৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:২৪

'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' প্রস্তাবনা

এস. এম জাহাঙ্গীর আলাম সরকার পিপিএম

'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' প্রস্তাবনা

'যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান,ততকাল রবে কীর্তি তোমার,/শেখ মুজিবুর রহমান!/দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা/ রক্তগঙ্গা বহমান/ তবু নাই ভয়, হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর 'ধান শালি চিঁড়ে' ছড়াগ্রন্থে 'বঙ্গবন্ধু' ছড়াটি লেখেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে। কবি মনের গভীর অন্তর্দৃষ্টি অশ্রুগঙ্গা, রক্তগঙ্গার মাঝেও সত্যিই জয় দেখতে পেয়েছিলেন, জয় মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের জন্ম দিয়েই জয়ের মালা পরলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

নদীমাতৃক বহমানতায় বাংলাদেশ জন্মলগ্নে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা ছিল। কবিদৃষ্টির সীমানা ভাবনায় নদীর এ প্রবাহমান চিত্র ধরা দিয়েছিল অফুরন্ত, অশেষ ও অসীমরূপে। তাই তিনি বাংলাদেশ জন্মের এ মহানায়ককে এমন আশীর্বাদের শব্দশৈলী ব্যবহার করে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন। মনে মনে, প্রাণে প্রাণে, চেতনায় বাঁচিয়ে  রাখার এই অমোঘ বাণী বাঙালির প্রাণসত্তায় যতদিন অনুরণিত হবে, এ ভাষা-ভাষীর মানুষ যতদিন শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করবে, ততোদিন তাঁর কীর্তিতে  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকবেন লাল-সবুজের এ পূণ্যভূমিতে। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে রাজনীতি করে জেল-জুলুম, অত্যাচার- নির্যাতন সয়ে বাংলাদেশের জন্মদাতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশি-বিদেশি অনেক সুনাম, সম্মান, খ্যাতি অর্জন করে নানাবিধ পুরস্কার ও উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। দেশীয় বঙ্গবন্ধু কিংবা আন্তর্জাতিক জুলিও কুরি উপাধি তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। স্থপতি বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হিসাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জাতির পিতার চেয়ে অনেক বেশি বরেণ্য এ কারণে যে, অন্যান্য অনেক দেশের জাতির পিতা সেদেশের সৌভাগ্য আনয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করলেও তাঁদের সৌভাগ্য হয়নি বঙ্গবন্ধুর মতো মুক্তিযুদ্ধ করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া। বিশেষত্বের বিচারে ঠিক এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তুলনামূলক চিত্রে, বিশ্বের অন্যান্য যে কোন দেশের জাতির পিতার চেয়ে অনন্য ও অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সৌভাগ্য আমরা এমন একজন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার ধারক বাহক, অসীম প্রাণশক্তিতে ভরা আত্মবিশ্বাসী বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ককে পেয়েছিলাম, গরীব-দুখী, মেহনতী মানুষের মুক্তির কাণ্ডারী হিসেবে। যাঁর তুলনা তিনি নিজেই, অবিকল্প বিশ্বনেতা। বিশ্বে প্রচলিত কোন সর্বোচ্চ পদবী ও পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করলেও তাঁকে প্রকাশে সে সম্মান উপযুক্ত বিচারে যথার্থতা কিংবা পরিপূর্ণতা পাবে না, একথা কোন ভাবনা চিন্তা ছাড়াই বলা যায়।

ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা প্রদর্শন করেছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। মা-মাটি-মানুষ কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। দম্ভ করে ঘোষণা করেছিল বাংলার মাটি চায়, মানুষ চায় না তারা। নিকৃষ্টতম বিকৃত লোলুপতা দেখিয়ে তারা পৃথিবীর যেকোন নিন্দিত ইতিহাসকেও হার মানিয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের দায়িত্ব নিয়ে সেদিন স্বাধীনতার স্বপ্নে উজ্জীবিত করে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করে বাংলার মানুষকে প্রস্তুত না করলে বাংলাদেশের জন্ম সম্ভব ছিল না। একটি বিশেষ শ্রেণীগোষ্ঠীর কিছু মানুষ ছাড়া বাংলার ছাত্রজনতা থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ডাকে সাড়া দিয়ে একাত্ম হয়ে মাত্র নয় মাসে যার যা ছিল তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এ মাতৃভূমিকে  স্বাধীন করেছিল। সবদিক বিবেচনায় এত উঁচুমানের নেতৃত্বগুণ বঙ্গবন্ধু ব্যতীত বিশ্বের আর কোন নেতার কর্ম বিশ্লেষণে পাওয়া যায় না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের দায়িত্ব নিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্রপরিচালনায় যেসকল দিকনির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো কে দাঁড় করিয়েছিলেন তার নজির বিশ্বে খুবই বিরল। এত অল্প সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করে সে সময়ই তিনি বিশ্ব নেতৃত্বকে নতুন করে তাঁর উচ্চতা সম্পর্কে ভাবতে শিখিয়েছিলেন তিনি বঙ্গবন্ধু। শুধু তাই নয়, যুদ্ধোত্তর মিত্রশক্তিকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিয়ে এত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বদেশে হাসিমাখা প্রত্যাবর্তনের যে ঘটনা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন তা কোন যুদ্ধেরই সমাপ্তি উত্তর এত স্বল্পতম সময়ে আর কোন নেতৃত্ব তার মিত্রশক্তির এমন সহজ সুন্দর প্রত্যাবর্তন দেখাতে পারেনি। ঈর্ষাকাতর বিশ্বের ষড়যন্ত্র আর পথভ্রষ্ট কিছু কুচক্রী মহলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও কিছু নিকট আত্মীয় স্বজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দর্শন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সেই চেষ্টার সক্রিয় প্রভাব পরবর্তীতে বেশকিছু সরকারকে নির্লজ্জভাবে বহন ও বিকশিত করতে দেখা গেছে।

সৌভাগ্যবান বাংলার মানুষ, তাই দীর্ঘ দুঃখ কষ্টের মাঝে নতুন করে মুক্তির দিশারী হয়ে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা বাবার স্বপ্ন পূরণে বাংলার মাটিতে পা রেখে নানা চড়াই-উতরাই এর মধ্য দিয়ে জীবন বাজি রেখে বাংলার গরীব-দুখী-মেহনতী মানুষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শুরু থেকেই শুরু করতে হয়েছে তাকে। নানারকম অসঙ্গতির অতলে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশকে টেনে তুলে দূরদর্শী ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটিয়ে অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। এ যাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের পূর্বেই বিশ্বের উন্নত দেশের তালিকায় স্বগর্বে মাথা উঁচু করে পরবর্তী পথ পরিক্রমায় চলতে থাকবে বাংলাদেশ। তাঁর চলার পথও মসৃণ ছিল না কোনদিন, জীবনকে বাজি রেখে বারবার মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে তিনি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন।

৭৫ পরবর্তী সময় থেকে এরশাদ সরকারের স্বৈরশাসন পর্যন্ত মূলতঃ দেশটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল না। ৯০'র স্বৈরশাসন অবমুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করে স্বৈরশাসনের অবসান করেন। বাংলার মানুষের ভাগ্যাকাশে নতুন করে গণতন্ত্রের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের অরাজনৈতিক চর্চার রেশ এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দৌরাত্ম্যের প্রকাশই ঘটে নির্বাচনে। তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসাবে মাঠের রাজনীতি করে জনমানুষের আস্থা ও ভালবাসা অর্জন করে ১৯৯৬ সালে তিনি এবং তাঁর দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হোন।

যুগ যুগ ধরে চলে আসা পাহাড়ের বিশৃংখলা পাহাড়ি ও বাঙালির জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। এত দীর্ঘ সময়ের অশান্ত পরিস্থিতিকে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সত্যিই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারিশম্যাটিক নেতৃত্বের সফলতা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। সেই সাথে বিস্মিত হয়েছে অনেক বিশ্বনেতাও। কুচক্রীদের তৈরি কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাংলার মাটিতে বিচার করার সক্ষমতা বাংলার মানুষসহ বিশ্ববাসীর দ্বিধাকে অমূলক প্রমাণ করেছেন তিনি। নেতৃত্বের এমন গুণাবলী সাহস ও শক্তিমত্তার আইন সিদ্ধ প্রয়োগ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। সারা বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মানবতাবিরোধী অপরাধিদের আইনগতভাবে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনায় লালিত বাংলার মানুষকে নিরাপদ করে তিনি যে অসাধ্য সাধন করেছেন, তা বিশ্বের অনেক দেশের পক্ষেই এমন নজির করা সম্ভব হয়নি। এমন কাজটি বাস্তবে তিনি করতে পারবেন বলে, বাস্তবে তা করে দেখানোর পূর্ব পর্যন্ত, অনেকেই তা সম্ভব না বলেই দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস করতেন। সেই ধারণাটিও দেশে কিংবা বিদেশে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে অমূলক এবং ভ্রান্ত ধারণা ছিল তা তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
জন্মলগ্ন থেকে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে অমীমাংসিত ছিটমহলের শান্তিপূর্ণ সমাধান করে কূটনৈতিক সফলতার চূড়ান্ত স্বাক্ষর রেখেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আরেকটি বড় সফলতার নজির দেখিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে অমীমাংসিত বিবাদমান সমুদ্রসীমার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে বিস্ময়কর চমক লাগিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল অনেক দেশই যা এখনো করতে সক্ষম হননি। অমূলক অভিযোগের প্রতিবাদ করে বিশ্বব্যাংক এবং দাতা দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজ অর্থায়নে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কনস্ট্রাকশন কাজের সক্ষমতা প্রমাণ করে  স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করলেন। এত বড় চ্যালেঞ্জের বিপরীতে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করা এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তা বাস্তবে উপস্থাপন করে বিশ্ববাসীকে ভুল প্রমাণিত করার সৎ ও সাহসী নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে সত্যিই বিরল।

অর্থনৈতিক প্রজ্ঞার নতুন পরিচয় দিলেন করোনাকালীন সময়ে যখন বিশ্ব তার স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার মেধা, নেতৃত্বগুণ ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করে প্রতিবেশী ভারত পাকিস্তানকেই শুধু পেছনে ফেলেননি বরং বিশ্বের উন্নত যে কয়টি দেশ তার চলমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে তাদের সাথে তুলনা করলেও আমাদের প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অতুলনীয়। মহামারীকালীন টিকে থাকার যুদ্ধেও আমরা উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। এহেন প্রতিকূলতার মধ্যেও অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সাং সুচি মানবতা লঙ্ঘন করে অমানবিক হয়ে উঠলে তার দেশের প্রায় এগারো লক্ষ মানুষ অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলে, সারা বিশ্ব মানবতা যখন হাত গুটিয়ে নিয়ে নিঃস্বতার পরিচয় দিয়েছে ঠিক সে মুহুর্তে বিশ্বমানবতার মূর্ত প্রতীক হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, দেশের নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করেও এত বড় সংখ্যক বাস্তুহারা মানুষকে আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে মানবতাকেই বাঁচিয়ে রেখেছেন নিঃসন্দেহে। নয়তো সেদিন বিপন্ন মানবতা আরো বেশি নিগৃহীত হয়ে, নিরন্নের হাহাকারে মিশে, নির্বাক চিত্তে তাকিয়ে থেকে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুকে অবলোকন করে নিজের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হত। সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবতার মা হয়ে ছিন্নমূল মানুষদেরকে নিজ আঁচলের ছায়াতলে জায়গা দিয়ে, নিরন্নের মুখে অন্ন দিয়ে, বিপন্ন মানবতাকেই রক্ষা করেছিলেন। আজও পর্যন্ত চূড়ান্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে, দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেনতেনভাবে নয়, যেন নিরাপদ আশ্রয়ে তাদের দেশে তারা ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে মায়ানমার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যয় অর্জনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিশ্ব পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা প্রদান করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যেসকল বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং বিশ্বজনমতকে এ লক্ষ্য অর্জনে যতটুকু একত্রিত করতে পেরেছেন, তা ইতোমধ্যেই বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। মাতৃভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য করে তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনবদ্য ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেছেন। বাঙালির মুক্তির ম্যাগনাকার্টা হিসেবে পরিচিত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ, বাঙালির মুক্তি ও অন্যান্য গুরুত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

আভ্যন্তরীণ দেশীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ সফল ও অতুলনীয় ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সমস্ত সূচক আজ অগ্রগামী, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণ, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, মেট্রোরেল নির্মাণ, আধুনিক নৌ জাহাজ নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, দেশে বিদ্যমান নদ-নদীসমূহের পুনঃসংযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা ও সেই সাথে ৬৮ হাজার গ্রাম বাংলায় শহুরে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনযাত্রায় নতুন করে আধুনিক মাত্রা সংযোজন প্রক্রিয়া, গৃহহীন কোন মানুষ থাকবে না মর্মে গৃহদান কর্মসূচির বাস্তবায়ন, কোটি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক নারী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন, বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করণ, গরীব দুঃখী দুস্থ ও বয়স্কদের ভাতা প্রদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপযুক্ত ভাতা প্রদান ইত্যাদি মানবিক  কর্মসূচি গ্রহণ এবং ইতোমধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশকে উন্নয়নের যে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, তা সময়, সীমিত সম্পদ ও সামর্থের বিবেচনায় সত্যিই বিস্ময়কর এবং বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় তা অনেক বেশি সন্তুষ্টিদায়ক ও সম্মানজনক।

বাংলার ভাগ্যাকাশের সূর্য এবং শুকতারার আলোচনায় যে দুজন অধিমানবের কীর্তি অবতারণার চেষ্টা করেছি, তার একজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাঁর হাতে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। যিনি বাংলাদেশের স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে বেঁচে আছেন। আরেকজন তাঁরই সুযোগ্য তনয়া বাংলার ভাগ্যাকাশের উজ্জ্বল শুকতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আধুনিক বাংলার রূপকার হিসেবে বাংলার মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন ইতোমধ্যেই। দুইজনই তাদের কীর্তিতে অমর।

আমার বিবেচনায় পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যেসকল পুরস্কার সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করেছে তা প্রদান করেও এ দুজন মানুষের কীর্তিতে অর্জিত সম্মান ও মর্যাদার আসনকে কোন বিচারেই স্পর্শ করা সম্ভব নয়। তাই আমার প্রস্তাবনায় এ দুজনকে ঘিরে বিশ্বে প্রচলিত কোনো পুরস্কার গ্রহণের বিষয়টি মূখ্য নয় মোটেও বরং চির অমরত্বের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদাকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কলারদেরকে নিয়ে একটি টিম গঠনের মধ্য দিয়ে অন্তত বছরব্যাপী গবেষণা করে ক্লাসিক বঙ্গবন্ধুকে এবং বঙ্গবন্ধু দর্শনের নন্দনতত্ত্বকে উপস্থাপন করে বিচার বিশ্লেষণ অন্তে শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণ করে 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' প্রবর্তন করা আবশ্যক। যা আর্থিক মূল্য, সম্মান ও মর্যাদার বিচারে বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কার এর চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান হবে এবং অধিক গুরুত্ব বহন করবে। আমি বোধ করি বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে বিশ্বসেরা পুরস্কার দেবার যোগ্যতা আমাদের রয়েছে। জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকীতে এমন একটি গবেষণালব্ধ পুরস্কারের প্রবর্তন করা গেলে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে সেটি হতে পারত সেরা নিবেদন। তহবিল সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বাঙালির উদার মন-মানসিকতাই যথেষ্ট বলে মনে করি। অবশ্যই তা বিতর্কিত কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চিন্তা চেতনা সম্পন্ন কোন অনুদান প্রদানকারীর প্রণোদনা গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যায় এবং অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জনকারীর কোন অনুদান গ্রহণযোগ্য নয়। দেশ এবং দেশের বাইরে বঙ্গবন্ধুকে যারা হৃদয়ে ধারণ করে তাদের অনুদান গ্রহণযোগ্য হতে পারে। নৈতিক আদর্শে পরিচালিত কোন দেশি বিদেশি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছায় প্রদত্ত অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে। সেন্ট মার্টিনকে আধুনিক পর্যটন সুবিধা প্রদানের মধ্যে দিয়ে বৈধভাবে অর্জিত অর্থ এ তহবিলের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের বৈধ আয় থেকেও একটি অংশ এ তহবিলের অন্তর্ভুক্তি করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থার স্কলারদের সমন্বয়ে এবং দুই একজন বাংলাদেশি উপযুক্ত প্রতিনিধিকে উক্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি করে বিশ্বমানের একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা তিন কিংবা পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নীতিমালা অনুসরণপূর্বক সারা বিশ্বের সমস্ত কর্নার থেকে সৃষ্টিশীল সেরা মানুষকে বিবেচনায় নিয়ে, যথাযোগ্য যাচাই-বাছাই ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে, যেকোনো ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানজনক ও মূল্যবান 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' এ চুড়ান্তভাবে ভূষিত করবেন বিশ্বসেরা পাঁচ থেকে দশ জনকে। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সূর্য, নক্ষত্রমণ্ডল আলো বিচ্ছুরিত করায় প্রকৃতির নিয়মে একদিন তাদের আলো নিভে যাবে কিন্তু দিন যতই যেতে থাকবে, বঙ্গবন্ধু পুরস্কারে ভূষিত আলোকিত মানুষের সংখ্যা ও তাদের কর্মের প্রভাব পৃথিবীতে ততটাই বেড়ে যাবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আলোকিত মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে তাদের কর্মবিচ্ছুরিত আলোকজ্যোতি 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' র  মর্যাদা, সম্মান ও শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকেও ততই বেশি আলোকিত করতে থাকবেন এবং বাংলার মানুষের অন্তর থেকে শুরু করে সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্ব মানবের অন্তরকে আলোকিত করবে এ পুরস্কারটি। এ আলোর বিস্তার অনন্ত কাল পর্যন্ত বিস্তারিত হতে থাকবে। বিশ্বের সর্বোচ্চ মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব মানুষের অন্তরে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন চিরকাল। সেই সাথে নিজস্ব কীর্তি ও 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' প্রবর্তন এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বাংলার ভাগ্যাকাশের শুকতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন বাংলার মানুষসহ পৃথিবীর সকল মানুষের অন্তরে অন্তরে। প্রস্তাবনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের মধ্যে এমন একটি পুরস্কার প্রবর্তন করা গেলে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আধুনিক বাংলার রূপকার বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের মনে মনে, প্রাণে প্রাণে, সর্বোচ্চ সম্মান-শ্রদ্ধা ও মর্যাদা নিয়ে পৃথিবীর অস্তিত্ব যতদিন থাকবে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে বেঁচে থাকবেন অন্তত ততদিন- হয়তো তারও পরে।

লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর