা বলার জন্য আমাকে সাধুবাদ জানালেন। চোখের ঝলক দিয়ে মুজিব জানতে চাইলেন বাংলাদেশের সংসদীয় সরকার আইডিয়া ইন্দিরা গান্ধীর কিনা? তিনি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন, আমি এমনি এমনি কথা বলছি নাকি ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শ জানাচ্ছি। তিনি যেমন ছিলেন বুদ্ধিমান, তেমন ছিল তার শিশুর সারল্য। আমি মাথা ঝাঁকিয়ে তার প্রশ্নের জবাবে সায় দিয়ে বললাম, বিশ্বের নেতাদের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী হচ্ছেন সেই জন বাংলাদেশের জন্য যার শুভ কামনা অভিনব ও অতুলনীয়। ‘বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা আপনার বিবেচনার জন্য এই পরামর্শ দিতে বলেছেন, আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আপনার।’ কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ব্যানার্জি, আমার সিদ্ধান্তই হচ্ছে দেশে ফিরে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করার সিদ্ধান্ত আমি তার কাছে ক্লারিজ হোটেল থেকেই পৌঁছে দিয়েছি।

দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর আমরা যখন সিঁড়ি বেয়ে বিমান থেকে নামছিলাম, তখন দেখলাম সস্ত্রীক ভারতের প্রেসিডেন্ট ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, উপদেষ্টা ডি পি ধরসহ সবাই বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত। আবেগঘন কুশল বিনিময়ের পর ভারতীয় স্বশস্ত্র বাহিনী যৌথভাবে রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে। সেই দৃশ্য দেখতে দারুণ লাগছিল। বিমান থেকে নামতেই ডি পি ধর একপাশে টেনে নিয়ে জানতে চাইলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা? বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফ্লাইটে যত কথা হয়েছে সরাসরি তাকে জানালাম। এটাও বললাম, এডওয়ার্ড হিথের আকাক্সক্ষার কথা জানিয়ে যে বঙ্গবন্ধু চান ৩১ মার্চের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুজিব আলোচনায় এটিকেই গুরুত্ব দেবেন। এ বিষয়ে ভারতের প্রতিশ্রুতি নিজেকে তার দেশের মানুষের কাছে তার অবস্থান নিশ্চিত করবে। তাকে আরও জানালাম, বঙ্গবন্ধু ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করছেন এবং সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধুু আকাশে থাকতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় মুজিবকে দেশে ফেরার পথে কলকাতা সফরের প্রস্তাব দিয়ে বার্তা পাঠালে তিনি বলেছিলেন, এখন তিনি দেশে আগে ফিরতে চান। পরে কলকাতা সফর করবেন। রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশ্যে ভিভি গিরির গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর গাড়িতে জেনারেল মানেকশ এবং ডিপি ধরের গাড়িতে আমি চড়ে বসলাম। ইন্দিরা গান্ধীকে সেখানে গিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা যখন বললাম তিনি শুধু শুনলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা শুনে অভিনন্দন জানালেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে কলকাতা থেকে আনা সুস্বাদু মিষ্টি, নতুন গুড়ের সন্দেশ, মসলাদার শিঙ্গাড়া ও সেরা দার্জিলিং চায়ের মাধ্যমে যখন অতিথি আপ্যায়ন চলছে, তখন মিসেস গান্ধী ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সেরে নিতে। সেখানে ‘র’-এর প্রধান রামনাথ কাউ, পররাষ্ট্র সচিব ডিএন কাউল, রাজনৈতিক উপদেষ্টা পি এম হাকসার, ডিপি ধর এবং সেনাপ্রধান জেনারেল শ্যাম মানিকশ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ভবনে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে ৩১ মার্চের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহার করাতে চাইলে তিনি রাজি হবেন। এর আগে ভারতের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে এত গুরুত্বের সঙ্গে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নজির নেই।

ইন্দিরা-মুজিব বৈঠকে মুজিবের ইচ্ছায় ৩১ মার্চের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়; যেদিন ছিল বাংলাদেশের প্রতি ভারতের নিঃশর্ত বন্ধুত্বের প্রমাণ। বঙ্গবন্ধু আনন্দিত ছিলেন ব্রিটেনের স্বীকৃতি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভারতের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের স্বীকৃতি বাংলাদেশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। বিরল সৌজন্যবোধের মহান নেতা শেখ মুজিব ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সুযোগ পাওয়া মাত্র আগাম খোঁড়াখুঁড়ির জন্য আমার দুই হাত ধরে ধন্যবাদ জানালেন। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে, দিল্লির কূটনৈতিক সাফল্যে অজেয় শক্তিতে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীন দেশের জনগণের মাঝে ফিরলেন বীরের অভ্যর্থনা নিয়ে। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, তার জীবনে এর আগে কখনো এমন ফুটন্ত গণগণে গণজমায়েত দেখেননি। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জমায়েত হয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে ফিরে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে স্লোগানে যেভাবে এক মহান নেতাকে অভ্যর্থনা জানাল, সেই দৃশ্য আমৃত্যু আমার মনে থাকবে।

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর
এএফসি কম্পিটিশনে বসুন্ধরা কিংস
এএফসি কম্পিটিশনে বসুন্ধরা কিংস
বিনিয়োগ বন্ধ্যত্বে আকারে-নিরাকারে বেকার বৃদ্ধি : বাড়ছে নেশা-নৈরাজ্য
বিনিয়োগ বন্ধ্যত্বে আকারে-নিরাকারে বেকার বৃদ্ধি : বাড়ছে নেশা-নৈরাজ্য
শিক্ষা ও গবেষণায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর
শিক্ষা ও গবেষণায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর
তারেক রহমানের আসন্ন প্রত্যাবর্তন ও আগামীর রাজনীতি
তারেক রহমানের আসন্ন প্রত্যাবর্তন ও আগামীর রাজনীতি
অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কিছু পরামর্শ
অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কিছু পরামর্শ
বিশ্ব ডিম দিবস: পুষ্টি, নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক গুরুত্ব
বিশ্ব ডিম দিবস: পুষ্টি, নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক গুরুত্ব
বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতা
বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতা
রক্তক্ষরণে ব্যবসায়ীরা, বিনিয়োগে ধ্বংসযাত্রা, চাকরিক্ষুধায় তারুণ্য
রক্তক্ষরণে ব্যবসায়ীরা, বিনিয়োগে ধ্বংসযাত্রা, চাকরিক্ষুধায় তারুণ্য
বিরাজনৈতিকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে
বিরাজনৈতিকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে
পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট কি বাড়তেই থাকবে
পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট কি বাড়তেই থাকবে
উন্নতির অন্তর্গত কান্না : ব্যবস্থার বদল চাই
উন্নতির অন্তর্গত কান্না : ব্যবস্থার বদল চাই
শিক্ষক: দারিদ্র্যের নয়, মর্যাদার প্রতীক
শিক্ষক: দারিদ্র্যের নয়, মর্যাদার প্রতীক
সর্বশেষ খবর
রোম সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা
রোম সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা

২ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

চট্টগ্রামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন মেয়র
চট্টগ্রামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন মেয়র

৩ ঘণ্টা আগে | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে ইয়াবা মামলায় সাজা: পাঁচ বছর কারাদণ্ড
চট্টগ্রামে ইয়াবা মামলায় সাজা: পাঁচ বছর কারাদণ্ড

৫ ঘণ্টা আগে | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত

৫ ঘণ্টা আগে | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর লুটপাটের প্রতিবাদে সিপিবির বিক্ষোভ
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর লুটপাটের প্রতিবাদে সিপিবির বিক্ষোভ

৫ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

সততার সাহস : ভুল স্বীকারের মর্যাদা
সততার সাহস : ভুল স্বীকারের মর্যাদা

৫ ঘণ্টা আগে | ইসলামী জীবন

একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৫ অক্টোবর)
একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৫ অক্টোবর)

৫ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসার ছাত্র অপহরণ, পাঁচ দিনেও মেলেনি খোঁজ
লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসার ছাত্র অপহরণ, পাঁচ দিনেও মেলেনি খোঁজ

৬ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

কুয়াকাটায় শৈবাল চাষ নিয়ে কর্মশালা
কুয়াকাটায় শৈবাল চাষ নিয়ে কর্মশালা

৬ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

‘জামায়াতের পিআর নির্বাচনের দিবাস্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না’
‘জামায়াতের পিআর নির্বাচনের দিবাস্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না’

৬ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

২০০ রানে হেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
২০০ রানে হেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

৬ ঘণ্টা আগে | মাঠে ময়দানে

মালয়েশিয়ায় ভূমিধসে প্রাণ গেল বাংলাদেশি শ্রমিকের
মালয়েশিয়ায় ভূমিধসে প্রাণ গেল বাংলাদেশি শ্রমিকের

৭ ঘণ্টা আগে | পরবাস

মহাসড়কের পাশে পড়ে ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
মহাসড়কের পাশে পড়ে ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

৭ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

টাইমের প্রচ্ছদে নিজের চুল ‘গায়েব’ দেখে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প
টাইমের প্রচ্ছদে নিজের চুল ‘গায়েব’ দেখে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

৭ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

গোবিন্দগঞ্জে শোবার ঘর থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
গোবিন্দগঞ্জে শোবার ঘর থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

৮ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড: নিহত ১৬ জনের মরদেহ ঢামেক মর্গে
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড: নিহত ১৬ জনের মরদেহ ঢামেক মর্গে

৮ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

লাশের ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয় : ফায়ার সার্ভিস
লাশের ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয় : ফায়ার সার্ভিস

৮ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৯৪
হোয়াইটওয়াশ এড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৯৪

৯ ঘণ্টা আগে | মাঠে ময়দানে

থাইল্যান্ডে মাদকসহ চার ইসরায়েলি সেনা গ্রেফতার
থাইল্যান্ডে মাদকসহ চার ইসরায়েলি সেনা গ্রেফতার

৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক
অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

৯ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

ব্যর্থতার দায়ে বরখাস্ত সুইডেন কোচ
ব্যর্থতার দায়ে বরখাস্ত সুইডেন কোচ

৯ ঘণ্টা আগে | মাঠে ময়দানে

সোনারগাঁয়ে ডোবা থেকে বস্তাবন্দি নারীর মরদেহ উদ্ধার
সোনারগাঁয়ে ডোবা থেকে বস্তাবন্দি নারীর মরদেহ উদ্ধার

৯ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

অক্টোবরের ১৩ দিনে এলো ১২৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স
অক্টোবরের ১৩ দিনে এলো ১২৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স

৯ ঘণ্টা আগে | অর্থনীতি

জবিতে শিক্ষার্থীদের থিসিস গবেষণায় বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা
জবিতে শিক্ষার্থীদের থিসিস গবেষণায় বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা

৯ ঘণ্টা আগে | ক্যাম্পাস

টাঙ্গাইলে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন
টাঙ্গাইলে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

৯ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে গেল যুক্তরাষ্ট্র, দেখে নিন বাংলাদেশের অবস্থান
শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে গেল যুক্তরাষ্ট্র, দেখে নিন বাংলাদেশের অবস্থান

৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

মিসরে গাজা শান্তি সম্মেলন: দুই প্রেসিডেন্টের গোপন আলাপ ফাঁস
মিসরে গাজা শান্তি সম্মেলন: দুই প্রেসিডেন্টের গোপন আলাপ ফাঁস

৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

১০ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের জারিফ
কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের জারিফ

১০ ঘণ্টা আগে | মাঠে ময়দানে

ঢাবি কলা অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৫৬ শিক্ষার্থী ও ১০ শিক্ষক
ঢাবি কলা অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৫৬ শিক্ষার্থী ও ১০ শিক্ষক

১০ ঘণ্টা আগে | ক্যাম্পাস

সর্বাধিক পঠিত
গাজায় প্রকাশ্যে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
গাজায় প্রকাশ্যে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

১৩ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

‘আমরা কারাগারে নয়, কসাইখানায় ছিলাম’
‘আমরা কারাগারে নয়, কসাইখানায় ছিলাম’

২২ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

সারজিসের বক্তব্যের সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে মুখ খুললেন রুমিন ফারহানা
সারজিসের বক্তব্যের সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে মুখ খুললেন রুমিন ফারহানা

১৭ ঘণ্টা আগে | টক শো

মিরপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯ মরদেহ উদ্ধার
মিরপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯ মরদেহ উদ্ধার

১৪ ঘণ্টা আগে | নগর জীবন

মিসরে গাজা শান্তি সম্মেলন: দুই প্রেসিডেন্টের গোপন আলাপ ফাঁস
মিসরে গাজা শান্তি সম্মেলন: দুই প্রেসিডেন্টের গোপন আলাপ ফাঁস

৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনসিপি প্রতীক না নিলে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি
১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনসিপি প্রতীক না নিলে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি

১৬ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে গেল যুক্তরাষ্ট্র, দেখে নিন বাংলাদেশের অবস্থান
শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে গেল যুক্তরাষ্ট্র, দেখে নিন বাংলাদেশের অবস্থান

৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

আরেক দফা বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরি কত?
আরেক দফা বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরি কত?

১০ ঘণ্টা আগে | অর্থনীতি

গাজায় যুদ্ধবিরতি পদক্ষেপের প্রশংসা করে যা বললেন বাইডেন
গাজায় যুদ্ধবিরতি পদক্ষেপের প্রশংসা করে যা বললেন বাইডেন

২১ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্যকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর
মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্যকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর

২২ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

মারিয়াকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ায় নরওয়ে দূতাবাস বন্ধ করল ভেনেজুয়েলা
মারিয়াকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ায় নরওয়ে দূতাবাস বন্ধ করল ভেনেজুয়েলা

১৬ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

ধূমপান ছাড়তে বলায় এরদোয়ানকে যে জবাব দিলেন মেলোনি
ধূমপান ছাড়তে বলায় এরদোয়ানকে যে জবাব দিলেন মেলোনি

১৫ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনই সমাধান : জর্ডানের বাদশাহ
শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনই সমাধান : জর্ডানের বাদশাহ

২০ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬

১১ ঘণ্টা আগে | নগর জীবন

বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় এ সরকারের সময়ই হবে : আইন উপদেষ্টা
বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় এ সরকারের সময়ই হবে : আইন উপদেষ্টা

২০ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

চলছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি, আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’
চলছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি, আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’

২৩ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

বগুড়ায় মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা গ্রেফতার
বগুড়ায় মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা গ্রেফতার

১২ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

গোল্ডেন ভিসাধারীদের জন্য নতুন সিদ্ধান্ত নিল আমিরাত
গোল্ডেন ভিসাধারীদের জন্য নতুন সিদ্ধান্ত নিল আমিরাত

১২ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

রাশিয়া ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়ে যাবে : ল্যাভরভ
রাশিয়া ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়ে যাবে : ল্যাভরভ

২২ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

আফগান সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি পাকিস্তানের
আফগান সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি পাকিস্তানের

২২ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এমন প্রচারণা প্রতারণা : রিজভী
ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এমন প্রচারণা প্রতারণা : রিজভী

১৬ ঘণ্টা আগে | রাজনীতি

রাকিবের গোলে শেষরক্ষা, হংকংয়ের সাথে ড্র করল বাংলাদেশ
রাকিবের গোলে শেষরক্ষা, হংকংয়ের সাথে ড্র করল বাংলাদেশ

১১ ঘণ্টা আগে | মাঠে ময়দানে

সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

১৭ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

২০০ রানে হেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
২০০ রানে হেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

৬ ঘণ্টা আগে | মাঠে ময়দানে

স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের কপালেও ঋণখেলাপির তিলক
স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের কপালেও ঋণখেলাপির তিলক

২২ ঘণ্টা আগে | অর্থনীতি

বিশ্বব্যাপী আকাশ প্রতিরক্ষা চীনের, ট্রাম্প কেবল স্বপ্নই দেখছেন!
বিশ্বব্যাপী আকাশ প্রতিরক্ষা চীনের, ট্রাম্প কেবল স্বপ্নই দেখছেন!

১৫ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

দুই গোলে এগিয়ে থেকেও জাপানের কাছে হারল ব্রাজিল
দুই গোলে এগিয়ে থেকেও জাপানের কাছে হারল ব্রাজিল

১২ ঘণ্টা আগে | মাঠে ময়দানে

একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৪ অক্টোবর)
একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৪ অক্টোবর)

২২ ঘণ্টা আগে | জাতীয়

কেন ভারত এখন আফগানকে সমাদরে কাছে টানছে?
কেন ভারত এখন আফগানকে সমাদরে কাছে টানছে?

১৪ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

থাইল্যান্ডে মাদকসহ চার ইসরায়েলি সেনা গ্রেফতার
থাইল্যান্ডে মাদকসহ চার ইসরায়েলি সেনা গ্রেফতার

৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

প্রিন্ট সর্বাধিক
বিএনপির প্রার্থী হতে চান টকশো ব্যক্তিত্বসহ ৮ জন
বিএনপির প্রার্থী হতে চান টকশো ব্যক্তিত্বসহ ৮ জন

নগর জীবন

পুড়ে অঙ্গার ১৬ প্রাণ
পুড়ে অঙ্গার ১৬ প্রাণ

প্রথম পৃষ্ঠা

বিপ্লবী চে গুয়েভারা ও সিরাজ সিকদার
বিপ্লবী চে গুয়েভারা ও সিরাজ সিকদার

সম্পাদকীয়

আজকের ভাগ্যচক্র
আজকের ভাগ্যচক্র

আজকের রাশি

মানিকগঞ্জ হয়েছিল মালেকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ হয়েছিল মালেকগঞ্জ

প্রথম পৃষ্ঠা

আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের
আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের

পেছনের পৃষ্ঠা

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছাত্রদল-শিবির
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছাত্রদল-শিবির

প্রথম পৃষ্ঠা

প্রশাসনে বিশেষ দলের প্রাধান্য, উদ্বিগ্ন বিএনপি
প্রশাসনে বিশেষ দলের প্রাধান্য, উদ্বিগ্ন বিএনপি

পেছনের পৃষ্ঠা

২০ কোটি টাকার দেশি বিদেশি জাল নোট উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
২০ কোটি টাকার দেশি বিদেশি জাল নোট উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

নগর জীবন

প্রয়োজনে সেনা আইন সংশোধন করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি
প্রয়োজনে সেনা আইন সংশোধন করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি

পেছনের পৃষ্ঠা

শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে যাবে এনসিপি
শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে যাবে এনসিপি

নগর জীবন

ঝিলমিল আবাসিকে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কাজ চলছে
ঝিলমিল আবাসিকে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কাজ চলছে

নগর জীবন

ডিজিটাল বাহিনী তৈরি করেছে জামায়াত
ডিজিটাল বাহিনী তৈরি করেছে জামায়াত

নগর জীবন

নকল পণ্য উৎপাদনে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নকল পণ্য উৎপাদনে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

পেছনের পৃষ্ঠা

দেশে ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশ
দেশে ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশ

পেছনের পৃষ্ঠা

অ্যানথ্রাক্স রোধে ছাড়পত্র ছাড়া পশু জবাই বন্ধে প্রশাসনের আদেশ জারি
অ্যানথ্রাক্স রোধে ছাড়পত্র ছাড়া পশু জবাই বন্ধে প্রশাসনের আদেশ জারি

নগর জীবন

বাগেরহাটে যুবদল নেতাসহ তিন খুন
বাগেরহাটে যুবদল নেতাসহ তিন খুন

পেছনের পৃষ্ঠা

ইসি বলল শাপলার সুযোগ নেই, এনসিপির প্রতিবাদ
ইসি বলল শাপলার সুযোগ নেই, এনসিপির প্রতিবাদ

পেছনের পৃষ্ঠা

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে আহ্বান এনসিপির
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে আহ্বান এনসিপির

নগর জীবন

বেরোবিতে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০, বহিষ্কার ৮
বেরোবিতে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০, বহিষ্কার ৮

নগর জীবন

বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় এই সরকারের সময়েই
বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় এই সরকারের সময়েই

নগর জীবন

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফ্যাসিবাদ ফিরবে
দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফ্যাসিবাদ ফিরবে

নগর জীবন

নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাঁচ দিনের রিমান্ডে
নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাঁচ দিনের রিমান্ডে

পেছনের পৃষ্ঠা

কোথাও আইন লঙ্ঘন হলে দ্রুত ব্যবস্থা
কোথাও আইন লঙ্ঘন হলে দ্রুত ব্যবস্থা

নগর জীবন

১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ল হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়
১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ল হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়

নগর জীবন

সোনার ভরি ২ লাখ ১৬ হাজার ছাড়াল
সোনার ভরি ২ লাখ ১৬ হাজার ছাড়াল

খবর

ডেঙ্গুতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু

পেছনের পৃষ্ঠা

ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ থাকুন
ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ থাকুন

নগর জীবন

শিক্ষকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা অধ্যক্ষ পরিষদের
শিক্ষকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা অধ্যক্ষ পরিষদের

খবর

মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি আহত
মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি আহত

খবর